জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের ঘটনায় ১১০ বিশিষ্ট নাগরিকের উদ্বেগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নতুন কলাভবনের দেয়াল থেকে বঙ্গবন্ধুর একটি পুরোনো চিত্রকর্ম মুছে ধর্ষণবিরোধী দেয়ালচিত্র আঁকার অভিযোগে দুই শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তাদের বহিষ্কারাদেশ বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ১১০ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও ডিসিপ্লিনারি সভা আয়োজন ছাড়াই ওই দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের ঘটনা 'চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক'।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি মুছে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি আঁকেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের (অমর্ত্য রায়-ঋদ্ধ অনিন্দ্য) নেতা-কর্মীরা।
এ ঘটনায় প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি শাখার সভাপতি অমর্ত্য রায় এবং সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গঙ্গোপাধ্যায়কে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পরে মঙ্গলবার তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের ঘটনাকে 'একতরফা' উল্লেখ করে নাগরিকেরা বলেন, 'আমরা মনে করি, এ দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা চাতুর্যপূর্ণ। যে প্রক্রিয়ায় দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তা নিয়মের স্পষ্ট ব্যত্যয়।'
'আমরা অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এভাবে একতরফা, বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে জবাবদিহিতা না থাকা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে,' বিবৃতিতে বলেন তারা।
এ দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক তাদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে দেশের শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক চর্চা গভীর সংকটে নিপতিত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নাগরিকেরা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, নাট্যকার মাসুম রেজা, অধ্যাপক মানস চৌধুরী, অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, অধ্যাপক আ আল মামুন, কথাসাহিত্যিক ইমতিয়ার শামীম, লেখক ও শিক্ষা গবেষক রাখাল রাহা, চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা আশফাক নিপুণ, উন্নয়ন ও সংস্কৃতিক কর্মী ওয়ারদা আশরাফ, আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা, অধিকারকর্মী শামীম আরা নীপা প্রমুখ।