ভারতীয় হিসেবে গর্বিত নই : অমর্ত্য সেন
ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন।
কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটি যে শুধুমাত্র সমস্ত মানুষের অধিকার বজায় রাখার বিরোধিতা করেছে তা নয়, এই পদক্ষেপে সংখ্যাগরিষ্ঠের কথাও ভাবা হয়নি। সেইসঙ্গে একজন ভারতীয় হিসেবে গর্বিত নন বলেও মন্তব্য করেছেন বিশ্বখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ।
রাজ্যটি ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করায় কাশ্মীরের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
সোমবার (১৯ আগস্ট) এনডিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন এসব কথা বলেন।
৮৫ বছর বয়সী এই অর্থনীতিবিদ বলেন,‘গোটা বিশ্বে গণতান্ত্রিক আদর্শ অর্জনের জন্য এত কিছু করেছে ভারত। তবে এখন আর আমি একজন ভারতীয় হিসেবে এই সত্য নিয়ে গর্বিত নই যে ভারতই গণতন্ত্রের পক্ষে প্রথম প্রাচ্যের দেশ ছিল। কেননা যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাতে আমরা সেই খ্যাতি হারিয়ে ফেলেছি।’কাশ্মীর সংকট সমাধানের উপায় প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেন,‘আমি মনে করি না যে গণতন্ত্র ছাড়া কোনওভাবে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’
৩৭০ ও ৩৫এ ধারা বাতিলের ফলে অন্যান্য রাজ্যের লোকেরা জম্মু ও কাশ্মীরে জমি কিনতে পারবে। এ বিষয়ে তিনি বলেন,‘রাজ্যের জনগণের (জম্মু ও কাশ্মীর) কথা ভেবেও কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এটি এমন একটি বিষয় যেখানে কাশ্মীরিদের বৈধ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে কারণ এটি তাঁদের জমি।’
এছাড়া জম্মু ও কাশ্মীরের মূলধারার রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করার বিষয়েও সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন অমর্ত্য সেন।তিনি বলেন,‘জনগণের নেতাদের কণ্ঠস্বর না শুনে আপনারা ন্যায়বিচার করতে পারেন বলে আমি মনে করি না এবং যদি আপনি হাজার হাজার নেতাকে সংযত রাখেন এবং তাদের অনেককে কারাগারে আটকে রাখেন... তাহলে আপনি গণতন্ত্রের সেই বৈশিষ্ট্যকে দমন করছেন যা গণতন্ত্রকে সফল করে তোলে।’
সরকার ‘প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা’ হিসাবে জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশাল নিরাপত্তার আওতায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেগুলিতে জনসাধারণের ক্ষতি হতে পারে এমন প্রতিক্রিয়া রোধ করতেই এই পদক্ষপ বলে বর্ণনা করেছে সরকার।
এই সিদ্ধান্তেরও তীব্র সমালোচনা করে অমর্ত্য সেন বলেন ‘এটি সর্বোত্তম ঔপনিবেশিক অজুহাত। ব্রিটিশরা এভাবেই ২০০ বছর ধরে দেশ চালিয়েছিল।’
তিনি আরও বলেছেন, আমরা যখন স্বাধীনতা পেলাম তখন আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম... আমরা আমাদের ঐতিহ্য মেনে কাজ করব।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ৩৭০ ধারা বাতিলের দিন তিনেক আগে থেকেই কাশ্মীরে ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয় ভারত। এ ছাড়া গোটা রাজ্যজুড়ে কারফিউ জারি করার ফলে এখনো স্তব্ধ হয়ে আছে সেখানকার জনজীবন। সর্বত্র ভারতীয় সেনাদের টহল। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে অনেকে নিহত হন।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস।