শাবিপ্রবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ, বিক্ষোভ মিছিল
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, রবিবার (১৪ জুলাই) দিবাগত রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে তাদের বিক্ষোভে ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
এ হামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন, রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ গালিব ও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম। আহত শিক্ষার্থীরা রাতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
জানা যায়, আজ দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ও হল প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে অবস্থান নেন তারা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শাবি শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালি বলেন, 'গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যসহ সরকার পক্ষের অনেকের বক্তব্য আমাদের কাছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হয়েছে। তারা আমাদের যৌক্তিক এক দফা আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য এই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। এছাড়া ছাত্রলীগ গতরাতে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। আমরা আমাদের এক দফা আন্দোলনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি; কিন্তু এরপরেও যদি কেউ হামলা করে আমরা তার প্রতিরোধ গড়ে তুলব।'
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের প্রতিবাদে গতরাতে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের স্লোগানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপমান করা হচ্ছে- এমন দাবি করে এবং এর প্রতিবাদে ছাত্রলীগও ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে।
পরে রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের দুই মিছিল মুখোমুখি হলে শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা করে বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা। এতে তিনজন শিক্ষার্থী আহত হন।
হামলার অভিযোগ করে আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, 'আমরা ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল করছিলাম। এর মধ্যে আমরা খবর পাই, মিছিলে আসতে আগ্রহী হলের কিছু ভাইকে ছাত্রলীগ আসতে বাধা দিচ্ছে। তাই আবাসিক ছাত্র হল অভিমুখে গেলে পথিমধ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের মিছিলে বাধা দেয়। একপর্যায়ে তারা হামলা করে।'
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, 'হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। সবার কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে, তা দেখলেই বোঝা যাবে। বরং আমরা সড়কের পাশে গিয়ে তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।'
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, 'দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে তা স্বাভাবিক হয়ে যায়। বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত।'
গত ১ জুলাই থেকে চার দফা দাবিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে রয়েছেন। ২ জুলাই থেকে শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি, বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। পরে ৪ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালাতে থাকে।
রবিবার এক দফা দাবিতে পদযাত্রা নিয়ে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
এরপর তারা ঘোষণা দেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চান তারা। কোনো পদক্ষেপ না এলে তারা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।