ভারতের শাসন করার বিশ্বকাপে ব্যাটে-বলে সেরা আফগানরা
জয়ে শুরু, জয়েই শেষ। মাঝে কেবলই জয়ের মালা গেঁথে গেছে ভারত ক্রিকেট দল, তাদেরকে হারের স্বাদ দিকে পারেনি কোনো প্রতিপক্ষই। জয়ের সুরে গান বেধে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতেছে রোহিত শর্মার দল। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। ব্যাটে-বলে সেরা পারফরম্যান্স করেই এই সাফল্য মিলছে তাদের। কিন্তু ব্যাটে-বলে সেরার তালিকায় শীর্ষে আফগানিস্তানের ক্রিকেটাররা।
১৭ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে ভারত, সবখানে চলছে রোহিত-কোহলিদের স্তুতি। কদিন আগে আফগানিস্তানও প্রশংসায় ভেসেছে। ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো কোনো বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ওঠা আফগানরা হারিয়ে দেয় নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে। সুপার এইটের শেষ ম্যাচে তাদের শিকার বাংলাদেশ। এই ম্যাচ জিতেই শেষ চারের টিকেট কাটেন রশিদ-নবীরা।
ব্যাটিংয়ে মিডল অর্ডারের দুর্বলতা ছাড়া এবারের আফগানিস্তান দল সব দিক থেকেই ভারসাম্যপূর্ণ ছিল। ব্যাটে-বলে আলা ছড়িয়ে দলকে সামনে নিয়ে গেছেন আফগান ক্রিকেটাররা। এর মধ্যে দুজন একেবারেই ব্যতিক্রম। ডানহাতি ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও বাঁহাতি পেসার ফজলহক ফারুকী; দুজনই নিজেদের সেরা প্রমাণ করেছেন। ২৯ জুন পর্দা নামা বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন গুরবাজ, সর্বোচ্চ উইকেট ফজলহকের।
ব্যাট হাতে বেশিরভাগ ম্যাচে আফগানিস্তানকে পথ দেখান গুরবাজ। ৮ ম্যাচে ব্যাটিং করে ৩টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৫.১২ গড়ে ২৮১ রান করেন আফগান এই ওপেনার। বলাই বাহুল্য, বিশ্বকাপে এটাই তার সেরা পারফরম্যান্স। তার সেরা এবারের বিশ্বকাপেরও সেরা, সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সবার উপরে তিনি। দুই নম্বরে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা, ৮ ইনিংসে ৩টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৬.৭১ গড়ে ২৫৭ রান করেছেন তিনি।
তিন নম্বরে অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড। বাঁহাতি এই ওপেনার ২টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৪২.৫০ গড়ে ২৫৫ রাান করেছেন। চারে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার কুইন্টন ডি কক ৯ ইনিংসে ২টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৭.০০ গড়ে ২৪৩ রান করেছেন। তালিকার পাঁচ নম্বরে আরেক আফগান ইব্রাহিম জাদরান। ডানহাতি এই ওপেনার ৮ ইনিংসে ২টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৮.৮৭ গড়ে ২৩১ রান করেছেন। সেরা দশে নেই বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান। ১৫৩ রান করা তাওহিদ হৃদয় ১৮তম স্থানে।
ব্যাটিংয়ে মতো বোলিংয়েও দাপট দেখিয়েছেন আফগানরা, সেরা দশের মধ্যে তাদেরই তিনজন। ৮ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে সবার উপরে ফজলহক। সমান ১৭ উইকেট পাওয়া ভারতের পেসার আর্শদীপ সিং দুই নম্বরে। ১৫ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জেতা ভারতের আরেক পেসার জাসপ্রিতম বুমরাহ তালিকার তিন নম্বরে। সমান ১৫ উইকেট শিকার করা দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার আনরিখ নরকিয়া চার নম্বরে।
নেতৃত্ব ও পারফরম্যান্সে আফগানিস্তানকে সেমি-ফাইনালে তোলা লেগ স্পিনার রশিদ খান ১৪ উইকেট নিয়ে তালিকার পাঁচ নম্বরে। সেরা পাঁচে একমাত্র স্পিনার তিনিই। এর পরের জায়গাটি বাংলাদেশের লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের। প্রথম বিশ্বকাপেই আলো ছড়ানো ২১ বছর বয়সী এই তরুণ ৭ ইনিংসে নিয়েছেন ১৪ উইকেট। বোলিংয়ে সেরা দশে থাকা বাংলাদেশি একমাত্র বোলার তিনি। ৮ ইনিংসে ১৩ উইকেট নিয়ে সাত নম্বরে আফগান পেসার নাভিন-উল-হক।
অন্যান্য সেরার তালিকায় আছেন বেশ কয়েকটি দেশের ক্রিকেটার। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কোনো সেঞ্চুরি হয়নি, সর্বোচ্চ ৯৮ রানের ইনিংস খেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরান। তার মারা ১৭টি ছক্কাও এবারের আসরের সর্বোচ্চ। তার দল গড়েছে এবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২১৮ রান তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হওয়ার পাশাপাশি সেরা বোলিংও ফজলহকের, আফগান বাঁহাতি এই পেসার উগান্ডার বিপক্ষে ৯ রানে নেন ৫ উইকেট।