বিশ্বাস করুন, এগুলো পৃথিবীর ছবি নয়!
এই ভিডিও সত্যিকার অর্থেই দুনিয়ার বাইরের। অথচ নাসার রোবটিক রোভারের ধারণকৃত এই অসাধারণ দৃশ্যগুলো প্রথম দেখায় মনে হবে, যেন পৃথিবীরই কোনো শৈল্পিক তল্লাট।
ইউটিউবে প্রকাশ পাওয়া আল্ট্রা হাই-ডেফিনেশনের এই ১০ মিনিটের ভিডিও ক্লিপে ওই লাল গ্রহটির ভূপৃষ্ঠ, সুদূর বিস্তৃত মরুদ্যান, প্রকাণ্ড বালির পর্বত, খাঁজকাটা পাথরে ভরা উঁচু-নিচু ও ফাটল ধরা প্রান্তর চোখে পড়ে।
'এই প্রথমবার মঙ্গলগ্রহের এমন মনোমুগ্ধকর ও ফোর-কে রেজুলেশনের ঝকঝকে ছবি পাওয়া গেল'- ভিডিওতে ন্যারেটরের এমন বার্তার সঙ্গে, ব্যাকগ্রাউন্ডে জুড়ে দেওয়া হয়েছে রোমাঞ্চকর সংগীত।
'আরেক দুনিয়ার ভূপৃষ্ঠ ধরে অভিযাত্রা' শিরোনামে এই ভিডিও পোস্ট করেছে ব্রিটেনের এল্ডারফক্স ডকুমেন্টারিস; তাতে বলা হয়েছে, নাসার তিনটি রোভার- 'স্পিরিট', 'অপরচুনিটি' ও 'কিউরিওসিটি' ওই ডিজিটাল ছবিগুলো তুলে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে।
তারপর ছবিগুলো এডিট করে ভিডিও ফুটেজে রূপ দেওয়া হয়েছে।
এই ভিডিওতে মঙ্গলগ্রহের 'কেপ ভার্দে', 'সান্তা মারিয়া ক্রেটার', 'বার্নস ক্লিফ' ও 'ম্যারাথন ভ্যালি এন্টারেন্স' অঞ্চলগুলোর দেখা মেলে।
এরমধ্যে ভিডিওটির ন্যারেটর যেটিকে 'একসঙ্গে জড়ো করা সবচেয়ে বড় মোজাইক' হিসেবে অভিহিত করেছেন, মঙ্গলগ্রহের সেই দৃশ্য তৈরি করা হয়েছে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত 'কিউরিওসিটি' রোভারের তোলা ১ হাজারেরও বেশি ইমেজ বা ছবি ব্যবহার করে।
"প্রচুর কাদামাটিতে ভরা, 'গ্লেন টরিডন' নামের এলাকাটি তখন চষে বেড়াচ্ছিল ওই রোভার," বলেছেন ন্যারেটর।
'মঙ্গলের বুকে কাদামাটি পাওয়া জানান দেয়, এখানে অতীতে পানির অস্তিত্ব ছিল। রোভারগুলোর পাঠানো ছবিগুলোর মাধ্যমেই নাসা এ বছর নিশ্চিত প্রমাণ পায়, মঙ্গল এক সময় ছিল জলজ গ্রহ।'
ভিডিওটিতে মঙ্গলের লালচে ও কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ হলুদ থেকে নীল হয়ে ফুটে উঠেছে; এর কারণ হিসেবে ন্যারেটর বলেন, 'পাথরগুলোর গঠন সম্পর্কে ভূতাত্ত্বিক ধারণা পেতে নাসা ওই ইমেজগুলোর রি-কালারিং করেছে।'
'আর এই টেকনিকের কারণে মঙ্গলের আরও বেশি সুস্পষ্ট ছবি পাওয়া সম্ভব হয়েছে', বলেন তিনি।
যদিও বালির পাহাড়ের ফাঁদে আটকে গিয়ে এবং প্রকাণ্ড ধূলি ঝড়ের কারণে 'স্পিরিট' ও 'অপরচুনিটি' রোভার দুটি আর কার্যকর নেই; তবে এখনো সক্রিয় 'কিউরিওসিটি'র সঙ্গে আগামী বছর মঙ্গলগ্রহে যোগ দেবে নাসার নতুন রোভার- 'পারসেভারেন্স'।
ওই মডেলটিতে 'ইনজেনুইটি' নামে একটা হেলিকপ্টার জুড়ে দেওয়া হবে, যেন নাসার রোভার ভবিষ্যতে মঙ্গলের বালুর ফাঁদ এড়াতে পারে।
তবে পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল যথেষ্ট পাতলা হওয়ায় ইনজেনুইটির রটার ব্লেড প্রতি মিনিটে ২৪০০ বার ঘুরবে, যেখানে পৃথিবীর হেলিকপ্টারগুলোতে ঘুরে মিনিটপ্রতি মাত্র ৫০০ বার।
- সূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট