খারকিভের কিছু এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করল ইউক্রেন
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে ইউক্রেন। বুধবার এসব এলাকায় রুশ বাহিনী আরও অগ্রসর হওয়ায় এবং সীমান্তবর্তী বিভিন্ন বসতি লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রাখায় এ পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, 'উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর খারকিভের আশপাশের কিছু এলাকায় শত্রুপক্ষের গোলাবর্ষণ এবং স্থল সেনাদের হামলার কারণে আমাদের সৈনরা জীবন বাঁচাতে ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে তাদের সুবিধাজনক অবস্থানে চলে গেছে।'
এছাড়া স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রুশ সেনারা গুরুত্বপূর্ণ শহর ভোভচানস্কের ভেতরে অবস্থান নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা বিলম্বিত হওয়ায় রুশ আক্রমণ প্রতিরোধে হিমশিম খাচ্ছে কিয়েভ। এরই মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইউক্রেনে এক আকস্মিক সফরে গিয়ে কিয়েভের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার আসন্ন সব বিদেশ সফর বাতিল করেছেন।
গত সপ্তাহ থেকে ইউক্রেনে বিপুল পরিসরে স্থল হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। মার্কিন অস্ত্র সহায়তা বিলম্বিত হওয়ার পূর্ণ সুযোগ নিচ্ছে রাশিয়া। ক্রেমলিন সম্প্রতি খারকিভের আশেপাশের অঞ্চলে বিপুল সেনা মোতায়েন করে আক্রমণ জোরদার করেছে এবং বিমান থেকে এসব অঞ্চলে ক্রমাগত বোমা বর্ষণ করা হচ্ছে। ফলে খারকিভে রুশ বাহিনী কৌশলগত সাফল্য অর্জন করেছে বলে স্বীকার করেছে এবং পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।
গত শুক্রবার হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ওই এলাকার হাজার হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কিয়েভের আশঙ্কা, মস্কো একইভাবে অন্যান্য সীমান্ত দিয়েও অনুপ্রবেশের চেষ্টায় নতুন করে সেনা মোতায়েন করতে পারে।
মঙ্গলবার রাতে তারা জানায়, কিছু সেনা প্রত্যাহার করতেই হবে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে, 'শত্রুপক্ষের গোলাবর্ষণ এবং স্থল সেনাদের হামলার কারণে আমাদের সৈনরা জীবন বাঁচাতে ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে তাদের সুবিধাজনক অবস্থানে চলে গেছে।'
ইউক্রেনে নতুন করে স্থল হামলা শুরু করেছে রাশিয়া
জেলেনস্কি এর আগে বলেছিলেন, রাশিয়া এই গ্রীষ্মে বড় ধরনের আক্রমণের পরিকল্পনা করছে।
পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকরা একমত যে, যুদ্ধের শুরুর পর্যায়ে মস্কো বাজে রকম হোঁচট খেয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে ক্রমে তারা নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে।
লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জ্যাক ওয়াটলিংয়ের মতে, ইউক্রেনে হামলা চালানো রুশ বাহিনীর সংখ্যা পাঁচ লাখেরও বেশি। ইউক্রেনীয় বাহিনীর চেয়ে এই সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় উল্লেখযোগ্য সুবিধা পাচ্ছে ক্রেমলিন।
রাশিয়ার প্রধান লক্ষ্য খারকিভ বিজয় নাকি ইউক্রেনের অবরুদ্ধ বাহিনীকে দক্ষিণ ও পূর্বের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও দূরে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এক ই-মেইল বার্তায় ওয়াটলিং বলেন, 'রাশিয়ার লক্ষ্য বড় কোনো সাফল্য অর্জন করা নয়, বরং ইউক্রেনকে বোঝানো যে তারা চাইলে সামনে বহুদূর পর্যন্ত এগিয়ে যেতে পারে।'
রুশ সীমান্ত থেকে তিন মাইল দূরে ভোভচানস্কে শহরের পুলিশ প্রধান ওলেক্সি খারকিভস্কি একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, যাতে কাছাকাছি প্রচণ্ড লড়াইয়ের শব্দ শোনা গেছে।
তিনি বলেন, 'পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন। শত্রুরা রাস্তায় অবস্থান নিচ্ছে।'
পরে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানায়, তাদের সেন্যরা শহরটি থেকে রুশ সেনাদের 'আংশিক বিতাড়িত' করেছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,খারকিভ অঞ্চলের নিকটবর্তী সীমান্ত এলাকা থেকে সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে। রুশ বাহিনী এখনই থামবে বলে মনে হচ্ছে না।
ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভ নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ইউক্রেনের কর্মকর্তারা আশা করছেন যে রাশিয়া সুমি অঞ্চলের আরও পশ্চিমে 'কঠোর আক্রমণ' করবে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যখন তুমুল লড়াই চলছে, রাজধানী কিয়েভে বসে ব্লিঙ্কেন তখন তার মিত্রকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন।
মঙ্গলবার জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, 'আমরা জানি এটি একটি চ্যালেঞ্জিং সময়।'
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য যেসব অস্ত্র সহায়তার অনুমোদন দিয়েছে দ্রুত সেগুলো কিয়েভে পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ব্লিঙ্কেন।
তা সত্ত্বেও জেলেনস্কি বলেছেন, তাদের জন্য আরও কিছু করা দরকার, বিশেষত বিমান প্রতিরক্ষা বিষয়ে।
সন্ধ্যায় দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, 'প্যাকেজ ঘোষণা এবং ফ্রন্ট লাইনে অস্ত্র পৌঁছানোর মধ্যে সময়ের ব্যবধান অনেক বেশি।'
ইউক্রেন নতুন করে রাশিয়ার দেওয়া এই ধাক্কা কতটা গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে, তার একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় এই সপ্তাহে জেলেনস্কির স্পেন ও পর্তুগাল সফর বাতিলের সিদ্ধান্তে। এই সফরে তিনি দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই করবেন বলে আশা করা হয়েছিল।
কিয়েভ ও ওয়াশিংটনের বিচলিত হওয়ার আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে ব্লিঙ্কেনের আকস্মিক সফর।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বুধবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, 'এটা স্পষ্ট যে ফ্রন্টের পরিস্থিতি এবং ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সামরিক ব্যর্থতা বাইডেন প্রশাসনে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।'
অন্যদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন তার পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করার কয়েক দিন আগেই এই দুই নেতা 'সীমাহীন' অংশীদারিত্বের ঘোষণা দিয়েছিলেন।