চীন, মেক্সিকোকে পেছনে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রের ডেনিম বাজারে শীর্ষে বাংলাদেশ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিম বা জিন্স রফতানিতে চীন, মেক্সিকোকে পেছনে ফেলে শীর্ষ দেশ হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। যদিও এবছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে রফতানির পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে কিছুটা কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অধিদপ্তরের টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল কার্যালয়ের (ওটেক্সা) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ১৯০ দশমিক ১৪ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম রফতানি করেছে। আর ১৮৪ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম পন্য রফতানি করে মেক্সিকো আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। চতুর্থ অবস্থানে আছে চীন। এসময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১২০ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম রপ্তানি করেছে দেশটি ।
এই তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম। এবছরের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪৩ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম পণ্য রফতানি করেছে দেশটি।
বাংলাদেশে এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা জানালেন, করোনা মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে চীন, মেক্সিকোর রফতানি প্রায় অর্ধেকে কমে এসেছে। একারণেই ডেনিম রফতানিতে বাংলাদেশ এই দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে গেছে।
যতদিন এই দুইটি দেশ করোনার কারণে সৃষ্ট অসুবিধাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে, ততদিন বাংলাদেশ ডেনিম রফতানির এই শীর্ষস্থান ধরে রাখতে পারবে বলে আশা করেন তারা।
গত কয়েক বছর ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে শীর্ষ ডেনিম রফতানিকারক দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
এদিকে করোনা মহামারির দ্বিতীয় প্রবাহকে উপেক্ষা করে ইতোমধ্যেই ইউরোপের কাপড়ের দোকানগুলো ব্যবসা চালু করেছে। এর ফলে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এসে ব্যবসায়ের অবস্থা ভালো হবে বলে আশা করছেন এই শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চট্টগ্রামভিত্তিক ডেনিম রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেড এর পরিচালিক সৈয়দ এম তানভির বলেন, সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি ডেনিম রফতানিকারকদের প্রবেশ বাড়বে, তবে দেশটিতে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া বেশি সুবিধা পাবে।
আর রাজনৈতিক কারণেই দেশটিতে মেক্সিকো ও চীনের রফতানির পরিমাণ কমেছে বলে মনে করেন তিনি।
দেশের শীর্ষ ডেনিম রফতানিকারক একটি কারখানার এক কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা পরিস্থিতি মহামারি ভয়াবহ মোড় নেওয়ায় পোশাকের দোকানগুলো বন্ধ করে দেওয় হলেও এবছর জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ডেনিম পণ্য নিয়েছে দেশটি।
তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক পোশাক বিক্রি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষনা করেছে এবং বিশ্বব্যাপী অর্ডার বাতিল করেছে। যদিও এতে বাংলাদেশের পণ্য রফতানিতে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি।'
তিনি আরও বলেন, 'গত বছরের মতো না হলেও বায়ারদের কাছ থেকে আমরা বেশ ভালোই সাড়া পেয়েছি। আশা করছি এই বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এসে ব্যবসায় ভালো পরিস্থিতি দেখতে পাব।'
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অধিদপ্তরের টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল কার্যালয়ের (ওটেক্সা) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশে ২৪৭ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম রফতানি করেছিল। আর ২০২০ সালের প্রথমার্ধে এসে এর পরিমাণ কমেছে ২৩ দশমিক ০৩ শতাংশ। এবছর রফতানির পরিমাণ ১৯০ দশমিক ১৪ মিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের মোট ডেনিম পণ্য আমদানির পরিমাণও কমেছে। গত বছর প্রথম ছয় মাসে মোট ১,৭৪৮ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম পণ্য আমদানি করেছিল দেশটি। আর ২০২০ সালের প্রথমার্ধে এর পরিমাণ কমেছে ৩৭ দশমিক ৮২ শতাংশ, ১ হাজার ৮৩ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম আমদানি করেছে দেশটি।
আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জুলিয়া হিউজেস বলেন, "বিশ্বব্যাপী মহামারির প্রতিক্রিয়া হিসাবে পাইকারি ও খুচরা বাণিজ্য পতনের ফলে ডেনিমের আমদানিও নানা ধরণের বাধার মুখে পড়েছে।"
জুলিয়া জানান, যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিম পণ্য রফতানিতে মূলত এশিয়ান দেশগুলোর অংশগ্রহণ ক্রমেই বাড়ছে।
তিনি বলেন, 'ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়াই এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তুলনামূলকভাবে বেশি ডেনিম পণ্য রফতানি করছে'।
এখানে আগে ডেনিম রফতানিতে শীর্ষ অবস্থানে ছিল মেক্সিকো। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যে চুক্তির কারণে এখাতে রফতানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে নেমে এসেছে দেশটি।
২০১৯ সালে প্রথমার্ধে মেক্সিকো ৪১০ দশমিক ০৭ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম রপ্তানি করেছিল। এবছর এর পরিমাণ ৫৪ দশমিক ৯ শতাংশ কমে ১৮৪ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে।
তৃতীয় অবস্থানে আছে আরেক এশিয়ান ডেনিম রফতানিকারক দেশ ভিয়েতনাম। এবছরের প্রথমার্ধে দেশটি শীর্ষ দশ রফতানিকারকদের মধ্যে দশমিক ৬৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে দেশটি।
গতবছর প্রথমার্ধে ভিয়েতনামের রফতানির পরিমাণ ছিল ১৪২ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ডলার। আর এবছর এর পরিমাণ বেড়ে ১৪৩ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম পণ্য রফতানি করেছে দেশটি।
এদিকে করোনা মহামারির ক্রমবর্ধমান ধাক্কায় বছরের প্রথমার্ধে রফতানিতে পিছিয়ে পড়েছে চীনের ব্যবসায়ীরা। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য সংঘাত তো আছেই। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডেনিম রফতানির ক্ষেত্রে চতুর্থ অবস্থানে নেমে এসেছে দেশটি।
২০১৯ সালের প্রথমার্ধে চীনের ডেনিম রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৭০ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ডলার। এবছর এর পরিমাণ ৬৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১২০ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলারে।
এদিকে ওটেক্সার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডেনিম রফতানিতে ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এশিয়ার আরেক দেশ কম্বোডিয়া। ২০১৯ সালের প্রথমার্ধে দেশটি ৪৫ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম রফতানি করেছিল যা এবছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ দশমিক ০৩ মিলিয়ন ডলারে।
পাকিস্তান থেকে মার্কিন মুলুকে ডেনিম আমদানি ১৫.৮ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১০০.৬৮ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, ২০১৯ সালের একই সময়ের মধ্যে যার পরিমাণ ছিল ১১৯.৪০ মিলিয়ন ডলার।
মিশরের রফতানিও ৩৪.৯৮ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৪৮.৯ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের প্রথমার্ধে ৭৫.২০ মিলিয়ন ডলার ছিল।
নিকারাগুয়ার রফতানি ৩১.১০ শতাংশ কমে ৩৪.০২ মিলিয়ন ডলার এবং ইন্দোনেশিয়ার ৪৬.২৯ শতাংশ কমে ১৮.৮৫ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
মূল লেখা: Bangladesh's denim overtakes Mexico, China in US