মুনাফায় ফিরেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি তহবিল সফটব্যাংক
করোনাভাইরাস মহামারির মাঝে ফেসবুক, অ্যামাজন, গুগল এবং অ্যাপলের মতো শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানির পণ্য ও সেবার চাহিদা বাড়ছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে প্রযুক্তিখাতের শেয়ার মজুদের নতুন আগ্রহ। পুঁজিবাজারে এই প্রবণতা রাতারাতি আকাশছোঁয়া উচ্চতায় নিয়ে গেছে এসব কোম্পানির বাজারমূল্যকে।
একই ঘটনা ঘটেছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় একক বিনিয়োগ তহবিল জাপানের সফটব্যাংকের বাজারদরে। তবে এখানে কারণটা একেবারেই ভিন্ন। খবর সিএনএনের।
মহামারির আগেও গতবছরের শেষ নাগাদ সামগ্রিক অবস্থান মোটেও ভালো ছিল না সফটব্যাংকের জন্য। জাপানি বিনিয়োগ জোটটির আর্থিক অবস্থান আরো ঝুঁকিপূর্ণ বলে অনুমান করা হয়; উবার, ডিডি, ওয়ো এবং গ্র্যাবের মতো নতুন উদ্যোগে তাদের পুঁজি লগ্নির কারণে। বিনিয়োগ ঝুঁকি বিবেচনায় তখন বাজারমূল্যায়ন যেমন কমে, তেমনি নতুন উদ্যোগগুলো থেকে প্রত্যাশিত মুনাফা না আসার বোঝাও টানতে বাধ্য হয় সফটব্যাংক। বিপুল পরিমাণ সম্পদ বিক্রি করে টানতে হয় লোকসানের বোঝা।
তবে চিত্রটা বদলে গেছে একেবারেই। বর্তমান অবস্থায় সফটব্যাংকের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলেই প্রতীয়মান হয়। আজ মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) কোম্পানিটি গত জুনে সমাপ্ত প্রান্তিকে এক লাখ ২৬ হাজার কোটি ইয়েন বা এক হাজার ১৯০ কোটি ডলার মোট আয়ের ঘোষণা দিয়েছে। জুন প্রান্তিকের আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। একইসঙ্গে, গতবছরের বিপর্যয়ের পর এই প্রথম লাভের মুখ দেখার কথাও জানায় বিনিয়োগ সংস্থাটি।
সঙ্গতকারণেই এ ফলাফল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্দীপনা ও আশাবাদ জন্ম দেয় সফটব্যাংক ঘিরে। যদিও এ অবস্থা অনেকাংশে হয়েছে বিনিয়োগের ঝুঁকি কমিয়ে আনার পদক্ষেপে।
ইতোপূর্বে যার অংশ হিসেবে প্রায় ৪১শ' কোটি ডলারের সম্পদ বিক্রির ঘোষণা দেন সফটব্যাংকের মুখ্য নির্বাহী মাসায়োশি সন। দেনা কমিয়ে সম্পদ বিক্রির অর্থ দিয়ে পুনরায় কোম্পানির শেয়ার কিনে নেওয়া হয় বাজার থেকে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়া চীনের প্রযুক্তিখাতেও পুঁজি নিবেশ কমিয়েছে সফটব্যাংক। যার আওতায় বিনিয়োগ কমানো হয় চীনের ই-কমার্স জায়ান্ট আলীবাবা থেকেও।
তবে সফটব্যাংকের শেয়ারের দর রাতারাতি শক্তিশালী অবস্থানে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের টি-মোবাইল টেলিকম অপারেটরে তাদের বিনিয়োগ। যুক্তরাষ্ট্রে চীনা কোম্পানি হুয়াওয়েকে ৫জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে নিষিদ্ধ করার পর- স্থানীয় বৃহৎ অপারেটরদের সে সুযোগ দেওয়া হয়। এই সুযোগে নিজেদের ব্যবসার সম্প্রসারণ করেছে টি-মোবাইল। এ বিনিয়োগের সুবাদে সফটব্যাংকের শেয়ারপ্রতি দর চলতি বছর এক-তৃতীয়াংশ বেড়েছে। আর গত মার্চের সাম্প্রতিক নিম্নদরের চাইতে যা বাড়ে ১৪০ শতাংশ।
সফটব্যাংক অবশ্য বাজারদর আরো বৃদ্ধির আশায় যুক্তরাজ্যের একটি চিপ নির্মাতা –আর্ম হোল্ডিংসে তাদের অংশীদারিত্ব বিক্রির চিন্তাও করছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন। অন্যদিকে ব্লুমবার্গ জানায়, সফটব্যাংক সমর্থিত ওলোসফট কেনার আলোচনা চালাচ্ছে ব্রিটিশ কোম্পানি অ্যাভিভা গ্রুপ। এসব বিক্রয় সে অর্থে পুনরায় শেয়ার কিনে নেওয়ার মধ্যে দিয়েই সফটব্যাংককে আপাতত সঙ্কটের মেঘ থেকে সম্ভাবনার রোদের নিচে আনতে পেরেছেন মূখ্য নির্বাহী মাসায়োশি সন।