'আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে কাজ করতেই জন্ম আমার'
র্যাম্প মডেল সাবরিনা জামান রিবা। ফ্যাশন মডেলিংয়ের এক পরিচিত মুখ। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রচুর র্যাম্পে ক্যাটওয়াক করে আলো ছড়িয়েছেন। কাজ করেছেন টিভিসিতেও।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশে র্যাম্প মডেলিংয়ের ভবিষ্যৎ, ব্যক্তিগত পরিকল্পনা ইত্যাদি প্রসঙ্গে তিনি কথা বলেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে।
আপনার বেড়ে ওঠা?
সাবরিনা জামান রিবা: আমার জন্ম ঢাকাতেই। এখানেই বেড়ে ওঠা। নানা-নানীর আদরের খুব আমি। বাসার একমাত্র মেয়ে হওয়ায় আহ্লাদটা অনেক বেশি! ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি ২০১৪ সালে। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে।
র্যাম্প মডেলিংয়ে প্রথম শুরু কী ভাবনা থেকে এবং কবে ও কীভাবে?
রিবা: র্যাম্প মডেলিংয়ের ভূতটা মনে হয় মাথায় আসে একদম ছোটবেলায়। খুব মজার একটা গল্প বলি, আমি ছোটবেলায় সন্ধ্যা হলে খুব সাজুগুজু করে বাসার সবাইকে একসঙ্গে বসিয়ে হেঁটে হেঁটে দেখাতাম, তা-ও আবার হাই-হিল পরে। তখন তো র্যাম্প বা ক্যাটওয়াক জিনিসটা কী, বুঝতাম না। তখন থেকেই কীভাবে যেন মাথায় আসা!
মডেলিং শুরু করি ২০১০ সাল থেকে। তারপর ২ বছর ফটোশুট, র্যাম্প, টিভিসি- সব কাজই করেছি; তবে একদম রেগুলার শো শুরু করি ২০১২ সাল থেকে।
প্রথম দিকের স্ট্রাগল কেমন ছিল?
রিবা: প্রথম দিকের স্ট্রাগলগুলো কষ্টের ছিল। কারণ, আমি কারও কাছে কোনোদিন গ্রুমিং করিনি, বা কাউকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতামও না। আর সে সময়ে এখনকার মতো অত গ্রুমিং স্কুলও ছিল না। যা শিখেছি, একদম একা একা; নিজেকে গ্রুম করেছি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পোজ প্র্যাকটিস করতাম; এমনকি এখনো করি। কারণ, শেখার শেষ নেই।
আমার বাসাতে অনেক বড় স্পেস আছে। ফলে ওইখানে র্যাম্পের মতো হাঁটার প্র্যাকটিস করতাম। আমি বিশ্বাস করি, কেউ নিখুঁত হয়ে, শতভাগ শিখে আসে না। কাজের প্রতি পুরো আত্মনিবেদন থাকলে কাজ করতে করতেও শেখা যায়; কাজের উন্নতিটা নিজেই ধরা যায়।
কোনো বিশেষ বাধা বা ঘটনার স্মৃতি মনে পড়ে? কীভাবে সামলিয়েছেন?
রিবা: ১১ বছরের ক্যারিয়ারে সৌভাগ্যক্রমে এখনো ওই রকম কিছুর মুখোমুখি হইনি।
এ পর্যন্ত আনুমানিক কতগুলো শো করেছেন?
রিবা: গুনে বলতে পারব না! অসংখ্য!
উল্লেখযোগ্য শো কোনগুলো?
রিবা: বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক, আড়ং ৪০ বছর পূর্তি ফ্যাশন শো, খাদি ফেস্টিভ্যাল, জুরহেম এস/এস এফ/ডব্লিউ ফ্যাশন শো, লাস্ট্রাস রানওয়ে, কালারস ম্যাগাজিন প্রেজেন্টস বিজনেস উইমেন'স অ্যাওয়ার্ডস শো, লরেল প্যারিস লাঞ্চ অন সাজগোজ শো, বেস্ট ইন দ্য ওয়েডিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাওয়ার্ডস পাওয়ার্ড বাই আইস টুডে শো, ফ্রেঞ্চ অ্যানুয়েল গালা ইভেনিং শো, ঢাকা সামার রানওয়ে, কটন শো, ডেনিম শো, এইচএসবিসি শো, আয়ুশ নকশা বিয়ে উতসব, ট্রেসচিক ফ্যাশন শো, বিডি হিপহপ ফেস্ট, পদ্মভাত ফ্যাশন শো, ঢাকা ফ্যাশন উইক প্রভৃতি।
র্যাম্পে সবচেয়ে আনন্দের স্মৃতি?
