নিরাপদ যান চলাচলে বনানীতে একমুখী সড়ক, পথচারী জোন তৈরি করছে ঢাকা উত্তর সিটি
বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সায়মা হক বনানীর ২১ নম্বর রোডের নবনির্মিত পথচারী জোনে বসে তার মায়ের জন্য অপেক্ষা করছে।
তবে গাড়ি থাকা সত্ত্বেও সায়মার মা শাহেদা হক এলাকায় যানজটের কারণে সাধারণত রিকশায় করে মেয়েকে নিতে আসেন।
নতুন একমুখী সড়ক প্রকল্প এলাকার যানজট থেকে পরিত্রাণ দিতে পারবে– এমন আশায় আছেন শাহেদা।
"রাস্তার জায়গা কমে গেলেও পথচারীদের জন্য যে বাড়তি জায়গা থাকে (ফুটপাত), সেটাই বেশি জরুরি। যানজটের কারণে আমার মাঝে মাঝে দেরি হলে, সায়মাকে ফুটপাতের পাশেই অপেক্ষা করতে হয়। ফুটপাত সংকীর্ণ হয়ে গেলে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা ঝুঁকিপূর্ণ। এখন ফুটপাত প্রশস্ত করা হয়েছে এবং বসার জায়গা তৈরি করা হয়েছে, রাস্তার পাশে অপেক্ষা এবং পথচারীদের চলাচল এখন নিঃসন্দেহে নিরাপদ এবং সহজ হবে," দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বললেন শাহেদা হক।
শাহেদার মতো বনানী এলাকার আরও অনেকে বনানীকে একটি নিরাপদ এবং পথচারী-বান্ধব এলাকায় রূপান্তরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পাইলট প্রজেক্টকে স্বাগত জানিয়েছেন। নিরাপদ যান চলাচল এবং পথচারীদের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে উদ্যোগটি নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।
এই উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বনানীর ১৩টি সড়কে একমুখী ট্রাফিক ব্যবস্থা (ওয়ান-ওয়ে ট্রাফিক সিস্টেম) বাস্তবায়ন করা। এছাড়া, প্রকল্পটির অংশ হিসেবে রাস্তার ধারে গাছা লাগানোসহ তৈরি করা হচ্ছে বসার ব্যবস্থা। নির্ধারিত রাস্তার অর্ধেক অংশে গড়ে উঠছে পথচারী-বান্ধব এলাকা বা পেডেস্ট্রিয়ান-ফ্রেন্ডলি জোন।
এরকম একটি রাস্তাই হলো বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছের ২১ নম্বর সড়কটি; বর্তমানে এই সড়কে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর ট্রাফিক প্রবাহ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং গুলশান ও বারিধারায় একই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় কি-না, সে ব্যাপারে তথ্য সরবরাহ করবে। কারণ গুলশান-বারিধারাও অনেকটা বনানীর মতো একই ধরনের ট্রাফিক সমস্যার সম্মুখীন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) নাঈম রায়হান খান টিবিএসকে বলেন, বনানীর এসব সড়কে মার্কিং ও ইন্ডিকেটর বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।
"আমরা এই রাস্তাগুলোকে একমুখী পাইলট হিসাবে নিয়েছি। এর ভিত্তিতে অন্যান্য এলাকায় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও, বিদ্যমান রাস্তাগুলো পথচারীদের কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হবে।"
"আমরা প্রায় অর্ধেক রাস্তা বন্ধ করে পাবলিক স্পেস বানিয়ে দিয়েছি। আরও কিছু রাস্তায় এভাবে পাবলিক স্পেস তৈরি করার কথা ভাবছি। রাস্তাগুলো ওয়ান-ওয়ে হলে যানজট অনেক কমে যাবে," যোগ করেন তিনি।
একমুখী সড়ক চালু করার আগে সপ্তাহব্যাপী জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা করছে ঢাকা উত্তর সিটি। এই প্রচারাভিযানের মাধ্যমে এলাকার বাসিন্দাদের সচেতন করার পাশাপাশি পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বাইরে প্রকল্পটি পথচারীদের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়।
প্রকল্পের আওতায় প্রশস্ত ফুটপাত, সাইকেলের জন্য আলাদা লেন এবং প্রশস্ত রাস্তায় অন-স্ট্রিট পার্কিংয়ের ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো রাস্তায় পথচারীদের চলাচলকে আরও বেশি মসৃণ ও নিরাপদ করা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ড. আদিল মোহাম্মদ খান একমুখী রাস্তাকে যানজট সমস্যা সমাধানের অন্যতম উপায় হিসেবে দেখছেন।
তিনি বলেন, "প্রকল্পটি ঢাকা শহরে ব্যাপকভাবে বাস্তবায়নের জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে। আরবান ডিজাইন বা শহুরে নকশায় পথচারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হলো একটি গ্লোবাল ট্রেন্ড। তবে এর সাফল্যের জন্য ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বনানীর বাসিন্দাদের আশা, বাস্তবায়নাধীন ওয়ান-ওয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা এই এলাকার যানজট নিরসনে কাজ করবে। যদিও অনেকে এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ প্রভাব বুঝতে প্রকল্পটি চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
প্রকল্পটি চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো— বনানীর বাসযোগ্যতাকে আরও বাড়ানো; এলাকার যানজট কমানো এবং পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। উদ্যোগটি পথচারী-বান্ধব নগর নকশাকে অগ্রাধিকার দিয়ে গ্লোবাল ট্রেন্ড বা বৈশ্বিক প্রবণতাকে অনুসরণ করে।
ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটির সহযোগিতায় প্রকল্পটির নেতৃত্ব দিচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। প্রকল্পটি শহরকে আরও নিরাপদ, টেকসই এবং বাসযোগ্য করে তোলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়।