রাষ্ট্রপতি প্রাসাদের ১৯টি বিড়ালের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিল মেক্সিকো সরকার!
তারা প্রাসাদের বাগানে ঘুরে বেড়ায়, পায়রা দেখলে তাড়া করে। আবার টেলিভিশনে প্রচারিত প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় ক্যামেরার পেছনেও দেখা যায় তাদের।
কখনও দেখা যায় তাদের মধ্যে কেউ কেউ দরজায় দাঁড়িয়ে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে, আবার কেউবা স্টাফদের কাছ থেকে পাওয়া আইসক্রিম চাটছে।
বলছিলাম, মেক্সিকোর রাষ্ট্রপ্রতি ভবনে থাকা বিড়ালগুলোর কথা। রাজকীয় প্রাসাদের ভেতর এরকম ১৯টি বিড়ালকে সারাক্ষণ খেলতে দেখা যাবে। তবে প্রাসাদের বিড়ালগুলো বলা যায় একরকম ইতিহাসই তৈরি করেছে এবার।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদরের সরকার সম্প্রতি এই বিড়ালগুলোকে 'জীবন্ত জাতীয় সম্পদ' হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
'স্থায়ী জাতীয় সম্পদ' ধারণাটি সাধারণত বিল্ডিং এবং আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও এটি বিড়ালদের ওপর প্রয়োগ করায় লোপেজ ওব্রাদরের সরকারকে এখন সারাজীবন বিড়ালগুলোকে খাবার ও ভরণপোষণ দিতে হবে এবং তাদের যত্ন নিতে হবে। এমনকি অক্টোবরের পর নতুন সরকার আসলেও মানা লাগবে এ বিধান।
ন্যাশনাল প্যালেস অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ কনজারভেন্সির জেনারেল ডিরেক্টর আদ্রিয়ানা কাস্তিলো রোমান বলেন, 'বিড়াল এখন এই রাষ্ট্রীয় প্রাসাদের প্রতীক। পৃথিবীকে যেমন বিড়াল ছাড়া কল্পনা করা যায় না, ঠিক তেমন এ রাজকীয় প্রাসাদও। তারা এ প্রাসাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, তাই তাদের যত্ন নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।'
মেক্সিকো সিটির প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত প্রেসিডেন্ট প্রাসাদটি দীর্ঘদিন ধরে মেক্সিকোর নির্বাহী শাখার আসন ছিল। বর্তমানে, এটি রাষ্ট্রপতি লোপেজ ওব্রাদোরের বাসভবন এবং আদিবাসী সম্রাট মোকতেজুমার প্রাক্তন প্রাসাদের মাঠে দাঁড়িয়ে আছে।
মজার বিষয় হল, ঐতিহাসিকভাবে আদিবাসী সম্রাট মোকটেজুমার সময়ে, মেক্সিকোতে অ্যাজটেক সংস্কৃতি জোলোইটজকুইনটেল নামে লোমহীন কুকুরকে শ্রদ্ধা করত। এই কুকুরগুলোকে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হত এবং এমনকি তাদের মালিকদের সাথে সমাধিস্থ করা হয়েছিল।
পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসার সেই ধারা এখনও আছে, শুধু পার্থক্য হলো রাষ্ট্রপতি প্রাসাদে এখন কুকুরের পরিবর্তে বাস করে বিড়ালরা।
বোয়ি, বেলোফ, নুবে, কোকো, ইয়েমা, অলিন, বালাম এবং আরও অনেক বিড়াল রয়েছে যারা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে প্রাসাদে লোপেজ ওব্রাডরের সাথে বাস করছে।
লোপেজ নিজেই মন্তব্য করেছেন যে বিড়ালরা প্রাসাদটি এক প্রকার 'শাসন' করে এবং সরকারি অনুষ্ঠানের সময় প্রায়শই তাকে আগ বাড়িয়ে হাঁটে।
কিছু বিড়ালের নাম আবার বিভিন্ন শিল্পীদের নামের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রাখা হয়েছে, যেমন—কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ডেভিড বোয়ির নামে 'বোয়ি' নামে একটি কমলা ট্যাবি বিড়াল আছে। ডেভিড বোয়ি ১৯৯৭ সালে মেক্সিকান চিত্রশিল্পী দিয়েগো রিভেরার বিখ্যাত মুরালটি দেখতে প্রাসাদটি পরিদর্শন করেছিলেন।
এদিকে, অন্যদের নামকরণ করা হয়েছে এই অঞ্চলের প্রাচীন অ্যাজটেক ভাষার স্থানীয় শব্দের নামানুসারে, যেমন– একটির নাম হলো 'অলিন', যার অর্থ 'আন্দোলন'।
প্রাসাদের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ৫০ বছর আগে বাগানের ঘন ঝোপঝাড়ের মধ্যে বাস করা বন্য বিড়ালদের কথা তাদের মনে আছে। তবে তারা কখন প্রাসাদে প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল বা কীভাবে তারা ভবনে উঠেছিল তা স্পষ্ট নয়। ১৯টি বিড়াল প্রাসাদে বাস করলেও আরও অনেকে আসা-যাওয়া করে এবং তারা সন্দেহ করছেন যে বিড়ালগুলো রাতের বেলা প্রাসাদের গেটের একটি ছোট ফাটলের নিচ দিয়ে প্রাসাদের বাইরে যাওয়া আসা করে।
জিউস নামের একটি বিড়াল, যেটি কিছুদিন আগে মারা গিয়েছে, গত জুলাই মাসে প্রেসিডেন্টের প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় সাংবাদিকদের সামনে হাঁটা-চলা করে বেশ পরিচিত হয়ে উঠে। ধূসর রংয়ের বিড়ালটি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, পরে অবশ্য প্রাসাদের কর্মচারীরা বেচারাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন।
কাস্তিলো বলেন, 'সরকারকে সাংবাদিকদের অনুরোধ করতে হয়েছিল তারা যাতে জিউসকে কোনও খাবার না দেন। কারণ সে প্রাসাদের আশেপাশের বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে খাবারের জন্য বায়না ধরত এবং এভাবে ধীরে ধীরে মোটা হয়ে যাচ্ছিল সে।'
কাস্তিলো আরও জানান, ২০১৮ সালে লোপেজ যখন প্রথম দায়িত্ব নেন তখন প্রাসাদের কর্মচারীরা পোষা প্রাণীদের লুকিয়ে খাওয়াত।
কাস্তিলো বলেন, 'কিছু কর্মচারী ছিলেন যারা বিড়ালের জন্য তাদের বাড়ি থেকে উচ্ছিষ্ট খাবার নিয়ে আসতেন এবং মাঝে মাঝে টিনজাত খাবার বা ভাত এবং স্যুপ নিয়ে আসতেন।'
তারা বিড়ালের জন্য বাগানে ছোট ছোট ঘর এবং খাওয়ানোর জায়গাও তৈরি করেছিল। এমনকি আরিয়াস নামের একজনকে পুরো সময় বিড়ালদের যত্ন নেওয়ার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
'জীবন্ত জাতীয় সম্পদ' উপাধি পাওয়ার পর বিড়ালদের কাছে অনুভূতি জানতে চাওয়া হলে বোভি, কোকো এবং অলিন একপ্রকার নীরবই ছিল। কোকো তার লেজ নাড়াল আর অলিন প্রাসাদের স্তম্ভের নিচে গা এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
দেখতে ধূসর বিড়াল 'নুব', যার নাম স্প্যানিশ শব্দ 'মেঘ' এর পরে নামকরণ করা হয়েছে, শুধু একটি 'মিউ' দিয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন