বিরোধ মীমাংসায় পৌর বোর্ডের এখতিয়ার ৪০ গুণ বৃদ্ধির দাবি মেয়রদের
স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ মীমাংসায় গ্রাম আদালতের এখতিয়ার ৩ লাখ টাকায় উত্তীর্ণের পথে থাকলেও পৌর বোর্ড আইনের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি এখনও ২৫ হাজার টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি ১০ লাখ টাকায় উন্নীত করার দাবি জানিয়েছেন পৌরসভার মেয়র ও সুশীল সমাজের সদস্যরা।
মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র ও মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ম্যাব) এর সাধারণ সম্পাদক খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেছেন, "২৫ হাজার টাকায় আসলে একটি ছাগলের দরবারও করা যায় না। ২৫ হাজার ভিত্তি থাকাটা খারাপ দেখা যায়। এখন হয় এটাকে বাদ দেওয়া উচিত, নাহয় আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী ১০ লাখ টাকার সীমাবদ্ধতা রেখে আইনের সংস্কার করা উচিত।"
বুধবার রাজধানীর ব্রাক ইন সেন্টারে আয়োজিত 'বিরোধ মীমাংসা (পৌর এলাকা) বোর্ড আইন, ২০০৪ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা'— শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে তিনি আরও বলেন, "আমরা স্থানীয় জনগণের মধ্যে কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের সাথে যুক্ত থাকি। আমরা শালিস মিমাংসায় অনেকটা সময় ব্যয় করে থাকি। যেহেতু ব্যয় করে থাকি, সেখানে তো আইগতভাবে একটি ভিত্তি রয়েছে। তবে সেটি মাত্র ২৫ হাজার টাকার বিরোধ মীমাংসার।"
তিনি আরও বলেন, "দেশে এখন ৪২ লাখ মামলা চলমান রয়েছে। যদি আমরা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা না করতাম, তাহলে এই সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে যেত।"
মাদারীপুর লিগাল এইড অ্যাসোসিয়েশন (এমএলএএ), মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ম্যাব), দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন-বাংলাদেশ এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, "দেশের ১৩টি বিভিন্ন স্তরে আইন করতে গিয়ে প্রতিটি স্তরেই বিচারবিশ্লেষণ করা হয়। আমরা 'ইরোর ফ্রি' (ত্রুটিহীন) আইন করতে ও সংশোধন করতে মতামত নিয়ে থাকি। আজকের আলোচনার বিষয়ও আমরা উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করবো।"
তিনি আরও বলেন, "বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে পৌরসভায় এর নাম কী হবে। এটি নিয়ে আমাদের পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনা হবে। আশা করি, এসব আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটি সমাধানে আসবো।"
পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র জাকিয়া খাতুন বলেন, "বর্তমান জমির দাম অনুসারে ১০ লাখ টাকা একেবারেই নগন্য। আমাদের কাছে বিরোধ মীমাংসা করার জন্য প্রতিনিয়ত বাসিন্দারা আসেন, তাই বিরোধ মিমাংসা আইন সংশোধন অতীব প্রয়োজন।"
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, "আইনের সংশোধন করে সর্বক্ষেত্রে অবাধ আপিলের বিষয় থাকতে পারে। সাথে সাথে এ আইনের জন্য বিধিও তৈরি করা প্রয়োজন।"
এছাড়া রায় বাস্তবায়ন পদ্ধতি সহজতর করা, আইনটির শিরোনাম পরিবর্তন করে 'পৌর আদালত' নাম দেওয়া, মেয়রের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে আপত্তি উপস্থাপন বা মেয়রের অনুপস্থিতিতে কে বোর্ডের দায়িত্ব পালন করবেন– তা স্পষ্ট করা জরুরি বলে মনে করেন বক্তারা।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, "আমরা আশা করি, খুব দ্রুততার সাথে এ আইনের সংশোধন হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে চেতনার কথা আমরা বলি, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নাগরিকদের আইনের শাসন পাওয়া ও বিচার পাওয়ার অধিকার। এটি শুধু যে ঢাকা কেন্দ্রীক সুপ্রিম কোর্টে পাবে এমনটা নয়, একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে এই আইন সংশোধন হলে অবদান রাখবে।"
তিনি আরও বলেন, "আমি এটাকে একাত্তরের চেতনার সাথে মিলিয়ে দেখছি। এবং এটা বাস্তবায়ন করার জন্য যে আশ্বাস দিয়েছেন সেটা যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হয় সেই প্রত্যাশায় আমরা থাকছি।"