ইরানের ড্রোন ভূপাতিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রও
ইরানের ছোঁড়া ইসরায়েলগামী ক্ষেপনাস্ত্র ও ড্রোনগুলো ঠেকিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েল ও অন্যান্য দেশ কয়েক ডজন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিহত করেছে, যার বেশিরভাগই ইসরায়েলি আকাশসীমার বাইরে। খবর বিবিসি'র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, 'আমরা ইসরায়েলকে প্রায় সব ড্রোন ধ্বংস করতে সহায়তা করেছি।'
বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএসকে দুই কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন বাহিনী ইরানের বেশ কয়েকটি' ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে, কিন্তু কোথায় এবং কীভাবে সেগুলো বাধা দেওয়া হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলেননি।
এদিকে যুক্তরাজ্য বলেছে, তাদের রয়্যাল এয়ার ফোর্স (আরএএফ) প্রয়োজন অনুযায়ী' ড্রোনকে বাধা দেবে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, 'আমাদের বিদ্যমান মিশন সীমার মধ্যে যে কোনো আকাশপথে হামলা ঠেকাতে ইরাক ও সিরিয়ায় আরএএফের জঙ্গিবিমান মোতায়েন করা হয়েছে।'
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক উভয়ই ইরানের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং ইসরায়েলের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ঋষি সুনাক এক বিবৃতিতে ইরানের হামলার নিন্দা জানিয়ে এটিকে 'বেপরোয়া' বলে অভিহিত করেছেন এবং যোগ করেছেন যে এই হামলা উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলার এবং এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার ঝুঁকি তৈরি করেছে।
এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে অ্যারো অ্যারিয়াল ডিফেন্স সিস্টেম (আকাশ প্রতিরক্ষা পদ্ধতি) ব্যবহার করে এবং ওই অঞ্চলে কৌশলগত সহযোগীদের সাথে মিলে ইসরায়েলে ভূখণ্ডে আসার আগে সেগুলো ভূপাতিত করা হয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, 'ইরানের কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আঘাত হেনেছে, এতে একটি সামরিক ঘাঁটির সামান্য ক্ষতি হয়েছে তবে কেউ হতাহত হয়নি।'
ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় আরাদ অঞ্চলে ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে সাত বছর বয়সী এক বেদুইন মেয়ে আহত হয়েছে।
অ্যারো অ্যারিয়াল ডিফেন্স সিস্টেম হলো অতি উচ্চতায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে পরাভূত করার একটি পদ্ধতি। ইসরায়েলে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবেলায় এটি ব্যবহার করে।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে সন্দেহজনক ইসরায়েলি বোমা হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের সাত কর্মকর্তা নিহত হন। তাদের মধ্যে দুজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডারও ছিলেন। ইসরায়েল ওই হামলার দায় স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি। এ ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে আসছিল ইরান।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ইরান ইসরায়েলের দিকে প্রায় ২০০ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। অধিকাংশই আইডিএফ ও তার সহযোগীরা মিলে রুখে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতির কারণে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে তার নিজ রাজ্য ডেলাওয়্যারে পরিকল্পিত সফর সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হন। তড়িঘড়ি করে হোয়াইট হাউসে ফিরে জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। হোয়াইট হাউসের একটি ছবিতে তাকে সিচুয়েশন রুমে তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের মতো শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা গেছে।
হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেছেন, বাইডেন ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অন্যান্য অংশীদার ও মিত্রদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
তিনি বলেন, ইসরাইলের নিরাপত্তার প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের জনগণের পাশে দাঁড়াবে এবং ইরানের এসব হুমকির বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরক্ষায় সমর্থন দেবে।
হামলার পর জর্ডান, ইরাক, মিশর, লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ইরানের ড্রোন উড্ডয়নের খবর প্রকাশের কিছুক্ষণ পরই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তার দেশের 'প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থাসমূহ' মোতায়েন করা হয়েছে।
'আমরা রক্ষণাত্মক ও আক্রমণাত্মক যেকোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েল রাষ্ট্র শক্তিশালী রাষ্ট্র। আইডিএফ শক্তিশালী বাহিনী। ইসরায়েলের জনগণ শক্তিশালী। 'যুক্তরাষ্ট্রসহ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও অন্যান্য অনেক দেশ ইসরায়েলের পাশে থাকার জন্য আমার ধন্যবাদ জানাই,' বলেন তিনি।
হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ওয়ার ক্যাবিনেট ও সিকিউরটি ক্যাবিনেটের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন