তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়বে কলার দাম!
বিশ্বজুড়ে সর্বসাধারণের পছন্দের শীর্ষে থাকা ফল কলা; সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এর উৎপাদনে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যার ফলে শীঘ্রই এই ফলের দাম আরও বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন শিল্প সংশ্লিষ্ট বিশ্বের শীর্ষ বিশেষজ্ঞদের একজন। খবর বিবিসির।
ওয়ার্ল্ড ব্যানানা ফোরামের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ প্যাসকেল লিউ বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কলা উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক 'বিশাল হুমকি'; কারণ (কলাগাছে) যে রোগগুলো দ্রুত ছড়ায়, সেসব রোগকে আরও জটিল করে তুলতে সাহায্য করে জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত এই ক্ষতিকারক প্রভাব।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলার সামনে আবির্ভূত হওয়া এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ফোরামটি মঙ্গলবার ইতালির রোমে একটি বৈঠকও করে।
সম্প্রতি সামুদ্রিক ঝড়ের কারণে যুক্তরাজ্যের বাজারে কলার ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করেছে।
দেশটি প্রতি বছর প্রায় ৫ বিলিয়ন কলা আমদানি করে, যার প্রায় ৯০ শতাংশ বড় সুপারমার্কেটগুলোর মাধ্যমে বিক্রি হয়। যদিও যুক্তরাজ্যের কলার ঘাটতি অতটা চোখে পড়ছে না ভোক্তাদের।
এক্সেটার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড্যান বেবার কলার উৎপাদন আরও টেকসই করার লক্ষ্যে গবেষণা চালাচ্ছেন। তার মতে, "সাপ্লাই চেইন ওঠানামা করলেও, এ ধরনের প্রভাব মোকাবেলায় যুক্তরাজ্য বেশ দক্ষ।"
মূলত কলা যেখানে পাকে, অর্থাৎ 'রিপেনিং সেন্টারে' কলা আসার পর তা কেমন সময়ের মধ্যে পাকবে, সেটি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য বাজারে ফলটির ঘটতি মোকাবেলা করছে।
তবে এভাবে স্বল্প-মেয়াদী আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করা গেলেও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মতো বড় ধরনের প্রভাবের ক্ষেত্রে কলার ফলন কতটা সহনশীল হবে– তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। একইসঙ্গে তাপমাত্রা বাড়লে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোগের প্রভাবও বৃদ্ধি পাবে, যেটি কলার উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
জাতিসংঘের অধীনে কলা উৎপাদক, আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক দেশ এবং গবেষকদের আম্ব্রেলা গ্রুপ ওয়ার্ল্ড ব্যানানা ফোরামের অর্থনীতিবিদ প্যাসকেল লিউ বলেন, "আমি মনে করি, জলবায়ু পরিবর্তন সত্যিই কলা খাতের জন্য একটি বিশাল হুমকি।"
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি কলা উৎপাদনে মারাত্মক ফেলবে; কারণ কলা তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রতি সংবেদনশীল। এর প্রভাবে এই ফসল কিছু জায়গায় নিশ্চিহ্নও হয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
লিউয়ের মতে, তাপমাত্রা বাড়লে সেটার সবচেয়ে বড় তাৎক্ষণিক হুমকি হল, এটি দ্রুততম সময়ে রোগ ছড়াতে সাহায্য করবে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, 'ফুসারিয়াম উইল্ট টিআর৪' নামক ছত্রাকের সংক্রমণ। এটি প্রথমে অস্ট্রেলিয়া, পরে এশিয়া থেকে আফ্রিকা এবং এখন দক্ষিণ আমেরিকায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
একবার কোনো বাগান এই ছত্রাকে সংক্রমিত হলে দ্রুতই তা ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অত্যন্ত কঠিন।
গবেষক লিউ বলেন, "আমরা জানি, এই ফুসারিয়াম উইল্টের মোকাবেলা অত্যন্ত কঠিন এবং এটি বন্যার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে; এটি প্রবল বাতাসের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।"
"সুতরাং, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটলে তা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রোগ ছড়াতে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে," বলেন তিনি।
এছাড়া, সার, জ্বালানি ও পরিবহনের খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত শ্রমিক ঘাটতির মুখেও পড়েছেন উৎপাদনকারীরা। যা কলার উৎপাদনে নতুন উদ্বেগ যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে তাই এই শিল্পের গবেষকরা বলছেন, কলার ফলনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর কারণে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় কলার দাম বাড়তে পারে এবং চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করা না গেলে দাম বাড়তেই থাকবে।
অর্থনীতিবিদ লিউ বলেন, "প্রকৃতপক্ষে দাম কিছুটা বাড়বে। যদি সরবরাহে বড় ধরনের বৃদ্ধি না ঘটে, আমি অনুমান করছি, আগামী বছরগুলোতেও কলার দাম তুলনামূলকভাবে বেশিই থাকবে।"