খারকিভের ‘পরিস্থিতি কঠিন’, স্বীকার করলেন ইউক্রেনের সেনাপ্রধান
ইউক্রেনের সেনা প্রধান ওলেক্সান্ডার সিরস্কি স্বীকার করেছেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী খারকিভের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে যেখানে রুশ বাহিনী অগ্রসর হওয়ার কারণে আরো হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।
রবিবার (১২ মে) টেলিগ্রামে সিরস্কি লিখেছেন, "এ সপ্তাহে খারকিভ অঞ্চলের পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়েছে। রাশিয়ান ফেডারেশনের সাথে রাজ্য সীমান্ত বরাবর সীমান্তবর্তী এলাকায় যুদ্ধ চলছে।"
পরিস্থিতি 'কঠিন' এবং রুশ সেনারা কিছু এলাকায় 'আংশিক সাফল্য' অর্জন করেছে স্বীকার করে তিনি বলেছেন, "ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রতিরক্ষামূলক লাইন ও অবস্থান ধরে রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।"
তীব্র যুদ্ধের মধ্যেই ইউক্রেন কমপক্ষে একটি সামরিক ইউনিট প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। রুশ সীমান্তবর্তী ইউক্রেনের কম সুরক্ষিত অঞ্চলের দখল নিচ্ছে রুশ বাহিনী।
শুক্রবার (১০ মে) ভোর থেকে উত্তরপূর্ব ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের কাছে সাঁজোয়া যান নিয়ে হামলা চালিয়েছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনের সামরিক মুখপাত্র নাজার ভোলোশিন সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, মস্কোর অভিযানের লক্ষ্য ছিল পূর্ব ফ্রন্ট থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের খারকিভে টেনে আনা, যেখানে রাশিয়া তার আক্রমণকে কেন্দ্রীভূত করছে।
রবিবার বিকালের মধ্যে উত্তর-পূর্বে ইউক্রেনের ১৭ হাজার জনসংখ্যার ভোভচানস্ক শহরটি যুদ্ধের একটি প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
খারকিভ আঞ্চলিক পুলিশের প্রধান ভলোদিমির টাইমোশকো বলেছেন, রুশ বাহিনী শহরের উপকণ্ঠে অবস্থান করছিলো এবং তিন দিক থেকে এগিয়ে আসছে তারা। তিনি আরো বলেন, পদাতিক সেনারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। শহরের দিকে যাওয়ার প্রধান রাস্তার পাশে একটি রুশ ট্যাংক দেখা গেছে।
গতকাল ভারী গোলাগুলির কারণে বসতি ও আশেপাশের এলাকা থেকে বেসামরিক লোকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
খারকিভ অঞ্চলের গভর্নর ওলেহ সিনহুবভ বলেছেন, শুক্রবার মস্কোর বাহিনী অভিযান শুরু করার পর থেকে অন্তত ৪ হাজার বেসামরিক লোক খারকিভ অঞ্চল থেকে চলে গেছে। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন, রবিবার উত্তরপূর্ব ফ্রন্ট লাইনে প্রচণ্ড লড়াই শুরু হওয়ার পর রুশ বাহিনী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৭টি বসতি আক্রমণ করেছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের বাহিনী শনিবার (১১ মে) পাঁচটি গ্রাম ও রোববার (১২ মে) সীমান্তবর্তী চারটি গ্রামের দখল নিয়েছে। গতিশীল লড়াই ও ক্রমাগত ভারী গোলাবর্ষণের জন্য এ অঞ্চলগুলোর সুরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যাওয়ায় রুশদের অগ্রগতি আরো সহজ হয়েছে।
ইউক্রেনের নেতারা মস্কোর অগ্রগতির বিষয়টি নিশ্চিত না করলেও টাইমোশকো বলেছেন, স্ট্রিলেচা, পাইলনা ও বরসিভিকার দখল নিয়েছে রাশিয়া। তিনি আরো বলেছেন, এ অঞ্চলগুলো থেকে রুশ পদাতিক বাহিনী নিয়ে আসা হচ্ছে ক্লাইবোকে এবং লুকিয়েনসির গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালানোর জন্য।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রবিবার বলেছিলেন, এ অঞ্চলের কিছু অংশ জুড়ে তীব্র যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাকে বিভ্রান্ত ও দুর্বল করার চেষ্টা থেকেই এ আক্রমণ চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রত্যাশিত পশ্চিমা সাহায্য আসার আগেই রাশিয়া ইউক্রেনের গোলাবারুদ ঘাটতির সুবিধা নিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইউক্রেনীয় সেনারা বলেছেন, ক্রেমলিন পুরাতন রুশ কৌশল ব্যবহার করে আগুন লাগিয়ে ও পদাতিক আক্রমণ চালিয়ে তাদের ক্লান্ত করার চেষ্টা করছে।
রুশ বাহিনী সামনের সারির অপেক্ষাকৃত শান্ত এলাকায় যুদ্ধ চালিয়ে উত্তর-পূর্বে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে আটকে রেখে দক্ষিণে তীব্র যুদ্ধ চালাচ্ছে, যেটিতে শেষ পর্যন্ত মস্কো লাভবান হচ্ছে।
মার্চ মাসে ইউক্রেনের শক্তি অবকাঠামো ও বসতি লক্ষ্য করে রুশ হামলার পরেই বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছিলেন, এটি আক্রমণাত্মক পরিস্থিতি তৈরির একটি রুশ প্রচেষ্টা ছিল।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়