রিবা: হেড র্যাম্প যখন যাই, অডিয়েন্সের হাততালি আমাকে খুব টানে, আর স্পটলাইটটা যখন আমার ওপর পড়ে, তখন একদম অন্যরকম এক অনুভূতি হয়। সব শো আমার কাছে স্পেশাল। নির্দিষ্ট করে কোনোটার কথা বলতে পারব না।
সবচেয়ে বেদনার স্মৃতি?
রিবা: এখন পর্যন্ত র্যাম্পে বেদনার কোনো স্মৃতি নেই। তবে, এই করোনা পরিস্থিতিতে রানওয়ে খুব মিস করি।
সর্বশেষ কবে শো করেছেন? কোথায়?
রিবা: জানুয়ারিতে, বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক শো।
বিদেশে শোয়ের অভিজ্ঞতা?
রিবা: বিদেশে কাজের অনেক অফার পেয়েছি; তবে পারিবারিক কিছু ইস্যুর কারণে করা হয়নি। এখন অবশ্য সেই সমস্যাগুলো নেই। সবকিছু আবার স্বাভাবিক হলে, বিদেশে কাজ শুরু করব।
বাংলাদেশের র্যাম্প মডেলিং নিয়ে অভিজ্ঞতা থেকে আপনার মূল্যায়ন?
রিবা: বাংলাদেশে এখন র্যাম্প শো নিয়ে অনেকেই ইতিবাচক; আগেকার মতো নেতিবাচক মনোভাব অনেকটাই কমে এসেছে। অনেকেই ভালো কাজ করছেন। কাজ দেখানোর সুযোগ অনেক বেড়েছে। সব মিলিয়ে, র্যাম্প নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী। কোভিড-১৯-এর জন্য স্রেফ কিছুটা পিছিয়ে পড়লাম আরকি।
র্যাম্পে কাজ করতে আগ্রহী নতুনদের প্রতি পরামর্শ?
রিবা: নতুনদের বলব, এখন কাজের সুযোগ অনেক বেশি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে অনেক সহজ হয়ে গেছে। তবে নিজেকে কিছুটা গ্রুম আপ কর তারপর আসুন, কারণ এখন কিন্তু প্রতিযোগিতাটা অনেক কঠিন। তাই আপনার যদি বেসিক নলেজ জানা না থাকে, তাহলে পিছিয়ে পড়বেন। শুরুতে এসেই যদি একটা বড় কাজ পেয়ে যান, তারপরও কিন্তু শেখার শেষ নেই- এ কথা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।
করোনা পরবর্তী র্যাম্প মডেলিং ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে করেন?
রিবা: কোভিড-১৯-এর কারণে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি, ঠিকই; তবে আমি নিশ্চিত, আমরা অন্য কোনো উপায় বের করতে পারব। বিশ্বব্যাপী যেমনটা দেখছি, সবকিছু ডিজিটাল হয়ে আসছে, তাই আশা করছি, সহসাই নতুন কোনো উপায় খুঁজে পাব আমরা। হয়তো একটু সময় লাগবে, এই আরকি।
র্যাম্প ঘিরে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
রিবা: আসলে আমরা এখন যে সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, ভবিষ্যতের কথা বলা মুশকিল। আমরা কেউই জানি না, সামনে কী আছে। তবে আশা করছি, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তখন বিদেশে কাজের ওপর ফোকাস করব। কারণ, আমার বিদেশের মাটিতে হাঁটার বরাবরই খুব ইচ্ছে ছিল এবং আছে। আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা জোগান এ ব্যাপারে। তাদের বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে কাজ করার জন্যই জন্ম আমার।
এখন শুধু সবকিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার অপেক্ষা।