গাজীপুরে চাকরির প্রলোভনে আটকে নির্যাতন, মুক্তিপণ দাবি: গ্রেপ্তার ১৪, উদ্ধার ২৭
গাজীপুরের গাছা থানায় অভিযান চালিয়ে এলাকায় অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অফিসে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবির সঙ্গে জড়িত প্রতারক চক্রের ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। এসময় নারী ও পুরুষসহ ২৭ জন ভুক্তভোগী জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার (২০ মার্চ) রাতে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন বোর্ড বাজারের সরিবপুর এলাকায় বেস্ট এ্যাকশন সিকিউরিটি কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অফিসে উদ্ধার অভিযান চালায় র্যাব-১।
এই চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন– মোঃ আস্তাকুল আমিন আনাম (৩০), মোঃ তৌফিক (২৪),মোঃ ইমরান হোসেন (১৯), মোঃ জুনায়েদ (২১), মোঃ রনি আহমেদ (২১), সালাউদ্দিন সরকার (২০), মোঃ জিসান হোসেন (২১), মোঃ রায়হান (১৮), মোঃ আতিক হাসান (১৯), আজিজুল হাকিম (২৩), সম্পা আক্তার (২৪), মোছাঃ বিউটি খাতুন (২১), বর্ষা খাতুন (১৯), তাহসিন আক্তার মীম (২০)।
অভিযান শেষে বুধবার (২০ মার্চ) রাত ১০টার দিকে এক স্পট সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এসময় র্যাব কর্মকর্তা বলেন, বেস্ট এ্যাকশন সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন ও তার পূর্ব পরিচিত ফারজানা আক্তার পাখি উভয়েই চাকরির প্রত্যাশায় উক্ত কোম্পানিতে আসেন। পরে কোম্পানির লোকেরা তাদেরকে আটক করে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।
সেই নির্যাতনের ভিডিও সাকিবের বাবার মোবাইলে পাঠায়। পরিবারের নিকট ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না পেলে নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেইলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে দেবে বলে হুমকি দেয়।
পরে এ বিষয়ে সাকিবের বাবা গত ২০ মার্চ ছেলেকে উদ্ধারের জন্য গাজীপুর র্যাব-১ স্পেশালাইজড কোম্পানিতে আইনী সহায়তার আবেদন করেন। তারপরেই গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ভুক্তভোগী সাকিবসহ ২৭ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয় এবং জড়িত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান র্যাব-১ এর এই কর্মকর্তা।
কমান্ডার মঈন আরও বলেন, "গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। দীর্ঘদিন যাবৎ এই চক্রটি বিভিন্ন সময়ে বেস্ট এ্যাকশন সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের ব্যবহৃত একাধিক মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে ভুয়া চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়।"
"চক্রটি প্রায় ৩ মাস যাবৎ এই প্রতারণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গ্রেপ্তারকৃতরা চাকরি প্রত্যাশীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার নামে প্রায় কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও চক্রটির স্থায়ীভাবে কোনো অফিস ছিল না বিধায় গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন রশিদ মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসাকে অস্থায়ী অফিস হিসেবে ব্যবহার করছিল। আত্মগোপনের জন্য তারা প্রায়শই নিজেদের মোবাইল নম্বর বন্ধ রেখে নিকট আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবের বাসায় অবস্থান করত।"
র্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, "আমরা এমন ২৭ জনকে পেয়েছি যাদের সঙ্গে একইভাবে প্রতারণা করা হয়েছে। ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাকিবকে নির্যাতন করা হয়েছে। এমন কি তার শ্লীলতাহানি করে সামাজিকভাবে অপদস্ত করার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছিল।"
"আমরা এখানে ৪-৫ শতাধিক মানুষের আবেদন ফরম পূরণ করা অবস্থায় পেয়েছি। প্রতিটি ফরম পূরণ বাবদ তারা ৬০০ টাকা করে নিয়েছে। এরপর নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে ও মার্কেটিং অফিসার হিসেবে চাকরি পেতে ১৫,০০০ টাকা করে নিত। এই সকল মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।"
এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন জানান, গ্রেপ্তার ১৪ জন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণায় জড়িত। তারা তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই প্রতারণা শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠানের কোনো অনুমোদন নেই। তারা অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে লোক সংগ্রহ করত।
আরেক প্রশ্নের জবাবে র্যাব কর্মকর্তা জানান, "এই প্রতিষ্ঠানের ভেতরে আমরা একটি টর্চার সেল পেয়েছি। চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা ফেরত চাইলে তাদের এই রুমে নিয়ে নির্যাতন করা হত। এই টর্চার সেলে আমরা দেশিয় অস্ত্র, ইলেকট্রনিক শক দেওয়ার ক্যাবল, লাঠিসোঁটা পাওয়া পেয়েছি।"
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন প্রতারণার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।