“আপনি এখানে কেন কাজ করতে চান?” চাকরির ইন্টারভিউতে কীভাবে এ প্রশ্নের জবাব দেবেন
চাকরির সাক্ষাৎকারে সবচেয়ে সহজ ও সরাসরি করা প্রশ্নটাই অনেক সময় চাকরি প্রত্যাশীদের ঘাবড়ে দেয়। এই প্রশ্ন প্রত্যাশিত হলেও, উত্তর দেওয়ার বেলায় দেখা যায়, অনেকে গুছিয়ে উত্তর দিতে ব্যর্থ হন। প্রশ্নটি হলো: "আপনি এখানে কেন কাজ করতে চান?"
চাকরিদাতাদের কাছে এর সঠিক উত্তরটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে তাঁরা উত্তরদাতার আত্মবিশ্বাস, সম্ভাব্য কর্মস্থল সম্পর্কে জানাশোনা কতটুকু, বা তিনি এই চাকরিতে কতোটা উৎসাহী– সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পান।
যেভাবে এ প্রশ্নের উত্তর দেবেন?
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ জোয়েল শোয়ার্জবার্গ তাঁর ১৬ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এই সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। প্রথমেই ৩টি পদ্ধতি সুপারিশ করেছেন তিনি। এগুলো হলো:
১। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের পণ্য, সেবা বা মিশন সম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত আগ্রহের কারণ খোলাসা করে বলুন;
২। কেন নির্দিষ্ট ওই পদে চাকরি করতে আপনি পছন্দ করবেন– তারও ব্যাখ্যা দিন;
৩। আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার আলোকে কীভাবে এই দায়িত্ব নিয়ে আপনি সফল হবেন – সেই যুক্তি তুলে ধরুন।
এক সাথে এই তিনটি বিষয় বলার মতো সময় আপনাকে নাও দেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে যেকোন একটি বা দুটি বলতে পারেন। উত্তর যদি প্রশ্নকর্তা যা জানতে চান– তার সাথে সামঞ্জস্য রাখে, সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।
যেভাবে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের পণ্য, সেবা বা মিশন সম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত আগ্রহের কারণ খোলাসা করে বলবেন
ধরুন বড় একটি প্রযুক্তি কোম্পানিতে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, সেখানে অবশ্যই প্রযুক্তি সম্পর্কে আপনার জ্ঞান বা দক্ষতার কথা উঠবে। এমনিভাবে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান যে পণ্য, পরিষেবার ব্যবসা করছেন, বা যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে– সেসম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত আগ্রহের কারণ জানতে চাইবে। জানতে চাইবে, তাদের ব্যবসায় কাজে লাগানোর মতো কোন ধরনের দক্ষতা আপনার রয়েছে।
কোম্পানির মূল্যবোধ বা ব্যবসার দর্শন সম্পর্কে আপনি কতখানি স্পষ্ট ধারণা রাখেন- সেটিও কিন্তু আপনাকে বলতে হবে। প্রতিষ্ঠান যদি বাণিজ্যিক না হয়, বা অলাভজনক সংস্থা হয়– সেখানে আপনার ব্যক্তিগত মূল্যবোধ/ দর্শন চাকরিদাতার কাছে অনেকখানি গুরুত্ব পাবে। এর মাধ্যমে তাঁরা বুঝে নিতে চাইবেন, সংস্থার আদর্শের সাথে আপনি কতটুকু সামঞ্জস্য রাখতে পারবেন।
এজন্য চাকরিস্থল সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা তৈরি করতে হবে। বা যদি আপনার আগে থেকেই ওই খাত সম্পর্কে জানাশোনা বা আগ্রহ থাকে– সেটিকে নিপুণভাবে উপস্থাপন করার প্রস্তুতি রাখতে হবে। এবিষয়ে সিইও কনসালটেন্ট সাবিনা নওয়াজ বলেছেন, "আপনি যদি কোনো বিষয়ে প্রবল আগ্রহী হন– তাহলে সেটি অবশ্যই আপনার জীবনের অন্যান্য বিষয়কে প্রভাবিত করবে। জীবন থেকে সেসব ছোটখাট বিষয়ের উদাহরণ দিয়েই চমৎকৃত করতে পারেন ইন্টারভিউ বোর্ডকে। কারণ, মনে রাখবেন, উত্তেজিত স্বরে নিজের আগ্রহের স্বপক্ষে অনর্গল কথা বলা কিন্তু কার্যকরী হবে না। বরং স্থির ও অবিচলভাবে মজাদার উপস্থাপনের মাধ্যমেই বাজিমাত করতে পারবেন। এভাবে চাকরির কোন দিকটি "আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ"- সেটি তুলে ধরতে পারবেন।
কেন নির্দিষ্ট ওই পদে চাকরি করতে আপনি পছন্দ করবেন– তারও ব্যাখ্যা দিন;
কোনো কাজকে ভালোবাসলে তখন মন দিয়ে তা করা যায়, সেখানে কঠোর পরিশ্রম করেও আনন্দ পাওয়া যায়। ফলে সব কর্মদাতাই কর্মীদের থেকে এমনটাই প্রত্যাশা করেন। তাই আপনিও প্রত্যাশিত চাকরির সাথে আপনার ব্যক্তিগত আনন্দ পাওয়ারও যে সম্পর্ক আছে– সেই যোগসূত্রটি তুলে ধরুন। এক্ষেত্রে শুধু বললেই হবে না– অমুক কাজ আমি করতে ভালোবাসি, কারণ সেটা সব চাকরিপ্রত্যাশীই বলে থাকেন। আপনার উচিত হবে, নিজ বক্তব্যকে আরো মূল্যবান ও স্মরণীয়ভাবে উপস্থাপন করা।
যেমন বলতে পারেন, "অন্যদের শেখাতে আমি খুবই ভালোবাসি– স্কুল শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি, তারপর প্রশিক্ষক হিসেবেও ছিলাম আগের চাকরিতে। এজন্য আমি নিজেকে আপনাদের লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করি।"
অথবা "আমি সব সময়েই লিখতে ও সম্পাদন করতে পছন্দ করি। কলেজ পত্রিকায় কাজ করেছি, আবার ইন্টার্নের সময় কাজ করেছি ওয়েব কন্টেন্ট এডিটে– তাই এ চাকরিতে লেখাটাই প্রধান দায়িত্ব এটি জেনে আমি খুব উত্তেজনা বোধ করছি।"
পূর্ব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার আলোকে কীভাবে এই দায়িত্ব নিয়ে আপনি সফল হবেন – সেই যুক্তি তুলে ধরুন
চাকরিপ্রত্যাশীদের বর্তমান যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হলেও– ভবিষ্যতে আপনি আর কী ধরনের দক্ষতার সাক্ষর রাখবেন সে বিষয়েও কিন্তু জানতে চান ইন্টারভিউ বোর্ডের কর্তারা। কারণ, তাঁরা শুধু আপনাকে চাকরিই দেবেন না, বরং এর মাধ্যমে আপনার পেছনে প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ, সম্পদ/ অর্থ বিনিয়োগ করবেন।
তাই নির্দিষ্ট পদে আপনার সম্ভাব্য সাফল্য ও একইসাথে ভবিষ্যতে একাজে অত্যন্ত দক্ষ কেন হতে পারবেন– তা আত্মবিশ্বাসের সাথে ব্যাখ্যা করুন। এক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতার বরাত দিন। যেমন " ক নামের আগের কোম্পানিতে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে মনে করছি, আমি চাকরিতে সফল হতে পারব"... "আমার অমুক দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে আমি সফল হব" ইত্যাদি।
অর্থাৎ, শিক্ষাগত বা আগের কর্মস্থলে আপনি যে দক্ষতা লাভ করেছেন, সেটি আপনার নতুন চাকরির ক্ষেত্রে কতোটা প্রাসঙ্গিক হবে তা সরলভাবে তুলে ধরতে হবে। সমস্ত কথাবার্তা যেন প্রাসঙ্গিক থাকে, সেদিকে আপনাকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে।