ভ্যাকসিনের আরও ৯ কোটি ডোজ ক্রয়ের চুক্তি করেছে ব্রিটিশ সরকার
বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক তিনটি কোম্পানি; ফাইজার ইঙ্ক, বায়োএনটেক এবং ভ্যালনেভা এসই থেকে তাদের উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ৯ কোটি ডোজ কেনার চুক্তি করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। যার মধ্য দিয়ে কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন হাতের নাগালে রাখার বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান আরও সুসংহত করলো দেশটি।
চুক্তির আওতায় নিজেদের প্রার্থী (সম্ভাব্য) ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুর দিকে সরবরাহ করবে ফাইজার এবং বায়োএনটেক। অন্যদিকে, ফ্রান্সের ভ্যালনেভা নিজেদের উৎপাদনাধীন ভ্যাকসিনের ৬ কোটি ডোজ সরবরাহ করবে। এসব ভ্যাকসিন সুরক্ষিত প্রমাণিত হলে, কোম্পানিটি অতিরিক্ত আরও ৪ কোটি ডোজ সরবরাহের আদেশ পেয়েছে।
বহুমুখী উৎস থেকে ভ্যাকসিন ক্রয়ের মাধ্যমে সিংহভাগ জনসংখ্যাকে অতিদ্রুত কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত করতে চাইছে যুক্তরাজ্য।
ইতোপূর্বে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি একটি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন ব্যাপক মাত্রায় উৎপাদনে চুক্তিবদ্ধ হয় আরেকটি ফার্মা জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকা পিএলসি। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং অক্সফোর্ডের গবেষণায় ইতোমধ্যেই অর্ধশত কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ রয়েছে ব্রিটিশ সরকারের।
আজ সোমবার অ্যাস্ট্রাজেনেকা প্রতিষেধকটির মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সফলতা ঘোষণা দেওয়ার পর, পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দর ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বেড়েছে।
উল্লেখ্য যে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার উৎপাদিত প্রতিষেধকের ৪ কোটি ডোজ কেনার চুক্তি করেছে ব্রিটিশ সরকার। সাম্প্রতিক চুক্তিসহ তারা মোট ১৭ কোটি ডোজ ক্রয় করছে।
অথচ যুক্তরাজ্যের মোট জনসংখ্যা ৬ কোটি ৬০ লাখ। সেই তুলনায় তারা বিপুল পরিমাণ বেশি প্রতিষেধকের সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাইছে। নানা কোম্পানির তৈরি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ থাকার কারণেই নির্দিষ্ট একটি উৎসের উপর নির্ভর করতে চায় না দেশটি।
ব্রিটিশ সরকার জানায়, ফাইজার এবং বায়োএনটেক কোম্পানি দুটি এই প্রথম কোনো দেশের সঙ্গে এত বড় আকারে ভ্যাকসিন সরবরাহের বাধ্যতামূলক চুক্তি করেছে।
এরআগে থেকেই অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের ওয়ার্প স্পিড রিসার্চ পোগ্রামের আওতায়, এসব কোম্পানির ভ্যাকসিন গবেষণায় হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করে।
সাম্প্রতিক চুক্তির বলে একথা স্পষ্ট যে, বৈশ্বিক ফার্মাসিটিক্যাল খাতের বৃহৎ এ কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত ভ্যাকসিনের সিংহভাগ চালান মার্কিন ও ব্রিটিশ নাগরিকেরা সবার আগে পেতে চলেছেন। এরফলে বাকি বিশ্বের জন্য ভ্যাকসিনের চালান পাওয়ার উপায় আরও সীমিত হয়ে পড়লো।
ব্রিটিশ শিক্ষামন্ত্রী গ্যাভিন উইলিয়ামসন তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপকে দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, ''ভ্যাকসিন উৎপাদনের সঙ্গেসঙ্গেই তা যেন সবার আগে যুক্তরাজ্যের জনগণ পান, সেটি নিশ্চিত করার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা দোষনীয় কিছু নয়।''
জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যখন উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহ সাম্যের ভিত্তিতে করার আহ্বান জানিয়েছে, তার মধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান, প্রভাব এবং বিত্তকে কাজে লাগিয়ে ভ্যাকসিনের চালান কেনায় সক্রিয় হয়েছে ধনী দেশগুলো। যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক পদক্ষেপটি তারই অংশ।