ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার জেরে ফ্রান্স, ভারত, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ সতর্কতা জারি
যুদ্ধের শঙ্কা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে ফ্রান্স, ভারত, রাশিয়া, পোল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো তাদের নাগরিকদের ইসরায়েল, অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল এবং আশেপাশের অঞ্চলে ভ্রমণের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানীতে হামলায় দুই জেনারেলসহ ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের সাত সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে ইরান। এর ফলে বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলার কথা স্বীকার করেনি। তবে এ হামলার পেছনে ইসরায়েলের হাত রয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার তাদের নাগরিকদের ইরান, লেবানন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন ভূখণ্ড ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, ইরান ভিত্তিক কূটনীতিকদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনেরা ফ্রান্সে ফিরে আসবেন এবং ফরাসি সরকারি কর্মচারীদের কোনও সরকারি কাজের জন্য উল্লিখিত দেশ ও অঞ্চলগুলোতে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইসরায়েলি ভূখণ্ডে সম্ভাব্য ইরানি হামলার বিষয়ে উদ্বেগের কারণে যুক্তরাজ্যও তার নাগরিকদের অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণ ছাড়া ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে ভ্রমণ সীমাবদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে। ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস এক আপডেটে পূর্ব জেরুজালেম এবং জেরুজালেম ও তেল আবিবের মধ্যবর্তী রুট ১ বাদ দিয়ে উত্তর ইসরায়েল, গাজা উপত্যকা, গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে 'সব ধরনের ভ্রমণের' বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে।
ইসরায়েল, লেবানন ও ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা ঝুঁকির ওপর জোর দিয়ে রাশিয়া তার নাগরিকদের ওইসব অঞ্চলে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতপূর্ণ এলাকা এবং লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যকার 'ব্লু লাইন' এলাকার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল রয়ে গেছে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও লেবানন ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে।
ভারতের বিবৃতিতে ইরান ও ইসরায়েলের কথা উল্লেখ করে 'এই অঞ্চলের বিদ্যমান পরিস্থিতির' পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ভারতীয়দের এই দুই দেশে না যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
নয়াদিল্লিতে বিবৃতিতে জানিয়েছে, দুই দেশে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং তাদের চলাফেরা সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
এদিকে জার্মানি তাদের নাগরিকদের সুনির্দিষ্টভাবে ইরান ছাড়ার জন্য সতর্ক করে দিয়েছে। জার্মান বিমানসংস্থা লুফথানসা এয়ারলাইন্স বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তেহরানগামী এবং তেহরান থেকে তার ফ্লাইট স্থগিতের মেয়াদ বাড়িয়েছে এবং এই সময়ের মধ্যে তারা ইরানের আকাশসীমা ব্যবহার করবে না।
'বাস্তব' ও 'কার্যকর' হুমকি: যুক্তরাষ্ট্র
বৃহত্তর তেল আবিব, জেরুজালেম ও বেরশেবা এলাকার বাইরে ইসরায়েলে তাদের কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ইসরায়েলের ওপর ইরানের আসন্ন হামলা একটি 'বাস্তব' ও 'কার্যকর' হুমকি।
শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, 'ইসরায়েলকে রক্ষা করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইসরায়েলকে আমরা সমর্থন দিয়ে যাব। আমরা ইসরায়েলকে রক্ষা করতে সহযোগিতা করব; ইরান সফল হবে না।'
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক শীর্ষ মার্কিন কমান্ডার জেনারেল এরিক কুরিলাও নিরাপত্তা হুমকি নিয়ে দেশটির সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ইসরায়েলে রয়েছেন। পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার বৃহস্পতিবার বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর কারণে তার সফর পূর্বনির্ধারিত তারিখ থেকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার কুরিলা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের সঙ্গে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা নিয়ে আলোচনার পর গ্যালান্ট বলেন, সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল 'কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে'।
'আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে একসাথে কাজ করছি। স্থল ও আকাশে নিজেদের রক্ষা করতে প্রস্তুত আমরা এবং আমরা জানি কীভাবে এর জবাব দিতে হবে, যোগ করেন তিনি।
বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, শুক্র বা শনিবারের মধ্যেই ইরান হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল।
পূর্ব জেরুজালেম থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হামদাহ সালহুত বলেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে যে, তারা আক্রমণাত্মক ও আত্মরক্ষামূলক সব রকম ভাবে নিজেদের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
'কয়েক সপ্তাহ আগে, ইসরায়েলিরা তাদের সতর্কতার মাত্রা বাড়িয়েছে, রিজার্ভ সৈন্যদের ডেকে এনেছে এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করেছে, জানান হামদাহ।
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল বোমাবর্ষণ করে স্থলবাহিনী পাঠিয়ে অন্তত ৩৩ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা ও ৭৬ হাজারের বেশি আহত করেছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলায় সেখানে এক হাজার ১০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন