রুমায় সোনালী ব্যাংক লুট, ম্যানেজার অপহরণ: তদন্তে সিআইডি
বান্দরবানের রুমা শাখার সোনালী ব্যাংকে লুটপাট ও ব্যাংক ম্যানেজারকে আপহরণের পর আজ (৩ এপ্রিল) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার ও সোনালী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঘটনার তদন্তে ক্রাইম সিন ইনভেস্টিগেশন টিম ঘটনাস্থলের পথে আছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক।
বুধবার সকালে ব্যাংক লুটের ঘটনার খবর পেয়ে পরিদর্শনে যান তারা। আগের দিন মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাতে রুমা শাখার সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনা ঘটে।
এ সময় রুমা শাখার ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকেও অপহরণ করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। এখনও পর্যন্ত তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। লুটপাট ও অপহরণের এ ঘটনায় পাহাড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় ও সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার সকাল ৯টার দিকে রুমা শাখার সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা প্রশাসনের লাগোয়া দোতলা সোনালী ব্যাংক ভবনের প্রতিটি কক্ষে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাগজপত্র। টেবিলের উপর থাকা কাচগুলো ভাঙ্গা। কম্পিউটারগুলো ভাঙ্গাচোরা হয়ে এলোমেলো পড়ে আছে। বিভিন্ন ইলেকট্রিক্যাল পয়েন্টগুলোও ভাঙ্গা হয়েছে। এমনকি, রুমের দরজা জানালাও ভাঙ্গা অবস্থায় দেখা যায়।
পর্যবেক্ষণ শেষে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, "সার্বিকভাবে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ হচ্ছে। এখানে ভল্টের বিষয় আছে। কিছু প্রসিডিউয়াল বিষয় আছে। সিআইডির কিছু বিষয়ও থাকতে পারে। ক্রাইম সিনের বিষয়গুলো পুলিশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে।"
"সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিআরবি জব্দ করা আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন" যোগ করেন তিনি।
ব্যাংক লুটের ঘটনায় কাদেরকে সন্দেহ করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, "বিভিন্ন মাধ্যমে এখানে সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফের নাম উঠে আসছে। কিন্তু তদন্ত ব্যতীত স্পষ্টভাবে বলা কঠিন। তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক তথ্য পাওয়ার পর এ বিষয়ে অবহিত করা হবে।"
এর আগে, এ ঘটনায় রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, "রাত সাড়ে ৮টায় তারাবি নামাজের সময় শতাধিক কেএনএফ (কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) সদস্য চতুর্দিকে ঘেরাও করে সবার মোবাইল কেড়ে নেয়। পুলিশ ও আনসার সদস্যের অস্ত্র লুট করে তারা। সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার মো. নেজাম উদ্দিনকেও তারা অপহরণ করে নিয়ে যায়।"
ব্যাংক লুটের ঘটনায় পুলিশ ও আনসারের অস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, ঘটনার সময় পুলিশের গার্ডদের কাছে ১০টি অস্ত্র ছিল, তা লুট হয়েছে। ৩৮০ রাউন্ড গুলি লুট হয়েছে। এছাড়া ৮টি চাইনিজ রাইফেল, ২টি এসএমজি, আনসারের ৪টি শর্টগান, ৩৪ রাউন্ড গুলি এসবই লুট করে নিয়ে গেছে।
"কে বা কারা করেছে এটা তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে কারা এ ঘটনায় জড়িত। ক্রাইম সিনের দল আসছে। তারা ফিঙ্গার প্রিন্ট নেবে। ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় যে বা যারা জড়িত থাকুক না কেন, কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে," যোগ করেন তিনি।
পরিদর্শনের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর বিভাগীয় কার্যালয়ে জেনারেল ম্যানেজার মো. মুসা খান ও বান্দরবান শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ওসমান গণি।
এদিকে ব্যাংকের ক্যাশিয়ার উথোয়াইচিং মারমা সাংকাদিকদের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে বাইরে একটি দোকানে চা খেতে যান তিনি। এ সময় হঠাৎ করে তিনজন সশস্ত্র ব্যক্তি তাকে ঘিরে ফেলে। তাকে বন্দুক তাক করে পকেটে তল্লাশি করে চাবি কেড়ে নিয়ে যায়। পকেটে থাকা ১,২০০ টাকাও নিয়ে যায় তারা। এ সময় শতাধিক ব্যক্তিকে ব্যাংকটিকে ঘিরে রাখতে দেখা যায়। ভেতরে সবকিছু তছনছ করে ফেলে তারা।
"ভল্ট খুলতে গেলে দুইজনের চাবি লাগে- ক্যাশিয়ার এবং ম্যানেজাররের। আমার মনে হয়, আমার কাছে থাকা চাবি দিয়ে তারা ভল্ট খোলার চেষ্টা করেছে। ম্যানেজার থেকে চাবি না পেয়ে তাকে হয়ত তুলে নিয়ে গেছে। সামনে পাহাড়িদের বর্ষবরণ উৎসব এবং ঈদের জন্য বেতনভাতা দেওয়ার জন্য মোট এক কোটি ৫৯ লাখ টাকা ছিল," যোগ করেন তিনি।
যদিও এর আগে, ঠিক কতো টাকা এবং কয়টি অস্ত্র লুট হয়েছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে পারেননি জেলাপ্রশাসক। তদন্ত সাপেক্ষে পরে বিস্তারিত জানা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বর্তমানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ব্যাংকটি তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।