ঋণ খেলাপি মামলায় পেনিনসুলা স্টিলের এমডিসহ পরিবারের ৩ সদস্যের সাজা
চট্টগ্রামের জাহাজভাঙ্গা খাতের ব্যবসায়ী পেনিনসুলা স্টিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলমসহ পরিবারের ৩ সদস্যের বিরুদ্ধে পাঁচ মাসের সাজা দিয়েছেন আদালত।
প্রায় ৫২ কোটি টাকা পাওনার বিপরীতে ঢাকা ব্যাংকের দায়ের করা মামলায় চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান সোমবার (২০ মে) এই আদেশ দেন।
সাজা প্রাপ্ত বাকিরা হলেন— জাফর আলমের স্ত্রী ও পেনিনসুলা স্টিলের চেয়ারম্যান রাশেদা জাফর, সহোদর আবু আলম ও ছেলে জুনায়েদ আলম।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বলেন, "পেনিনসুলা স্টিলের কাছে পাওনা প্রায় ৫২ কোটি টাকা আদায়ে ২০২২ সালে অর্থঋণ মামলা দায়ের করে ঢাকা ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা। ২০২৩ সালে অর্থঋণ মামলায় রায় হওয়ার পর বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারদের বিরুদ্ধে জারি মামলা চলছে।"
"অর্থঋণ মামলার রায়ের পরও পাওনা পরিশোধ না করা এবং ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তুলেও বিক্রি সম্ভব না হওয়ায় বাদী ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দিয়েছেন," যোগ করেন তিনি।
ঢাকা ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০০৯ সালে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করতে ঋণ সুবিধা নেয় পেনিনসুলা স্টিল। প্রথম কয়েক বছর ব্যবসা ভালোই চলছিল। কিন্তু ২০১৫-১৬ সালের পর থেকে ঋণ পরিশোধে গড়িমসি শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
এরমধ্যে ২০১৯ সালে বিশেষ সুবিধায় ঋণটি পুনঃতফসিল করা হয়। কিন্তু এরপরও ঋণ শোধ না করায় ২০২২ সালে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে ব্যাংক।
৫২ কোটি টাকা পাওনার বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির ইয়ার্ডের ১০০ শতক জমি বন্ধক রয়েছে ঢাকা ব্যাংকের কাছে।
উল্লেখ্য, ঢাকা ব্যাংকসহ চার ব্যাংকে পেনিনসুলা স্টিলের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩১৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে ওয়ান ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ১৯৩ কোটি টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ৫৮ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ১০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
পাওনাদার ব্যাংক কর্মকর্তা ও শিপ ব্রেকিং খাতের ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, ১৯৮৫ সাল থেকে শিপ ব্রেকিং খাতে ব্যবসা করে আসছেন জাফর আলম। প্রথম দিকে সুপার স্টিল নামে জাহাজ ভাঙ্গার ব্যবসা করলেও পরবর্তীতে, ২০০০ সালে পেনিনসুলা স্টিল নামে সাধারণ মানের রড উৎপাদন কারখানা গড়ে তোলেন। এরপর ২০১৪ সালের দিকে শিপ ব্রেকিং খাতের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা বিনিয়োগ করেন পেনিনসুলা স্টিল রি-রোলিং মিলে।
মূলত, সাধারণ মানের মিল থেকে সেমি অটোতে রূপান্তর করতে এই টাকা ব্যয় করেন তিনি। কিন্তু যেই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে কারখানা সম্প্রসারণ করা হয়– সেই অনুপাতে আয় না হওয়ায় আটকে যায় ব্যাংকের বিনিয়োগ।
এ বিষয়ে পেনিনসুলা স্টিলের কর্ণধার মো. জাফর আলমের মোবাইলে একাধিক বার ফোন করে ও ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।