মানুষ সন্তান জন্মদানের সময় সর্বাধিক শক্তি খরচ করা প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম: গবেষণা
একদল বিজ্ঞানী সন্তান জন্মদানের সময় প্রাণীর কি পরিমাণ শক্তি খরচ করতে হয় তা হিসেব করে দেখার সময় আবিষ্কার করেছেন, মানুষ সন্তান জন্মদানের সময় সর্বাধিক শক্তি [বিজ্ঞানীরা শক্তি পরিমাপের একক জুল-এ শক্তির খরচ হিসেব করেছেন] খরচ করা প্রাণীগুলোর একটি।
একদল জীববিজ্ঞানী ৮১টি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। প্রাণিগুলোর সন্তান উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা ছিল। প্রত্যেকটি প্রাণী প্রজননের সময় কি পরিমাণ বিপাকীয় শক্তি খরচ করে সেটি পরিমাপ করে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
বড় প্ল্যাসেন্টাল স্তন্যপায়ী [এসব স্তন্যপায়ী প্রাণী গর্ভাবস্থায় ভ্রূণকে খাদ্য গ্রহণ করাতে পারে] প্রাণীরা প্রজননের সময় গর্ভাবস্থায় কয়েক মাস ধরে এক বা একাধিক সন্তানের বিকাশ ঘটানোর পাশাপাশি প্রসব পরবর্তী দীর্ঘ সময় সন্তানের যত্ন নেয়। অন্যদিকে এক্টোথার্ম [শীতল রক্তের প্রাণী, সাধারণত সরীসৃপ] প্রজাতির প্রাণিগুলো প্রজননের জন্য ডিম পাড়ে। কিন্তু সন্তান উৎপাদন করতে এবং লালন করতে সকল প্রজাতির প্রাণীকে দ্বিগুণ শক্তি ব্যয় করতে হয়।
"সায়েন্স" জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটির ফলাফল অনুসারে, প্রজননের জন্য আগে যে পরিমাণ শক্তি খরচ হয় বলে ভাবা হত তার থেকেও উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি শক্তি খরচ হয়। এমনকি কোন ক্ষেত্রে ১০ গুণ বেশি শক্তি খরচ হয়। স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ওভিপারাস ইক্টোথার্মের [ডিম পাড়ে এমন প্রজাতি] বেশিরভাগ প্রজাতি যেমন মাছ, সরীসৃপ ও উভচর প্রাণীর থেকে তিনগুণ বেশি শক্তি খরচ করে। আবার সাপ ও টিকটিকির মতো ভিভিপারাস ইক্টোথার্মের [যাদের ভ্রূণ সম্পূর্ণরূপে গর্ভে বিকশিত হয়] তুলনায় প্রজননের সময় দ্বিগুণ শক্তি শক্তি ব্যয় করে।
যদিও গবেষণাটি বিভিন্ন প্রাণীর প্রজননের সময় প্রকৃত শারীরিক শক্তি খরচ পরিমাপের প্রথম প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে একটি, এটি শুধু জন্ম বা ডিম পাড়ার মুহূর্ত পর্যন্ত শারীরিক শক্তির খরচ বিবেচনা করে। এটি শক্তি খরচের নিবিড় প্রক্রিয়া ও সে সময় প্রাণী কেমন আচরণ করে তা নিয়ে কোন কিছু উল্লেখ করেনি। ফলে বুকের দুধ তৈরি করা বা সন্তানের জন্য দীর্ঘায়িত যত্ন প্রদান করা, যেটি বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীর সাধারণ বৈশিষ্ট্য সেগুলো গবেষণায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টরিয়ায় অবস্থিত মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিজ্ঞানী এবং গবেষণার প্রধান লেখক স্যাম গিন্থার ব্যাখ্যা করেছেন, "আমরা সন্তান প্রসব করার পর যত্ন নিতে কেমন শক্তি খরচ হয় তা গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করিনি কারণ এটি পরিমাপ করার অনেক উপায় রয়েছে। যেমন প্রাণীর কার্যকলাপের ধরণ, তরুণদের বিপদ থেকে রক্ষা করা, উষ্ণতার জন্য আলিঙ্গন করা, ইত্যাদি।"
যে ৮১টি প্রজাতির প্রাণীর ওপর গবেষণা চালানো হয়েছে তার মধ্যে সাদা-লেজযুক্ত হরিণ বা ভার্জিনিয়া হরিণ (ওডোকোইলিয়াস ভার্জিনিয়াস) প্রাণীটি (বিশেষত স্ত্রী) প্রজননের সময় সর্বাধিক শক্তি খরচ করে। এটি গড়ে ৪ লাখ ৭০ হাজার ৩৭ কিলজুল [এক কিলোজুল হলো ১ হাজার জুলের সমান] শক্তি খরচ করে। উল্টোদিকে রোটিফার (ব্র্যাকিওনাস প্লাসিটিলিস) প্রজাতির প্রাণী যেটিকে মাছের লার্ভাকে খাওয়ানো হয়, সেটি প্রজননের সময় সব থেকে কম শক্তি খরচ করে। এটি প্রজননের সময় মাত্র ০.০০০০০৩ কিলোজুল শক্তি খরচ করে।
স্যাম গিন্থার বলেছেন, ""মানুষের প্রজননের সময় মোট ২ লাখ ৮ হাজার ৩শ ৩ কিলোজুল শক্তি খরচ করে। গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনার মধ্যে মানুষ প্রজননের সময় সবথেকে বেশি শক্তি খরচ করা চারটি প্রাণীর মধ্যে একটি। গর্ভাবস্থায় বিপাকীয় শক্তি খরচ করার দিক থেকে মানুষ দ্বিতীয়।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়