মাঠে ফিরে চ্যালেঞ্জের মুখে ক্রিকেটাররা
করোনাভাইরাসের প্রকোপ এখনও থামেনি। প্রতিদিনই কয়েক হাজার করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হচ্ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। তবে স্বাভাবিক অবস্থা না ফিরলেও মাঠের অনুশীলনে ফিরেছেন বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যক্তিগত অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
ক্রিকেটারদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছে বিসিবি। দেশের চারটি ভেন্যুতে রোববার থেকে ৯ জন ক্রিকেটারের অনুশীলন করার কথা ছিল। তবে মেহেদী হাসান মিরাজ তালিকায় যুক্ত হওয়ায় সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে দশে। যদিও প্রথমদিন ৮ জন ক্রিকেটার ফিটনেস ট্রেনিং, ব্যাটিং করেছেন।
মিরপুর স্টেডিয়ামে রানিং ও ব্যাটিং করেছেন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুন। শুধু রানিং করেছেন পেসার শফিউল ইসলাম। ঢাকার বাইরের ক্রিকেটারদের শুধু ফিটনেস ট্রেনিং করতে বলায় খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে রানিং করেছেন দুই স্পিনার মাহেদী হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও নুরুল হাসান সোহান।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্টেডিয়ামে রানিং করে প্রথম দিনের অনুশীলন সেরেছেন পেসার খালেদ আহমেদ ও স্পিনার নাসুম আহমেদ। চট্টগ্রামে স্পিনার নাঈম হাসানের অনুশীলন করার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তিনি মাঠে যাননি। এ ছাড়া সূচিতে রোববার ইমরুল কায়েসের অনুশীলন ছিল না।
দীর্ঘ চার মাস পর মাঠে ফিরে উচ্ছ্বসিত ক্রিকেটাররা। জানিয়েছেন তাদের স্বস্তির কথা। আবার এতদিন পর মাঠে ফিরে চ্যালেঞ্জও দেখতে পাচ্ছেন তারা। ক্রিকেটাররা না বললেও প্রথমদিনের অনুশীলনে সেটা বোঝা গেছে।
৩০ মিনিট রানিং করে হাঁপিয়ে ওঠা শফিউল একাডেমি মাঠের এক কোণে গিয়ে বসে পড়েন। মুশফিকও রানিং শেষে মাঠে শুয়ে পড়েন, এভাবেই থাকেন ১৫ মিনিটের মতো। এর বাইরেও চ্যালেঞ্জ আছে, সেসব নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার।
শফিউল ইসলাম (ডানহাতি পেসার)
করোনা পরিস্থিতির কারণে বাইরে দৌড়ানোর সুযোগ ছিল না। কিন্তু ফিটনেস নিয়ে তো কাজ না করলেও নয়। তাই বাসার সিড়িতে কিছুদিন দৌড়েছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সিড়িতে দৌড়ালে হাঁটু ব্যথা হয়ে যেত। ভালোভাবে আজই প্রথম রানিং করলাম।
শুরুতে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। অনেকদিন পর মাঠে এসেছি আমরা, ফিটনেসের কাজ শুরু করেছি। চার-পাঁচ মাস পরে মাঠে নামার কারণে শুরুতে একটু হলেও কষ্ট হবেই। এটাই মূলত এখন চ্যালেঞ্জ। অনেক দিন পর বোলিং করতে গেলে শুরুতে রিদমে হয়তো সমস্যা থাকবে। তবে খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
আমার মনে হয় স্কিলে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ সবাই অনেকদিন ধরে খেলছে। এ ছাড়া বাসাতেও স্কিলের কিছু কাজ করা যায়। ফিটনেস নিয়েও সবাই বাসায় কিছু কিছু কাজ করেছি। কিন্তু এভাবে মাঠে এসে ঠিকভাবে করা হয়নি। একটু কষ্ট হচ্ছে শুরুতে। দুই-একদিন হয়তো এমন হবে। এরপর ঠিক হয়ে যাবে।
নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান)
