মুক্তির পর সোমালিয়া থেকে দুবাইয়ের হারমিয়া বন্দরের পথে এমভি আবদুল্লাহ
মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়ার পর ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরের পথে রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জাহাজটি আল হারমিয়া বন্দরে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে জাহাজটির মালিক পক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ।
গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "মুক্তিপণ পেয়ে জলদস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে গেছে। বর্তমানে এমভি আবদুল্লাহ আল হারমিয়া বন্দরের পথে রয়েছে। সেখানে পৌঁছাতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগবে।"
তবে সেখান থেকে মুক্ত নাবিকরা কীভাবে দেশে পৌঁছাবেন সেটি বন্দরে পৌঁছানোর পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে এ বিষয়ে আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেন জাহাজের মালিকপক্ষের এই কর্মকর্তা।
গত ১২ মার্চ ভারত মহাসগর থেকে জিম্মি হওয়ার ৩৩ দিন পর মুক্তিপণ পরিশোধের মাধ্যমে মুক্ত হয়েছে এমভি আবদুল্লাহ।
সোমালিয়ার স্থানীয় সময় শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৮ মিনিটে জাহাজটি থেকে দস্যুরা নেমে যায়। এ সময় এমভি আবদুল্লাহর দুই পাশে দুটি যুদ্ধজাহাজ পাহারা দিয়ে সোমালিয়া উপকূল ত্যাগ করতে থাকে।
মুক্তিপণ নিয়ে জলদস্যুদের সঙ্গে সমঝোতার পর ওয়াটার প্রুফ ব্যাগ ভর্তি ডলারের ব্যাগ ছোট আকারের বিমান থেকে সাগরে নিক্ষেপ করা হয়।
মুক্তিপণের ডলার পরিশোধ করা হচ্ছে এমন একটি ভিডিওতে দেখা যায়, জাহাজের নাবিকরা জাহাজের ডেকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় ছোট উড়োজাহাজ থেকে জাহাজের পাশে ডলারভর্তি ব্যাগ ফেলা হয়। এরপর আশপাশে থাকা কয়েকটি স্পিডবোট সেগুলো তুলে নেয়।
তবে কত ডলার মুক্তিপণ পরিশোধ করা হয়েছে, তা নিশ্চিত করেনি কবির গ্রুপ।
মুক্তিপণের অর্থ পরিশোধের সময় জিম্মি জাহাজটির অদূরে ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ।
নাবিকদের বরাত দিয়ে তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, মুক্তিপণ পরিশোধের সময় জাহাজের ডেকে থাকা নাবিকদের পেছন থেকে অস্ত্র তাক করে ছিল দস্যুরা। উড়োজাহাজ থেকে নাবিকদের প্রতি ইশারায় হাত তোলার ইঙ্গিত দেওয়া হয়। এরপর সব নাবিক হাত তোলেন।
জিম্মি নাবিক মোশারফ হোসেন শাকিলের ভাই আবু বকর সিদ্দিক টিবিএসকে বলেন, "রবিবার ভোর রাত চারটার দিকে কবির গ্রুপ থেকে আমাদের জানানো হয় আমার ভাইসহ সকল নাবিক মুক্তি পেয়েছে। এই একমাস আমরা চরম অস্থিরতার মধ্যে ছিলাম। আমাদের ঈদও কেটেছে চরম উৎকণ্ঠায়।"
তবে দ্রুততম সময়ে নাবিকদের উদ্ধার করায় কবির গ্রুপ এবং সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "জিম্মি নাবিকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা নিঃসন্দেহে সবার মধ্যে স্বস্তি এনে দিয়েছে।"
গত ১২ মার্চ বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাওয়ার সময় ২৩ নাবিকসহ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে।
এর আগে, ২০১০ সালে ছিনতাই হওয়া একই কোম্পানির জাহাজ এমভি জাহান মণি ১০০ দিনের মাথায় ছেড়ে দেয় দস্যুরা। ওই জাহাজের নাবিক মোহাম্মদ ইদ্রিস টিবিএসকে জানিয়েছিলেন, সে সময় একইভাবে মুক্তিপণের অর্থ সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার পরই তারা ছাড়া পেয়েছিলেন।