দুর্দান্ত তামিমের পর রিশাদ ঝড়, শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে সিরিজ বাংলাদেশের
৬, ৬, ৪, ৪, ৪- না, এটি কোনো মোবাইল ফোনের নাম্বারের ডিজিট নয়। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার করা ৪০তম ওভাররের প্রথম পাঁচ বলে রিশাদ হোসেনের নেওয়া রান। শ্রীলঙ্কান লেগ স্পিনারের এক ওভারে ২৪ নেওয়ার আগে তারই করা ৩৭তম ওভারে আরও ১৬ রান নিয়েছেন রিশাদ। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ডটা না ভাঙতে পারলেও দলকে যেভাবে জিতিয়েছেন তাতেই তৃপ্তি পাওয়ার কথা রিশাদের।
এই তরুণ অলরাউন্ডারের ঝড়ো ১৮ বলে ৪৮ রানের ইনিংসেই শ্রীলঙ্কাকে ৫৮ বল হাতে রেখে চার উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে তিন ম্যাচের সিরিজও ২-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে নাজমুল হাসান শান্তর দল। স্কোরবোর্ড যতটা সহজ জয়ের গল্প বলছে, মাঠের চিত্র ছিল ভিন্ন। রিশাদ যখন ব্যাটিংয়ে নামেন তখনও দলের প্রয়োজন ৫৮ রান। এক প্রান্ত আগলে ধরে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। রিশাদ এসে সব শঙ্কা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন। আক্ষরিক অর্থেই উড়িয়েছেন, পাঁচটি চারের সঙ্গে মেরেছেন বিশাল চার ছক্কা। সবগুলোই লঙ্কান স্পিনার হাসারাঙ্গাকে।
মুশফিকুর রহিমের ব্যাটের কানায় লেগে জয়সূচক রান হিসেবে চার না হলে রিশাদ ভেঙে দিতে পারতেন বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড। যেটি এখন আপাতত যৌথভাবে মোহাম্মদ আশরাফুল ও আব্দুর রাজ্জাকেরই থাকল। দুজনই ২১ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন।
তবে বাংলাদেশের রান তাড়ায় রিশাদের আগের গল্পটা তানজিদ হাসান তামিমের। এই ম্যাচে একাদশেই ছিলেন না এই ওপেনার। ফিল্ডিং করতে গিয়ে সৌম্য সরকার ঘাড়ে চোট পাওয়ায় তার কনকাশন সাব হিসেবে ব্যাট করতে নামেন তামিম। নেমেই খেলেছেন ৮৪ রানের ইনিংস। এক পাশে সাবলীল ভঙ্গিতে দারুণ সব শট খেলে রানের চাকা সচল রেখেছেন এই বাঁহাতি ওপেনার। ৮১ বলের ইনিংসে নয় চারের সঙ্গে মেরেছেন চারটি ছয়। চোখ জুড়ানো সব শটে মুগ্ধ করেছেন তামিম।
লক্ষ্য ২৩৬ রানের হলেও বাংলাদেশকে কিছুটা ভয় ঘিরে ধরেছিল ১৩০ রানের মধ্যে অর্ধেক উইকেট হারিয়ে। সেখান থেকে অভিজ্ঞ সেনানী মুশফিকুর রহিম এবং মেহেদী হাসান মিরাজ মিলে ৪৮ রানের জুটি গড়ে শঙ্কা অনেকটাই কাটিয়ে তোলেন। কিন্তু মিরাজ ব্যক্তিগত ২৫ রান করে ফিরে যাওয়ার পরও বাকি ছিল বেশ খানিকটা কাজ। যা চোখের পলকে করে নিয়েছেন রিশাদ। মুশফিকের কথাও না বললেই নয়। প্রথম ওয়ানডেতে অধিনায়ক শান্তকে যোগ্য সঙ্গ দেওয়া মুশফিক আজও ৩৬ বলে ৩৭ রানের সময়োপযোগী ইনিংস খেলেছেন। শ্রীলঙ্কার হয়ে এক লাহিরু কুমারাই বল হাতে ভীতি জাগিয়েছেন। ৪৮ রান দিয়ে চারটি উইকেট নিয়েছেন এই পেসার।
এর আগে শ্রীলঙ্কার হয়ে ব্যাট হাতে জানিথ লিয়ানাগে একাই লড়েছেন, তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। আর তাতে টস জিতে আগে ব্যাট করা শ্রীলঙ্কা স্কোরবোর্ডে জমা করতে পেরেছে ২৩৫ রান। উইকেট হারিয়েছে সবকটি। লঙ্কানদের অল্প রানে বেঁধে রাখতে কমবেশি অবদান রেখেছেন বাংলাদেশের সব বোলারই। তবে পেসারদের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। তাসকিন-মুস্তাফিজরা দুর্দান্ত বোলিংয়ে শিকল পড়িয়েছেন শ্রীলঙ্কার রানের চাকায়। এক জানিথ লিয়ানাগে সেঞ্চুরি করে অপরাজিত থেকে যান।
টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন লঙ্কান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস। মাত্র ১৫ রানের মধ্যেই আগের ম্যাচে সেঞ্চুরিয়ান পাথুম নিশাঙ্কা ও আরেক ওপেনার আভিষ্কা ফার্নান্দোকে ফিরিয়ে দেন তাসকিন আহমেদ। এই ডানহাতি পেসারের এনে দেওয়া শুরুর ওপর ভর করেই লঙ্কানদের ওপর চেপে বসেন অন্য বোলাররাও।
দলীয় ৪১ রানে সাদিরা সামারাবিকরামা ও ৭৪ রানে কুশল মেন্ডিসকে সাজঘরে ফেরান মুস্তাফিজ ও রিশাদ। দুই বাংলাদেশী বোলারই এই সিরিজে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছেন। এরপর ভয়ংকর হয়ে ওঠার আভাস দেওয়া চারিথ আসালাঙ্কাকেও ফেরান মুস্তাফিজ। ৪৬ বলে পাঁচ চারে ৩৭ রান করেন আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার জয়ের অন্যতম কারিগর আসালাঙ্কা।
এরপর লঙ্কানদের ইনিংস একাই টেনেছেন জানিথ লিয়ানাগে। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান অপর প্রান্ত থেকে খুব একটা সাহায্য পাননি। শেষ পর্যন্ত ১০২ বলে ১১ চার ও দুই ছয়ে ১০১ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে তাসকিন ৪২ রান দিয়ে নিয়েছেন তিন উইকেট। চোট পেয়ে নিজের শেষ ওভার করতে না পারা মুস্তাফিজ ৩৯ রান দিয়ে শিকার করেছেন দুই উইকেট। স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ৩৮ রান দিয়ে দুটি উইকেট তুলে নেন। রিশাদ ও সৌম্যর শিকার একটি করে উইকেট।