পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল ও তার স্ত্রীর ১১ কোটি টাকার সম্পদ জব্দের আদেশ
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনে সাড়া দিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা বেগমের প্রায় ১১ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুন্নেছার আদালত সোমবার (৮ জুলাই) এই আদেশ দেন।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপ-পরিচালক নাজমুস সায়াদাত টিবিএসকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, "একটি অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা বেগমের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের পক্ষ থেকে এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত শুনানি শেষে সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন।"
কামরুল হাসান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আদালতে দায়ের করা আবেদন সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদ কামরুল হাসান বর্তমানে— অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, ক্রাইম, সিএমপি— এর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেনকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
অনুসন্ধানকালে সরেজমিনে পরিদর্শন, প্রাপ্ত রেকর্ডপত্রাদি এবং সংশ্লিষ্টদের গৃহীত বক্তব্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট জনাব মোহাম্মদ কামরুল হাসান ১৯৮৯ সালে সাব-ইন্সপেক্টর পদে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে যোগদান করেন। চাকরির ধারাবাহিকতায় পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) হিসেবে সিএমপি, চট্টগ্রামে কর্মরত আছেন।
অনুসন্ধানে মোহাম্মদ কামরুল হাসান এর নামে ১২,৭২,৯২,৬৯৫ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১,২৩,৩৯,২১৬ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১৩,৯৬,৩১,৯১১ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়া, একই সময়ে তার মোট ৭০,২৮,২৪১ টাকা পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়ের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ, পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ১৪,৬৬,৬০,১৫২ টাকা। এই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৪,৮০,৩২,০৮৭ টাকা। এক্ষেত্রে তার অর্জিত সম্পদের চেয়ে তার বৈধ আয়ের উৎস থেকে ৯,৮৬,২৮,০৬৫ টাকা কম পাওয়া যায়। অর্থাৎ, তার নামে ৯,৭৩,২২,০৪৪ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য মিলেছে।
একইভাবে অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় তার স্ত্রী সায়মা বেগমের নামেও ১,২৫,০০০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১,৯৯,২৮,২৪০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২,০০,৫৩,২৪০ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এই সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি তার ২৮,৯০,২৭৪ টাকা দায় থাকার তথ্যও পাওয়া গেছে। দায় বাদে ১,৭১,৬২,৯৬৬ টাকার সম্পদ রয়েছে তার।
এছাড়া, একই সময়ে তার মোট ৩১,৩৬,৬৫৫ টাকা পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়ের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ২,০২,৯৯,৬২১ টাকা। এই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৪০,১৪,৪৩৩ টাকা। এক্ষেত্রে তার অর্জিত সম্পদের চেয়ে তার বৈধ আয়ের উৎস ১,৬২,৮৫,১৮৮ টাকা কম পাওয়া যায়। অর্থাৎ তার নামে ১,৬২,৮৫,১৮৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে, প্রাপ্ত রেকর্ডপত্রের আলোকে মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও সায়মা বেগমের নামে জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণ পাওয়ায় তাদের উভয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (১) ধারা মোতাবেক পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির সুপারিশ করে গত ১৩ মে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।