বকেয়া পাওনার দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধের প্রতিশ্রুতি পোশাক মালিকদের
পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ী নেতা ও শিল্প পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঈদুল ফিতরের ছুটির আগেই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। যদিও "১০০টির বেশি কারখানা এখনও তাদের শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারির বেতনই পরিশোধ করতে পারেনি" বলে এই শিল্পের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানিয়েছে।
এদিকে মার্চ মাসের বেতন পরিশোধের সময় এরমধ্যেই শুরু হয়েছে, আর শ্রম আইন অনুসারে প্রথম সাত কার্যদিবসের মধ্যেই শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে হবে মালিকপক্ষকে।
পোশাক শিল্পের নেতারা বলছেন, সরকারিভাবে ১০ তারিখ থেকে শুরু হবে ঈদের ছুটি, এটা মাথায় রেখে ছুটির আগেই তাঁরা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তবে মহাসড়কে যানজট ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে অনেক পোশাক কারখানায় উৎসবকালীন এই ছুটি শুরু হবে ৭ এপ্রিল থেকে।
শিল্প পুলিশের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঈদুল ফিতরের আগে ২৭১টি পোশাক ও টেক্সটাইল কারখানা তাদের শ্রমিকদের বেতন- বোনাস পরিশোধে সমস্যায় পড়তে পারে।
এরমধ্যে ১৭১টি কারখানা পোশাক শিল্পের শীর্ষ সংগঠন- বিজিএমইএ'র সদস্য। ৭১টি কারখানা নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন- বিকেএমইএ'র সদস্য, আর ২৯টি সদস্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-র।
গত সপ্তাহ থেকে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের বেশকিছু কারখানার শ্রমিকরা বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করছে।
নাসির বলেন, বিজিএমইএ এটি সমাধানের চেষ্টা করছে। যেসব কারখানায় ঈদের আগের শ্রমিক অসন্তোষের ঝুঁকি রয়েছে, বিশেষত তাদের বিষয়ে মনোযোগ দিচ্ছে। সমাধানের উপায় পেতে কারখানা মালিক, তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসহ বিভিন্ন পক্ষের সাথে কাজ করছেন বিজিএমইএ'র কর্মকর্তারা।
বিকেএমইএ'র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ'র সদস্য – ১০০টির বেশি কারখানা – তাদের শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন দিতে পারনি।
তিনি আরো বলেন, শুধু বেতন বাবদই পোশাক শিল্পকে শ্রমিকদের ৫ হাজার ৬০০ টাকা দিতে হয়। অথচ নগদ সহায়তা হিসেবে সরকার মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে। কিন্তু, রপ্তানিকারকরা মোট ৬ হাজার কোটি টাকার নগদ সহায়তা চেয়েছিলেন।
"সরকার যদি আরো অন্তত ২ হাজার কোটি টাকা ছাড় করে, তাহলে কারখানা মালিকরা ঈদের বোনাস এবং মার্চ মাসের বেতন দিতে পারবে"- বলেন হাতেম।
নাহলে আরেকটি বিকল্প হতে পারে ব্যাংকঋণ, তবে ব্যাংক এ ধরনের ঋণ অনুমোদন নাও দিতে পারে। কারণ অধিকাংশ কারখানা মালিকের ইতোমধ্যেই ব্যাংকের কাছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ দায় রয়েছে।
বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
ঈদের আগে যখন বেতন ও বোনাস দেওয়া কথা, তার আগে কোনো প্রকার পূর্বনোটিশ ছাড়াই ৩ এপ্রিল থেকে ধামরাইয়ের সোমবাগে অবস্থিত একটি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। একথা জানতে পেরে বিক্ষোভ শুরু করেন প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকরা।
বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের মতে, এই কারখানায় ২ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন।
গতকাল সকালেও অব্যাহত ছিল এই বিক্ষোভ, পরে কারখানার মালিকপক্ষ, পুলিশ ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসেন। আলোচনার প্রেক্ষিতে, মালিকপক্ষ আগামী ৮ এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেয়।
শিল্প পুলিশ সুত্র জানায়, সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের অন্তত ১০০টি কারখানা রয়েছে যারা হয়তো শ্রমিকদের বেতন-বোনাস কোনটিই পরিশোধ করতে পারবে না। এরমধ্যে ৫০টি কারখানা রয়েছে যেগুলোতে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা দুই সহস্রাধিক। তবে এখন পর্যন্ত সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই এলাকায় বিচ্ছিন্ন দু'একটি ঘটনা ব্যতিত উল্লেখযোগ্য কোন শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেনি।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে তিনি বলেন, "বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। অনেকগুলো কারখানার সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। প্রতিদিনই কিছু কিছু কারখানার সমস্যা সমাধান করছি। সবগুলো যে পারছি তা বলবো না, দু'একটায় হয়তো সমস্যা থেকে যাচ্ছে।"
"তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা মালিকপক্ষ, শ্রমিক প্রতিনিধি, শ্রমিক নেতা সবার সাথে ইতোমধ্যে মিটিংও করেছি"- যোগ করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জের ৯০ ভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস হয়নি: দাবি শ্রমিক নেতাদের
গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে অন্তত ১৫ বার বেতন-ভাতা সংক্রান্ত শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিক নেতাদের মতে, দুই থেকে তিন মাসের বেতন পরিশোধ না করার রেকর্ডও রয়েছে বহু কারখানায়।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর জেলা সদস্য সচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব টিবিএসকে বলেন, "নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার টাগারপাড় এলাকার ফাইন নিটের শ্রমিকদের নামমাত্র বোনাস ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এনিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।"
শিল্প পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আজাদ মিয়া বলেন, "আমরা গোয়েন্দা পুলিশের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছি। কোন কোন কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেনি, সেগুলোর তালিকা করে ঈদের আগেই বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য আমরা নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছি।"