রুশদের ‘সস্তা’ গ্লাইড বোমায় বিপর্যস্ত হচ্ছে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারিকিভের দখল নিতে নতুন করে চালানো রুশ হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ইউক্রেনের সামরিক প্রতিরোধ। ইতোমধ্যেই খারকিভ অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্বে রুশ সীমান্ত লাগোয়া শহর ভোভচানস্কে প্রবেশ করেছে রুশ সেনারা। খবর বিবিসির
খারকিভ অঞ্চলে সাম্প্রতিক রুশ আক্রমণ ও অভিযানে সীমান্ত লাগোয়া কিছু গ্রাম রুশ বাহিনীর দখলে চলে গেছে। এরমধ্যে অন্তত নয়টি গ্রাম ও জনবসতি রয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে চালানো রুশ হামলার কাছে ইউক্রেনীয়দের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বেশ দুর্বল বলেই মনে হচ্ছে। গ্লাইড বোমার মতো শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবহার করে ইতোমধ্যেই খারকিভের বিভিন্ন স্থাপনা, ঘরবাড়ি সহ অন্যান্য স্থানে হামলা চালিয়েছে রুশ সামরিক বাহিনী।
গ্লাইড বোমা মূলত আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা এক ধরনের বোমা যেটি সরাসরি লক্ষ্যবস্তুর ওপর থেকে আঘাত না করে দূর থেকে উৎক্ষেপণ করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা যায়। খারকিভের কাছে রাশিয়ার সাম্প্রতিক অগ্রগতির মধ্যেই উত্তর ভোভচানস্কে বোমাবর্ষণ করার জন্য বিগত এক সপ্তাহে ২০০টির বেশি গ্লাইড বোমা ব্যবহার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনিস্কির দাবি, শুধু মার্চ মাসেই এ জাতীয় ৩ হাজার বোমা দিয়ে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালানো হয়েছে। কাছ থেকে গ্লাইড বোমার ভয়ানক ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করা ভভচানস্কের পুলিশ প্রধান ওলেক্সি খারকিভস্কি জানিয়েছেন, এ ধরনের বোমা হামলার পরিণতি বর্ণনা করা অসম্ভব।
গ্লাইড বোমার ব্যাপক ব্যবহার রাশিয়ার একটি নতুন কৌশল যেটি ইউক্রেনীয় বাহিনীর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করেছে। পুরানো সোভিয়েত বোমাগুলোতে নতুন করে ডানা ও স্যাটেলাইট নেভিগেশন যোগ করে তৈরি করা এই বোমাগুলো সস্তা হলেও এগুলোর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা অনেক বেশি।
সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান পলিসি অ্যানালাইসিস (সিইপিএ) এর একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর আভদিভকা দখলে রুশ কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল গ্লাইড বোমা। উৎপাদন সহজ হওয়ায় রাশিয়াও অধিক মাত্রায় গ্লাইড বোমার ব্যবহার করতে পেরেছে।
যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের বিমান শক্তি ও সামরিক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর জাস্টিন ব্রঙ্ক এর মতে, গ্লাইড বোমাগুলো রাশিয়াকে মিলিয়ন ডলারের সেবা দিচ্ছে। অথচ এগুলো উৎপাদনের জন্য রাশিয়াকে ব্যয় করতে হয়েছে সামান্যই।
তিনি জানিয়েছেন, ব্যাপকভাবে উৎপাদিত গ্লাইড বোমার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করা তুলনামূলক সহজ। আর রাশিয়ার কাছে সোভিয়েত বোমার অনেক মজুদ থাকায় উৎপাদন খরচ অনেকখানি কমে এসেছে। প্রতিটি বোমা উৎপাদন করতে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার ডলার খরচ হচ্ছে।
গ্লাইড বোমা অনেকখানি জায়গা জুড়ে বিস্ফোরিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে। এফএবি-১৫০০ নামের একটি সাধারণ গ্লাইড বোমার ওজন ১.৫ টনের মতো হয়। কিন্তু রুশ বাহিনী ১৫২ মিমি শেলে মাত্র ৬.৫ কেজি বিস্ফোরক উপাদান ব্যবহার করছে এমনকি সবচেয়ে ছোট আকৃতির গ্লাইড বোমা এফএবি-৫০০ তেও ২০০ কেজির বেশি বিস্ফোরক থাকে। কিন্তু পরিমাণে কম বিস্ফোরক উপাদান থাকা সত্ত্বেও রুশদের গ্লাইড বোমাগুলো ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষাকে দুর্বল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।
এগুলোর উচ্চতর বিস্ফোরক ক্ষমতার কারণে গ্লাইড বোমার আঘাতে প্রাণহানির সম্ভাবনা বেশি, এমনকি সুরক্ষিত অবস্থানে থাকার পরেও। শক্তিশালী বিস্ফোরণ মানবদেহেও বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
অধ্যাপক জাস্টিন ব্রঙ্কের মতে, গ্লাইড বোমা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামূলক কৌশলকে জটিল করে তুলছে কারণ রুশ বাহিনী ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষাকে ধ্বংস না করার আগ পর্যন্ত ক্রমাগতভাবে নির্দিষ্ট স্থানে বোমা হামলা চালানোর সক্ষমতা রাখে।
খারকিভের আশপাশের কিছু এলাকায় রুশদের ভারী বোমা হামলা ও স্থল সেনাদের হামলার কারণে ইতোমধ্যেই ইউক্রেনীয় সেনারা জীবন বাঁচাতে ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যাচ্ছেন।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়