গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে ‘সেনা প্রত্যাহার’ করেছে ইসরায়েল
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চলমান আগ্রাসনের ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পর খান ইউনিসসহ গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে স্থল সেনা প্রত্যাহার করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী রবিবার (৭ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "আজ রবিবার, ৭ এপ্রিল, আইডিএফ-এর ৯৮তম কমান্ডো ডিভিশন খান ইউনিসে মিশন শেষ করেছে। বিশ্রাম নিয়ে ভবিষ্যতের অভিযানের প্রস্তুতি নিতে ডিভিশনটি গাজা উপত্যকা ছেড়ে গেছে।"
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ১৬২ তম ডিভিশন এবং নাহাল ব্রিগেডের নেতৃত্বে একটি বাহিনী গাজায় এখনো সক্রিয় আছে। সুনির্দিষ্ট বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক অপারেশন পরিচালনা করার পাশাপাশি তারা আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) এর সক্ষমতা বজায় রাখবে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, একটি ব্রিগেড এখনো গাজায় অবস্থান করছে। কিন্তু সে সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য সামরিক বাহিনী দেয়নি। একটি ইসরায়েলি ব্রিগেড সাধারণত কয়েক হাজার সৈন্য দ্বারা গঠিত হয়।
আল জাজিরার সাংবাদিক ইমরান খান বলেছেন, সেনা প্রত্যাহার নিয়ে ইসরায়েল যে দাবি করে আসছে সেটি যুদ্ধের একটি 'নতুন কৌশল' হতে পারে।
ইসরায়েল অধিষ্ঠিত পূর্ব জেরুজালেম থেকে প্রতিবেদন করার সময় তিনি বলেন, "আমাদের বলা হয়েছে, এ নতুন কৌশলটি কার্যকর করতে তাদের অনেক সৈন্যের প্রয়োজন নেই। কিন্তু আপনি যদি ইসরায়েলি সামরিক বিশ্লেষকদের কথা শোনেন, তাহলে আপনি বিষয়গুলোকে নিয়ে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে পারবেন। আমরা শুনেছি, রাফাহতে স্থল আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে একটি বাহিনীকে পুনরায় মোতায়েন করা হতে পারে।"
হোয়াইট হাউজ আংশিক সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে বলেছে, এটি সম্ভবত সৈন্যদের 'বিশ্রাম দেওয়া ও পুনরায় উজ্জীবিত করার' একটি সুযোগ। হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবির মতে, সৈন্যরা চার মাস ধরে যুদ্ধ করায় তারা ক্লান্ত এবং তাদের উজ্জীবিত করা প্রয়োজন।
গাজায় হামলা চালানোর ছয় মাস পরে সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। কিন্তু ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এ সময়ের মধ্যে গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে যেটিকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত 'গণহত্যার বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা' হিসেবে অভিহিত করেছে।
এদিকে মিশর গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং হামাসের হাতে বন্দিদের মুক্তির লক্ষ্যে একটি নতুন আলোচনা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আগে হামাস যে দাবিগুলো করেছিল তার মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল, গাজা থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০-র বেশি ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় ২৫০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে বন্দি করে হামাস। সেদিনই পাল্টা জবাব দিতে গাজায় লাগাতার হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েল। মিশরের সীমান্তবর্তী রাফাহ শহরটি বর্তমানে এক মিলিয়নের বেশি ফিলিস্তিনিদের জন্য শেষ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৩৩ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী এবং শিশু। গাজায় ভয়াবহ খাদ্য সংকটের জন্য দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়