আগেও ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছি। তবে আজ অফিসিয়ালি করলাম। আগে মনে হতো কবে স্বাভাবিক হবে। আজ অনুশীলন করার পর মনে হচ্ছে শুরু যখন হয়েছে, আস্তে আস্তে ঠিক হবে। এতদিন যা করেছি লক্ষ্য ছাড়া। এখন মনে হচ্ছে সামনে খেলা থাকবে বা কী করব, তাই মনে হচ্ছে লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি।
অনেক দিন পর মাঠে অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করছে। অফিসিয়ালি শুরু হওয়ার পর মনে হচ্ছে আস্তে ধীরে হলেও খেলা মাঠে ফিরবে। এটা একটা স্বস্তির জায়গা। খুবই ভালো লাগছে যে মাঠে এসে অনুশীলন শুরু করেছি।
আমরা চার মাস ধরে মাঠের বাইরে থাকার কারণে ফিটনেস নিয়ে চ্যালেঞ্জ থাকবে। বাসায় করলেও সেটা দলীয় অনুশীলনের মতো নয়। আমরা সবাই ফিটনেস নিয়ে বাসায় কাজ করেছি। কিন্তু ম্যাচ ফিটনেসের ক্ষেত্রে বড় একটা প্রতিবন্ধকতা থাকবে। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে ম্যাচের বাইরে আমরা। মানিয়ে নিতে এমনিতেই সময় লাগবে। তবে এই ব্যাপারটা সবার জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে হয়।
খালেদ আহমেদ (ডানহাতি পেসার)
প্রথম দিন ভালোই গেছে আলহামদুলিল্লাহ। আজ রানিং করেছি। আমি তো এতদিন বাড়িতেই করছিলাম। মাঠের পরিবেশ আর বাড়ির পরিবেশ অবশ্যই এক নয়। মাঠে যাওয়ার পর ভালো লাগছে। মাঠে যাওয়ার অনুভূতিই আলাদা। এতদিন পর মাঠে গিয়ে অনুশীলন করতে পারলাম।
অনেক দিন পর মাঠে গেলাম, মাঠে কাজ করতে পারছি, বেশ ভালো লাগছে। সুন্দর পরিবেশে অনুশীলন করা যাচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের সিলেট তো অনেক সুন্দর। নতুন ঘাস উঠেছে, চারপাশ সুবজ। সব মিলিয়ে প্রথম দিনটা ভালোই ছিল।
অনেকদিন পর মাঠে ফেরায় মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। এ ছাড়া চ্যালেঞ্জও থাকবে। কারণ বোলিং করার অনুমতি এখনও দেয়নি। আগে ফিটনেস এরপর বোলিং। বোলিং যখন শুরু হবে, তখন কেমন হবে বা কীভাবে শুরু করবো, সেটা নিয়ে চিন্তা করছি। কারণ মাঝে অনেক সময় চলে গেছে। রিদমের একটা ব্যাপার থাকে। কারণ অনেকদিন বোলিং না করলে রিদমে প্রভাব পড়ে।
এর বাইরে ফিটনেস নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। আজ খুব ভালোভাবে রানিং করেছি। রানিং, জিম এসব তো আমি নিয়মিত করে এসেছি। লকডাউন চলা অবস্থায় এসব আমি নিয়মিত করে এসেছি। আজ অফিসিয়ালি শুরু হলো। অল্প ফিল্ডিংও করা যাবে, কাল থেকে ফিল্ডিং করব।
নাঈম হাসান (ডানহাতি স্পিনার)
আজ তো আমি যেতে পারিনি। অনেক বৃষ্টি হচ্ছে চট্টগ্রামে। আমি গতকাল গিয়ে রানিং করে এসেছি। আজ মাঠে যাওয়ার কথা ছিল, জিম ও রানিং ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে যেতে পারলাম না। বাসায়ই করেছি। এতদিন পরে মাঠে ফেরার আবার যেতে পারলাম না। একটু তো খারাপ লেগেছেই।
বৃষ্টি না থাকলে কাল মাঠে গিয়ে অনুশীলন করব। আর চ্যালেঞ্জ কিছুটা থাকবে। কারণ অনেকদিন মাঠের বাইরে ছিলাম আমরা। ফিরে মানিয়ে নেওয়াসহ ফিটনেসের ব্যাপারটিও থাকবে।
মোহাম্মদ মিঠুন (মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান)
আমরা দীর্ঘ চার মাস পর মাঠে অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছি। মাঠে ফিরে ভালো লাগছে। ব্যাটিং, রানিং, সবকিছুই একটু কঠিন মনে হচ্ছে। কারণ এতদিন আমরা সবকিছুই বাসায়, ইনডোরে করেছি। মাঠে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে আমরা সবকিছু আগের মতোই ফিরে পাবো।