ছাত্রনেতা ও আন্দোলনকারীদের ‘নির্বিচারে’ আটক ও ‘গণগ্রেপ্তার’ বন্ধের আহ্বান অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের
সরকারকে 'শাস্তিমূলক গণগ্রেপ্তার' এবং ছাত্রনেতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভকারীদের 'নির্বিচারে' আটক বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর বাংলাদেশে এক সপ্তাহে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী '৯ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রপ্তার'-এর প্রতিক্রিয়ায় সোমবার (২৯ জুলাই) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি এ আহ্বান জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক স্মৃতি সিং বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গণগ্রেপ্তার ও নির্বিচারে আটক করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, এই গ্রেপ্তারগুলো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দশ্যপ্রণোদিত। সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস করেন, এমন যে-কারও মুখ বন্ধ করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ভয়ের পরিবেশকে আরও জোরালো করতে গ্রেপ্তার ও আটককে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
স্মৃতি সিং আরও বলেন, মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের প্রতি বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে সম্মান জানাতে হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই যথাযথভাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন নিশ্চিত করতে হবে।
স্মৃতি সিং বলেন, বিক্ষোভে যারা শান্তিপূর্ণভাবে অংশ নিয়েছেন, তাদের শাস্তি দিতে যেন মিথ্যা অভিযোগ আনা না হয়, তা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করা কোনো অপরাধ নয়। বাংলাদেশে ভিন্নমতাবলম্বীদের গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বকর মজুমদারকে মেডিকেল অফিসারদের চিকিৎসাধীন রোগীদের না নেওয়ার পরামর্শ উপেক্ষা করে ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে সাদাপোশাকের পুলিশ সদস্যরা হেফাজতে নিয়ে যান। তাদের মোবাইল ফোনও জব্দ করা হয়। পরের দুই দিনে আরও তিন সমন্বয়কারী সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও নুসরাত তাবাসসুমকে আটক করা হয়।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান পরে বলেছিলেন, সমন্বয়কারীদের 'নিরাপত্তার জন্য হেফাজতে' নেওয়া হয়েছে। রোববার (২৮ জুলাই) পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন আন্দোলনের সমন্বয়করা একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে মৃত্যু, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বিক্ষোভকে ঘিরে সহিংসতার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা প্রায় ২০০টি মামলায় ২.১৩ লাখেরও বেশি মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এই অভিযুক্তদের অধিকাংশই অজ্ঞাত।