পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে নতুন করে সংযোগ তৈরি করা কেন কঠিন!
পুরোনো বন্ধুর সাথে ফের যোগাযোগের মধ্যে একটা আলাদা প্রশান্তি আছে। এক্ষেত্রে ঐ বন্ধুত্ব যদি আবার নতুন করে জোড়া লাগে তবে তো সেটি বেশ সন্তোষজনক ব্যাপার।
মনোবিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধুত্বের ভালো ও বৈচিত্র্যময় দিকগুলোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি সাইমন ফ্রেজার বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের মনোবিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্যোগে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, আমরা পুরনো বন্ধুদের সাথে ফের যোগাযোগে বেশ ইতস্তত বোধ করি।
গবেষণাটি মূলত ২৫০০ জন অংশগ্রহণকারীসহ মোট সাতটি বৃহৎ সার্ভের মাধ্যমে করা হয়েছে। যেখানে প্রথম সার্ভেতে ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ জানান, যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়া বন্ধুদের সাথে তারা ফের কথা বলতে চান।
এক্ষেত্রে গবেষণায় যখন তাদের যোগাযোগ করতে বলা হয়, তখন দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। সেক্ষেত্রে মাত্র এক তৃতীয়াংশ ব্যক্তি বন্ধুকে মেসেজ করেছিল।
এই অনীহার মনস্তত্ত্ব বোঝার জন্য গবেষকরা আরেকটি সার্ভে করেন। সেখানে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন কাজ দিয়ে দেখা হয়, তারা ঐ কাজগুলো করতে ইচ্ছুক কি-না। যেমন, পুরোনো বন্ধুর সাথে ফের যোগাযোগ করা, অপরিচিত ব্যক্তির সাথে কথা বলা, আইসক্রিম বার খাওয়া কিংবা আবর্জনার ব্যাগ তোলা।
সেক্ষেত্রে দেখা যায়, অপরিচিত ব্যক্তির সাথে কথা বলা কিংবা আবর্জনার ব্যাগ তোলার মতোই মানুষ পুরোনো বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করতে চায়।
এক্ষেত্রে গবেষকদের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণকারীদের পুরোনো বন্ধুদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যাবে বলে জানিয়ে উৎসাহ দেওয়া হয়। কিন্তু এই প্রচেষ্টার পরেও অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। বরং পুরোনো বন্ধুদের মেসেজ পাঠানোর মতো অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা কমই ছিল।
সাইমন ফ্রেজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী এবং গবেষণার প্রধান গবেষক লারা আকনিন বলেন, "এক্ষেত্রে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, মানুষের মন পরিবর্তন করার চেষ্টা করা সেরা উপায় নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে আমরা সত্যিকার অর্থে তাদের আচরণ পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছি।"
এমতাবস্থায় গবেষক দল অংশগ্রহণকারীদের নতুন পন্থায় অনেকটা 'ওয়ার্ম আপ' করান। এক্ষেত্রে একটি গ্রুপকে তিন মিনিট সময় দিয়ে বর্তমান বন্ধুদের মেসেজ পাঠাতে বলা হয়। আর অন্য গ্রুপকে একই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া চালাতে বলা হয়। এরপর উভয় গ্রুপকে মেসেজে পুরোনো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
এক্ষেত্রে বর্তমান বন্ধুদের সাথে মেসেজ করার অনুশীলনটি বেশ কাজে দেয়। কেননা এতে যুক্ত থাকাদের মধ্যে ৫৩ ভাগ শেষমেশ পুরোনো বন্ধুদের মেসেজ দেয়; যা 'ওয়ার্ম আপ' না করাদের তুলনায় বেশি।
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপের ক্ষেত্রে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। তাদের মধ্যে মাত্র ৩১ ভাগ পুরোনো বন্ধুকে মেসেজ দিয়েছে। সেক্ষেত্রে এমনটা কেন হচ্ছে সেটিই গবেষণায় বের করার চেষ্টা করা হয়েছে।
আকনিন বলেন, "সময়ের সাথে সাথে পুরোনো বন্ধুরা অপরিচিতদের মতো অনুভব করতে শুরু করতে পারে। সেই মনস্তাত্ত্বিক দূরত্বটিই ফের যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসাবে কাজ করে।"
এক্ষেত্রে ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী জিউসেপে লাবিয়ানকা মনে করেন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে বন্ধুত্বের সম্পর্ক কেমন ছিল সেটির ওপর নির্ভর করে পুনরায় যোগাযোগ করার সম্ভাবনা কতটা। এক্ষেত্রে আগের সম্পর্কে যদি প্রচণ্ড মাত্রায় বিশ্বস্ততা থেকে থাকে তবে পুনরায় যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে ইতস্ততা কম থাকে।
এক্ষেত্রে সামাজিক পরিসরে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যতটা বৈচিত্র্য থাকবে সেটি ততটাই ভালো। যেমন, করোনাকালীন লকডাউনের সময় অনেকেই ঘরবন্দি থাকা অবস্থায় নিজেদের পুরোনো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকা
সোশ্যাল মিডিয়া যেমন পুরোনো বন্ধুত্বকে ধরে রাখতে পারে, ঠিক তেমনি আমাদের সম্পর্ককে অগভীর করে তুলতে পারে৷ নতুন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, পুরোনো বন্ধুর সম্পর্কে জানাশোনা থাকলে যোগাযোগ করতে সহজ হয়। সেক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া সেই কাজটি কিছুটা হলেও করে থাকে।
এই সম্পর্কে আকনিন বলেন, "মানুষগুলো আমাদের ভাবনায় থাকে। অন্তত আমাদের ফিডে ঘুরতে থাকে।"
লাবিআনকা মনে করেন, সোশ্যাল মিডিয়া পুরোনো বন্ধুদের ধরে রাখতে সহায়তা করলেও সম্পর্ক বেশ হালকা অবস্থায় থাকে। এক্ষেত্রে বেশ ভালো সম্পর্কের জন্য কথাবার্তা বলা জরুরি। সেটা হতে পারে সরাসরি কিংবা ফোনে।
অনেক সময়ই আমার মনে করে থাকি, যোগাযোগ করলে অপরপক্ষ সেটিকে ভালোমতো দেখবেন কি-না। বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই এমন একটা চিন্তা মাথায় আসে; গবেষণায় অন্তত সেটাই দেখা যায়।
এক্ষেত্রে লাবিয়ানকা বলেন, "ইতস্তত বোধ করা উচিত নয়। কেননা এক্ষেত্রে অপরপক্ষ আরও উচ্ছ্বাসিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে; যা দেখে আপনি অবাক হবেন।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান