সর্বজনীন পেনশন স্কিম: ৬ মাসে জমা প্রায় ২৯ কোটি টাকা
সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পে (ইউপিএস) বিভিন্ন খাতের মানুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আকর্ষণীয় প্রস্তাব দেওয়ার কর্মসূচি শুরু করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ (এনপিএ)।
এ লক্ষ্যে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মীসহ প্রবাসী, বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের কাছে সুবিধাগুলো তুলে ধরা, পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্তির সহজ প্রক্রিয়া ও সুবিধা প্রদানের বিষয়ে কাজ করছে এনপিএ।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে এই প্রকল্প জনগণের কম সাড়া পাওয়ার প্রসঙ্গে এনপিএ'র সদস্য (সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে) ও অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, জাপান ও কোরিয়ার মতো বিভিন্ন উন্নত দেশ ১৯৬০ সালে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে। এত বছর পর সেসব দেশে সর্বজনীন পেনশন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে।
'আমাদের এত সময় লাগবে না। সর্বজনীন পেনশনের বিষয়ে ওই দেশগুলোর অভিজ্ঞতা আমরা দেখেছি,' বলেন তিনি।
তিনি বলেন, 'শুরুর দিকে তাদেরও আমাদের মতো বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমি মনে করি, সেসব দেশের তুলনায় অনেক আগেই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আমরা সফল হব। প্রায় ৬ মাসে ১৯ হাজার ১৫৮ জন ইউপিএসে যুক্ত হয়েছেন এবং এ পর্যন্ত প্রায় ২৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ফান্ডে জমা হয়েছে।'
গোলাম মোস্তফা বলেন, এনপিএ জনগণের আমানত রক্ষায় অত্যন্ত সচেতন। এ তহবিল থেকে সরকার কোনো ঋণ নিতে পারবে না। 'আমরা ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করি। বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের আয় নিশ্চিত হয়। ফলে এই তহবিল নিয়ে মানুষের মধ্যে কোনো শঙ্কা-দ্বিধা থাকবে না।'
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট বহুল আলোচিত অভিন্ন পেনশন স্কিমের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এই উদ্যোগ ১৮ বছরের বেশি বয়সী দেশের সমস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য। এই স্কিমে অংশগ্রহণকারী নাগরিকরা ৬০ বছর বয়স হওয়ার পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা উপভোগ করতে শুরু করবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ এখনও এই আর্থিক সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতন নয়। এজন্য পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রবাসীদের অংশগ্রহণ আরও সহজ করতে চায়। পাশাপাশি দেশের মানুষের মধ্যে সর্বজনীন পেনশনের প্রচারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ইতোমধ্যে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশনে উৎসাহিত করতে তফসিলি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জাতীয় পেনশন স্কিম বাস্তবায়নে নতুন উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ নির্দেশনা দেয়। উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য সব ব্যাংকের এমডিদের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, সরকার সর্বস্তরের মানুষকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা চক্রে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। সরকারের এ উদ্দেশ্য পূরণে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংক ব্যতীত অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
তাই বেসরকারি ব্যাংকের এমডিদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পাশাপাশি সরকারি পেনশন স্কিমে ব্যাংক হিসাবের উৎসে কর ও আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর পেনশন স্কিমে বিনিয়োগের ওপর কর রেয়াত এবং পেনশন আয়ের ওপর কর অব্যাহতি প্রদানের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এই পর্যায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বাণিজ্যিক ব্যাংকে পরিচালিত সরকারি পেনশন স্কিমের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে উৎসে কর ও আবগারি শুল্ক মওকুফ করা প্রয়োজন। বর্তমানে ব্যক্তি, কোম্পানি ও অন্যান্য তহবিল নির্বিশেষে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্থিতি অনুসারে আবগারি শুল্ক কাটা হয়।
অর্থনীতিবিদ ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, জনগণের মধ্যে আস্থার অভাব এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের অভাবের কারণে পেনশন স্কিমের প্রতি মানুষের আগ্রহ কম।
তিনি বলেন, পেনশন প্রকল্পের টাকা কোথায় বিনিয়োগ হবে, কীভাবে লাভবান হবে বা লোকসান হবে- সে সম্পর্কে মানুষ এখনও সচেতন নয়।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের প্রকল্পের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ে।
'তবে তাদের সুষ্ঠু প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনও রয়েছে, যেটির অভাব এখানে রয়েছে। তাই আগামীতে এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে তা সময়ই বলে দেবে'- যোগ করেন তিনি।