আইএসআইএস-কে কেন মস্কোতে হামলা করলো?
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে একটি কনসার্ট হলে বন্দুকধারীদের হামলা হয়েছে। এ হামলায় অন্তত ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে; আহত হয়েছেন ১৪৫ জনের বেশি। হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
শুক্রবার (২২ মার্চ) রাতে মস্কোর উত্তর প্রান্তে ক্রকাস সিটি হলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ৬ হাজার ২০০ আসনের ক্রকাস সিটি হলে একটি সংগীত দলের গান গাওয়ার আগমুহূর্তে এ হামলা চালানো হলো।
দায় স্বীকার অনুসারে এই হামলার পেছনে রয়েছে আইএসআইএস-কে নামে পরিচিত ইসলামিক স্টেটের আফগান শাখা। রাশিয়ায় আক্রমণ ক্ষেত্রে তাদের উদ্দেশ্য কী?
আইএসআইএস-কে কারা?
ইসলামিক স্টেট খোরাসান (আইএসআইএস-কে) নামের গোষ্ঠীটি অঞ্চলটির পুরানো নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে। এতে ইরান, তুর্কমেনিস্তান ও আফগানিস্তানের কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত।
গোষ্ঠীটি ২০১৪ সালের শেষের দিকে পূর্ব আফগানিস্তানে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। একইসাথে দ্রুত সময়ে চরম বর্বরতার নজির স্থাপন করে কুখ্যাতি অর্জন করে।
ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠীর সবচেয়ে সক্রিয় আঞ্চলিক সহযোগীদের মধ্যে একটি আইএসআইএস-কে। ২০১৮ সালের দিকে নামডাক করার পর ধীরে ধীরে এর সদস্য সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। তারা তালেবান ও মার্কিন বাহিনীরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর থেকে দেশটিতে আইএসআইএস-কে-এর মতো চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা বিকাশের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।
গ্রুপটি কোথায় কোথায় আক্রমণ করেছে?
আইএসআইএস-কে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে এবং বাইরে মসজিদসহ নানা স্থানে হামলা করেছে। এই বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করে, গোষ্ঠীটি ইরানে জোড়া বোমা হামলা চালিয়েছে; যাতে প্রায় ১০০ জন নিহত হয়।
এছাড়াও ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আইএসআইএস-কে কাবুলে রাশিয়ান দূতাবাসে একটি মারাত্মক আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করে।
গোষ্ঠীটি ২০২১ সালে কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি হামলার দায় স্বীকার করেছে। যাতে ১৩ মার্কিন সেনা এবং বহু বেসামরিক নাগরিককে নিহত হয়েছিল।
এই মাসের শুরুর দিকে, মধ্যপ্রাচ্যের এক শীর্ষ মার্কিন জেনারেল বলেন, "আইএসআইএস-কে আফগানিস্তানের বাইরে মার্কিন ও পশ্চিমা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোথাও আক্রমণ করতে পারে। এই হামলা ছয় মাসের মধ্যে হতে পারে এবং সামান্য কোনো সতর্কতাও দেওয়া হবে না।"
গোষ্ঠীটি কেন রাশিয়ায় হামলা করলো?
গতকাল রাশিয়ায় আইএসআইএস-কে-এর হামলায় পুরো বিশ্বই চমকে গিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই গোষ্ঠীটি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধিতা করেছে।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা গ্রুপ সোফান সেন্টারের কলিন ক্লার্ক বলেন, "আইএসআইএস-কে গত দুই বছর ধরে রাশিয়ার উপর দৃষ্টি রাখছিল। প্রায়শই তারা নিজেদের প্রচারে পুতিনের সমালোচনা করে থাকে।"
অন্যদিকে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উইলসন সেন্টারের মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, "আইএসআইএস-কে রাশিয়াকে এমন কার্যকলাপে জড়িত হিসাবে মনে করে যা নিয়মিতভাবে মুসলমানদের নিপীড়ন করে।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান