বেশি দাম নিয়ে নিম্নমানের কয়লা গছিয়ে দেওয়ার সন্দেহ আদানি গ্রুপের দিকে
দামি ও পরিচ্ছন্ন হিসেবে দাবি করে ভারতের একটি সরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিকে নিম্নমানের কয়লা গছিয়ে দিয়েছে দেশটির আদানি গ্রুপ। এ বিষয়ে বিভিন্ন নথিপত্র ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-এর হাতে এসেছে।
অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি)-এর সংগ্রহ করা এবং এফটি'র পর্যালোচনা করা ওসব নথিপত্রের তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, এর মাধ্যমে আদানি গ্রুপ বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করেছে।
আর এর সম্ভাব্য দায় চোকাতে হয়েছে পরিবেশকে, তথা ভারতের বায়ুমানকে। কারণ নিম্মমানের কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণ কয়লা পোড়াতে হয়।
বিলের কাগজপত্র অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা কেনে আদানি গ্রুপ। তখন দাবি করা হয়েছিল, ওই কয়লার প্রতি কেজিতে সাড়ে তিন হাজার ক্যালরি শক্তি রয়েছে।
ওই কয়লা তামিলনাড়ু জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিউশন কোম্পানি (ট্যাংগেডকো)-এর কাছে ছয় হাজার ক্যালরি শক্তিসম্পন্ন উচ্চ গ্রেডের কয়লা হিসেবে বিক্রি করা হয়। পরিবহন খরচ বাদ দিয়েও এ থেকে আদানি গ্রুপ দ্বিগুণেরও বেশি লাভ করেছে বলে নথিপত্রের তথ্য ইঙ্গিত করছে।
এফটি ওই বছরের আরও ২২টি শিপমেন্টের কাগজপত্রও পর্যালোচনা করে দেখেছে। সেগুলোর তথ্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দেড় মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা সরবরাহের ক্ষেত্রে এ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে আদানি গ্রুপ।
২০২২ সালে দ্য ল্যান্সেট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিবছর ভারতে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাহ্যিক বায়ু দূষণের কারণে মারা যান। অন্যান্য গবেষণার তথ্য বলছে, দেশটিতে কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের আশপাশের কয়েকশ মাইলজুড়ে শিশুমৃত্যু উল্লেখযোগ্যহারে বেশি।
ওসিসিআরপি-এর সংগৃহীত নতুন নথি অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ইন্দোনেশিয়া থেকে একটি জাহাজ কয়লা নিয়ে বন্দর ছাড়ে। ওই কয়লার তালিকাভুক্ত মূল্য ছিল প্রতি টন ২৮ ডলার। আর পরের বছর ভারতে পৌঁছানোর পর আদানি ট্যাংগেডকো'র কাছে প্রতি টন কয়লা ৯২ ডলারে বিক্রি করে।
একইভাবে বিভিন্ন শিপমেন্টের অধীনে নিম্নমানের কয়লা কম দামে কিনে ট্যাংগেডকো'র কাছে বেশি দামে বিক্রি করেছে গ্রুপটি।
আদানি গ্রুপ বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তারই মাঝে সংস্থাটি নিয়ে এমন তথ্য বাইরে এল। তবে কয়লা নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজির কথা অস্বীকার করেছে এটি।
গ্রুপটির এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, লোডিং ও খালাস করার সময় কয়লার মান স্বাধীনভাবে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এছাড়া ভারতের কাস্টম কর্তৃপক্ষ এবং ট্যাংগেডকো'র বিজ্ঞানীরাও কয়লার মান পরীক্ষা করেন। তিনি নিম্নমানের কয়লা সরবরাহের অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও অন্যায্য এবং সম্পূর্ণরূপে হাস্যকর বলে অভিহিত করেন।
ট্যাংগেডকোসহ কয়লা সরবরাহের এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কয়েকটি পক্ষ মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।