টাঙ্গাইল-রংপুর মহাসড়ক: অগ্রগতি ৭৩%, এ বছর শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম, ঈদে জনভোগান্তির আশঙ্কা
২০১৬ সালে নেওয়া টাঙ্গাইল-রংপুর ১৯০ কিলোমিটার চার লেনের মহাসড়কের নির্মাণকাজ ২০২১ সালের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ বহুমুখী জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরে এই প্রকল্পের ডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। কথা ছিল এই রাস্তার কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৭৩ শতাংশ।
এই মহাসড়কটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য একটি লাইফলাইন। প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন এ মহাসড়কে চলাচল করে। কিন্তু এর সঙ্গে মিলে চলমান নির্মাণকাজ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ঘন ঘন যানজট তৈরি করছে। আসন্ন ঈদের ছুটিতে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঈদের ছুটিতে উত্তরাঞ্চলগামী যাত্রীরা স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে পারেন।
সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) সড়ক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহযোগিতায় এ কাজ বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।
প্রকল্পটির অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক হামিদুল হক বলেন, ১১টি প্যাকেজের আওতায় মহাসড়কটির কাজ করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনেকগুলো প্যাকেজের কাজই শতভাগ সম্পূন্ন করা যাবে না। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব ও পশ্চিম প্যাকেজ দুটি একটু পিছিয়ে আছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর পাকেজ দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এলেঙ্গা থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক গাড়ি ঢুকবে।
সব মিলে ২০২৫ সালে ডিসেম্বরের মধ্যে ইন্টারচেঞ্জসহ শতভাগ কাজ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে কাজ শেষ করতেও ২০২৫ সাল পর্যন্ত লাগবে। এখানে প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়কের কাজ কার্যত আটকে ছিল। মূলত জমি পেলে কাজ করতে বেশিদিন লাগে না। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সাধারণ মানুষের জন্য চার লেন উন্মুক্ত করা যাবে।
প্রকল্পের কাজ প্রথমে নয়টি প্যাকেজে ভাগ করা হলেও পরে সিরাজগঞ্জের উভয় প্রান্তে দুটি ক্লোভারলিফ ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণের জন্য দুটি প্যাকেজ যুক্ত করা হয়।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যমুনা সেতুর পূর্ব ও পশ্চিমে ১৩ ও ৩০ কিলোমিটারের দুটি প্যাকেজ রয়েছে। এখানে কাজের গতি খুব খারাপ ছিল। সব মিলিয়ে এ দুই প্রকল্পে ৫০ শতাংশ কাজও করা যায়নি। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সম্প্রতি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে বড় বাজার রয়েছে। এগুলো ভেঙে কাজ শুরু করা অনেক সময়ের ব্যাপার।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৭ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। কিন্তু ঈদের সময় এ সেতুর ওপর দিয়ে গড়ে ৪২ যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহন সেতু পার হয়ে (পশ্চিম) খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় চলাচল করে। এ কারণে নির্মাণাধীন চার লেনের টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ অংশের কাজ দ্রুত হওয়া খুব জরুরি।
বগুড়ার শেরপুর থেকে শাজাহানপুরের বনানী পর্যন্ত সড়কের চার লেন উন্নয়ন কাজ ৮ নম্বর প্যাকেজের (শেরপুরের মির্জাপুর থেকে বনানী) আওতায় করা হচ্ছে। এ কাজ করছে সিপিসিএল তান্তিয়া জেভি কোম্পানি। প্রকল্পের শুরুতে এই অংশে জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৯ মাস বসে ছিল।
এই প্যাকেজের ব্যবস্থাপক মামুন কায়সার বলেন, 'বিভিন্নভাবে নোটিশ করে এলাকার অধিকাংশ স্থাপনা অপসারণ করা গেছে। কিন্তু আমাদের প্যাকেজের মধ্যে ৪.৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ এখনও করা সম্ভব হয়নি। জেলা প্রশাসনকে বারবার বিষয়টি অবহিত করা হচ্ছে। কিন্তু কবে অধিগ্রহণ করা হবে আমরা জানি না।'
তিনি আরও বলেন, 'সময়মতো জমি অধিগ্রহণ না হওয়ার কারণে প্যাকেজের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা কঠিন হবে। প্রয়োজনে যে জায়গাটুকু আমরা পাব, সেখানেই কাজ করে চলে যাব। যদিও এরমধ্যেই আমাদের প্যাকেজের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ হয়ে গেছে।'
প্রকল্পের বিস্তারিত
প্রকল্পের মুখপাত্র ও নির্বাহী প্রকৌশলী জয় প্রকাশ চৌধুরী জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) এবং বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডোরে (বিসিআইএম) নতুন করে বাংলাদেশের আটটি মহাসড়ক যুক্ত হতে যাচ্ছে। এই সড়কগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৬০০ কিলোমিটার। ১৯০ কিলোমিটার সড়কটি এর একটি অংশ। এই সড়কের মাধ্যমে রংপুর-সৈয়দপুর-বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতে প্রবেশ করা যাবে।
আশা করা হচ্ছে, ভারত-নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কটি।
সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। তখন এর ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে কিছু সংযুক্তির ফলে ব্যয় বেড়েছে। এখন এই সড়কের নির্মাণ খরচ হচ্ছে ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা।
এই প্রকল্পের আওতায় ২৬টি সেতু, একটি রেলওয়ে ও ১১টি স্টিল ফুটওভার ব্রিজও নির্মাণ করা হবে। এছাড়া সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু ইপিজেড ও গোবিন্দগঞ্জ পলাশবাড়ী এলাকায় নতুন করে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে।
সাসেক প্রকল্পের আওতায় এডিবির আর্থিক সহায়তায় সড়কটির উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।