নিরাপত্তারক্ষীকে গাড়িচাপা দেওয়া ব্যক্তি এখনো পলাতক, ‘বেপরোয়া চালানো’র দায়ে মামলা: পুলিশ
রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে গাড়ি দিয়ে ভবনের নিরাপত্তারক্ষী ফজলুল হককে চাপা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত মফিদুল ইসলাম (৬৯) এখনো পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আহাদ আলী বলেন, আসামি এখনও পলাতক। এ ঘটনায় 'বেপরোয়া গাড়ি চালানোর' দায়ে মামলা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে একাধিক সূত্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছে, অভিযুক্ত মফিদুল ইসলামও দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন এবং তিনি বর্তমানে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
'অবহেলাজনিত হত্যা'র বদলে 'বেপরোয়া গাড়ি চালানোর' দায়ে কেন মামলা করা হলো, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ওসি আহাদ আলী।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানিয়েছিল, গেট খুলতে দেরি হওয়ায় বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ক্ষিপ্ত হয়ে মফিদুল তার গাড়ি নিয়ে ফজলুলকে ধাক্কা দেন।
তবে ওসি আহাদ আলী পরে টিবিএসকে বলেন, চালক ভুল করে ব্রেক প্যাডেলের পরিবর্তে গাড়ির অ্যাক্সিলারেটরে চাপ দেওয়ায় দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে।
সেদিন সকাল সোয়া ৮টার দিকে ভবনটির মালিক মফিদুল ইসলাম গাড়ি বের করার সময় বেপরোয়াভাবে ও অতিরিক্ত গতিতে ফজলুলকে ধাক্কা দিয়ে গেট ভেঙে বেরিয়ে যান বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
গাড়ির ধাক্কায় গেট খুলতে থাকা নিরাপত্তারক্ষী ফজলুল (২৫) মারাত্মকভাবে আহত হন। তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার আধাঘণ্টা পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
যা বলা হয়েছে এজাহারে
নিহত ফজলুলের স্ত্রী শরীফা বেগম (২৫) বৃহস্পতিবার রাতে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ৯৮ ও ১০৫ ধারায় বেপরোয়া ও দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগে মামলা করেন।
মামলায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মফিদুল ইসলামকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে।
বাদি শরীফা বেগম এজাহারে বলেন, তার স্বামী ফজলুল হক ঢাকায় সেফ ফোর্স সিকিউরিটি প্রাইভেট লিমিটেড নামক একটি নিরাপত্তা সেবা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার তাকে শ্যামলিয়া ভবনে সকাল ৬টা থেকে নিয়োগ করা হয়।
'[দুর্ঘটনার পর] আমার স্বামী ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান এবং ড্রাইভার পরে তাকে ধাক্কা দেয়। এতে আমার স্বামীর মেরুদণ্ড ভেঙে যায়,' টিবিএস-এর দেখা এজাহারে বলেন বাদি শরীফা।
এজাহার অনুযায়ী, গুরুতর জখম ফজলুলের ডান হাত, কপাল ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কাটা চিহ্ন পাওয়া যায়। 'আমার স্বামীর রক্তাক্ত দেহ ফেলে আসামিরা পালিয়ে যায়। একই কোম্পানির নিরাপত্তারক্ষী সজন পরে আমার স্বামীকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।'
হাসপাতালে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফজলুল হককে মৃত ঘোষণা করেন।
'পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড'
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সঙ্গে আলাপকালে শরীফা বলেন, 'এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা গেলেই কারণ জানা যাবে।'
'আমার দুটি মেয়ে আছে। বড়টির বয়স পাঁচ বছর এবং ছোট মেয়ের বয়স ১৬ মাস। আমার মেয়ে দুটো এতিম হয়ে গেল। এখন আমরা কীভাবে চলব? আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই,' বলেন তিনি।
ফজলুলের বোন মিনারা বেগম জানান, ঘটনার পর চুন্নু ও শাহজাহান নামক দুই ব্যক্তি নিজেদেরকে রাজাবাজারের স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতা পরিচয় দিয়ে 'পুরো বিষয়টি ম্যানেজ করার' চেষ্টা করেন।
'বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমাদের একাধিকবার কাউন্সিলর অফিসে নেওয়া হয়েছিল। আমাদের সঙ্গে মীমাংসার কথা বলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে,' অভিযোগ করেন তিনি।
টিবিএস নিরাপত্তা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সেফ ফোর্স সিকিউরিটি প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা রাজি হয়নি।
ফজলুল হক গত তিনমাস ধরে পূর্ব রাজাবাজারের ওই ভবনে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পূর্ব রাজাবাজার মসজিদের পাশে শ্যামলিয়া ভবনের নিচতলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।
অন্যান্য দিনের মতো বৃহস্পতিবারও সকাল সোয়া আটটার দিকে তিনি ভবনের মালিক বের হওয়ার আগে প্রধান ফটক খুলছিলেন। জানা গেছে, গাড়ির নিয়মিত চালককে সরতে বলে মফিদুল ইসলাম নিজেই চালকের আসনে বসেন।
এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গাড়িটি দ্রুতগতিতে ফটক লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়ে ফজলুল এবং গেট উভয়কে ধাক্কা দেয়। এতে গেটের একটি অংশও ভেঙে যায়।
বেপরোয়া গাড়ি চালানোর শাস্তি
সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ৯৮ ধারা অনুযায়ী, ওভারলোডিং, বেপরোয়া বা তীব্রগতিতে গাড়ি চালানোর মাধ্যমে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর জন্য সর্বোচ্চ তিনবছরের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব তিনলাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
আদালত জরিমানার সম্পূর্ণ বা আংশিক অংশ ক্ষতিগ্রস্তকে প্রদানের আদেশ দিতে পারেন।