ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন দিতে প্রণোদনার বকেয়া টাকা ছাড় চান পোশাক রপ্তানিকারকরা
রপ্তানির বিপরীতে সরকারের কাছে ক্যাশ ইনসেনটিভ বা নগদ প্রণোদনার প্রায় চার হাজার কোটি টাকা পাওনা হলেও, ওই টাকা ছাড় না হওয়ায় ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তৈরি পোশাক রপ্তানি কারখানার মালিকরা। আর এমনটি ঘটলে শ্রমিক অসন্তোষের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলেও ধারণা করছেন তারা।
রোববার (৩১ মার্চ) পোশাক খাতের দুই সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) নেতারা ইস্যুটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দ্রুত এই টাকা ছাড় করতে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, সভায় বিজিএমইএর নব নির্বাচিত সভাপতি এসএম মান্নান কচি, পরিচালক রাজীব চৌধুরী এবং বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে মোহাম্মদ হাতেম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "রপ্তানিকারকরা সরকারের কাছে ক্যাশ ইনসেনটিভের ছয় হাজার কোটি টাকা প্রাপ্য ছিল। এরমধ্যে গত বৃহস্পতিবার দুই হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। আমরা ঈদের আগে বাকি চার হাজার কোটি টাকা ছাড় করার অনুরোধ জানিয়েছি।"
"এখনই বিভিন্ন কারখানায় টুকটাক ঝামেলা হচ্ছে। ঈদের আগে টাকা না পেলে অনেক কারখানার পক্ষে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা কঠিন হবে। সেক্ষেত্রে শ্রমিক অসন্তোষও হতে পারে," যোগ করেন তিনি।
অবশ্য বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ঈদের আগে এই টাকা পাওয়া যাবে কিনা, মূখ্য সচিবের কাছ থেকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি।
বিজিএমইএ'র পরিচালক রাজীভ চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "আমরা তাকে আমাদের বিদ্যমান সমস্যার কথা জানিয়েছি। তিনি এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।"
গত সপ্তাহে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা হতে পারে— এমন কারখানাগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। ওই তালিকায় ৪১৬টি কারখানার নাম উঠে আসে।
তালিকা অনুযায়ী, সেখানে বিজিএমইএর ১৭১ সদস্য কারখানা, বিকেএমইএর ৭১ এবং বস্ত্র খাতের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশনের ২৯টি সদস্য কারখানা রয়েছে। বাকি কারখানাগুলো অন্যান্য খাতের।
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেতন-বোনাস নিয়ে কিছু কারখানায় শ্রম অসন্তোষের খবরও পাওয়া গেছে।
রাজীব চৌধুরী বলেন, "আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন, ৪১৬টি কারখানা বিপদের মধ্যে (বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে) আছে। ঈদের আগে এই টাকা না পেলে কারখানাগুলোতে অসন্তোষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।"
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মূলত টাকার সংকটের কারণে তাদের এই টাকা ছাড় করা যাচ্ছে না।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, "আরএমজি খাত বা রপ্তানিকারক নন, অন্যান্য খাতেরও টাকা পেন্ডিং আছে। বিদ্যুৎ খাতের ৩০,০০০ কোটি টাকা বকেয়া আছে। এজন্য আমাদের টাকা রিলিজ করার ক্ষেত্রে রেশনিং করতে হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "আমাদের যদি সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে নির্দেশনা আসে, তাহলে ওই অনুযায়ী আমরা তা বাস্তবায়ন করবো।"
বর্তমানে দেশে রপ্তানিমুখী সক্রিয় পোশাক কারখানার সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। গত ডিসেম্বর থেকে এ খাতে নতুন মজুরি বাস্তবায়ন হয়েছে। অন্যদিকে, পোশাক মালিকদের দাবি, নতুন কস্ট অব প্রোডাকশন (উৎপাদন ব্যয়) অনুযায়ী, বেশিরভাগ বিদেশি ক্রেতা পোশাকের দর বাড়াননি।