আশ্রয় নেওয়া আরও ১৭৯ মিয়ানমার সেনাকে ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
রাখাইন রাজ্যে সংঘাত চলাকালীন পালিয়ে আসা মিয়ানমারের ১৭৯ সেনাদের ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে মিয়ানমারের জান্তা সরকার দেশটির কারাগারে থাকা ২০০ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এপ্রিলের শুরুর দিকে দুই দেশের মধ্যে বিনিময়টি হওয়া কথা রয়েছে। এই তালিকায় রয়েছেন মিয়ানমারের একজন বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) অফিসার; যিনি ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যার হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত। এই বিষয় যদিও দেশটির বর্ডার গার্ড মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্য ও অন্যত্র কারাগারগুলিতে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে লড়াই করছে। এক্ষেত্রে তারা কক্সবাজার থেকে জান্তা সেনাদের ফিরিয়ে নেওয়া জাহাজেই বাংলাদেশি বন্দীদের ফেরত পাঠাতে চায়।
ঐ কর্মকর্তা বলেন, "এটি টেকনিক্যালি বন্দি বিনিময় নয়। কারণ মিয়ানমারের সেনারা বাংলাদেশে আশ্রয় চেয়েছিল। এখন তারা সবাই মিয়ানমারে ফিরে যেতে ইচ্ছুক। এক্ষেত্রে কেউ আশ্রয় চাইলে আমরা জাতিসংঘের সঙ্গে যোগাযোগ করব।"
বাংলাদেশি কর্মকর্তা জানান, যে অফিসারকে ২০১৭ গণহত্যার সাথে জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে তাকে বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হবে না।
তিনি বলেন, "যদি তিনি সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক হন, তবে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) একটি বিবৃতি রেকর্ডের অনুমতি দিতে পারি। অন্যথায় না।"
এদিকে ব্যাংকক ভিত্তিক ফোর্টফাই রাইটস রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত থাকার জন্য জান্তা কর্মীদের তদন্ত করতে এবং আইসিসির তদন্তের সাথে সমন্বয় করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে আরাকান আর্মির কাছে পরাজিত হয়ে গত সপ্তাহে মিয়ানমারের আরও কয়েকশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
গত ৪ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মোট ৩৩০ জন কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এদিকে বাংলাদেশ সরকার একই সময়ে ৭৫ জন রোহিঙ্গাকে স্বেচ্ছায় ফিরিয়ে দিয়েছে।
এদিকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার থেকে আসা একটি জাহাজের মাধ্যমে দেশটির সেনাদের বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবাসন করা হয়।
এ সময় বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে বলেন, "আর কাউকে সীমান্ত অতিক্রম করতে দেওয়া হবে না।"
কিন্তু ১১ মার্চ আরাকান আর্মির কাছে পরাজিত হয়ে কমপক্ষে ১৭৯ জন সেনা সদস্য বান্দরবানের সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাদের অভিযানে প্রাণভয়ে বাধ্য হয়ে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি।
এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা ছাড়া বেশিরভাগ শরণার্থীরাই ফিরে যেতে চাচ্ছে না। এদিকে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তাই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে।
রাখাইন রাজ্যে এখনও আনুমানিক ৬ লাখ রোহিঙ্গা গোষ্ঠী আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা প্রায়শই নানা নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট মতে, জানুয়ারির শেষের দিকে মিয়ানমারে ১২ থেকে ২৪ জন রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এছাড়াও আহত হয়েছে প্রায় ১০০ জন।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান