বরাদ্দ সত্ত্বেও নতুন ওয়ার্ডের সড়ক উন্নয়নে এক টাকাও ব্যয় করেনি ঢাকা দক্ষিণ
গত অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও কাজ হয়নি এক টাকারও।
২০১৬ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাথে নতুন ৮টি ইউনিয়নকে যুক্ত করে ১৮টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়। কিন্তু এ এলাকাগুলো যুক্ত হওয়ার পরে আজও উন্নয়নের কাতারে পৌঁছাতে পারেনি।
যদিও সিটি কর্পোরেশন বলছে, রাস্তার অবকাঠামোর জন্য কোনো কাজ শুরু করা যায়নি, কারণ এখনও মূল্যায়ন চলছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বুধবার (৩১ জুলাই) নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছে। নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ৬৭৬০.৭৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। এর সাথে গত অর্থবছর ২০২৩-২৪ এর ২৫৪১.৮৬ কোটি টাকার সংশোধিত বাজেটও উপস্থাপন করা হয়।
এছাড়া, ঢাকায় বেকারত্ব দূর করতে পাঁচ বছর মেয়াদী একটি উদ্যোগের ঘোষণাও দেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলন, "নতুন এলাকার প্রধান রাস্তাগুলোর কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি, কারণ এখনও তাদের যাচাই-বাছাই চলছে। সিটি কর্পোরেশনের পরিকল্পনা হলো, প্রধান রাস্তাগুলোর দুই পাশে ৫ ফুট করে ১০ ফুট ফুটপাত এবং নূন্যতম ২০ ফুট রাস্তা রাখতে হবে। তবে নিয়মিত সংস্কারের কাজ চলছে।"
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে ১১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
দক্ষিণ সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও এখনো অনেক পিছিয়ে। এরপরেও এ খাতে কমেছে বাজেট। গত অর্থবছরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ ছিল ৩০.০২ কোটি টাকা, আর নতুন অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৫.০২ কেটি টাকা।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ কমের বিষয়ে দক্ষিণ সিটি বলছে, খালগুলো পরিষ্কারের প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে তাই এ খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এতে স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটবে না।
গত অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসসিসি তার বরাদ্দকৃত বাজেটের মাত্র ৩৭.৬৫ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে।
৬,৭৫১.৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে মাত্র ২,৫৪১.৮৬ কোটি টাকা ব্যবহার করা হয়েছে। সরকারি ও বৈদেশিক সাহায্য থেকে উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য ৪,৪৫৮.৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও ব্যয় হয়েছে মাত্র ৭১৬.৩৩ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের মাত্র ১৬ শতাংশ।
এ বিষয়ে তাপস বলেন, "আমাদের সক্ষমতা ও রাজস্ব বেড়েছে। তবে সরকারি ও বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দে তারতম্য রয়েছে; কোনো কোনো বছর সরকার কম বরাদ্দ দেয়, আবার কোনো বছর বেশি। এই খাতকে বাদ দিলে আমাদের বাজেটে ভারসাম্য বজায় থাকে।"
নতুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে, উল্লেখযোগ্য ব্যয়ের ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে ৫৫৩.৬০ কোটি টাকার পরিচালন ব্যয় এবং দক্ষিণ সিটির নিজস্ব তহবিল থেকে ১,০০৫.৩১ কোটি টাকা উন্নয়ন ব্যয়।
নতুন বাজেটে মশক নিধনে বরাদ্দ বেড়েছে ১.৫ কেটি টাকা। গত অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৮.৫ কেটি টাকা এবং ব্যয় হয় ৩৮.৮৩ কোটি টাকা।
মেয়র তাপস বলেন, "বিগত ৪ বছরে আমরা নতুন আরও ৫৩৫টি ফগার মেশিন, ৬০০টি হস্তচালিত যন্ত্র ও ২৯টি হুইল বরো মেশিন ক্রয় করেছি। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ হতে মুক্তি দিতে বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার আলোকে গত মে মাসে আমরা সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজন সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের সাথে মতবিনিময় করেছি। মতবিনিময় সভায় দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়ার পাশাপাশি মশক নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।"
ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসণে এবারে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৪০.৪২ কোটি টাকা। ডাস্টবিন, এসটিএস নির্মাণ ও সংস্কারে বরাদ্দ কমেছে ৫০ শতাংশ। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮ কোটি টাকা, গত অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৯.২১ কোটি টাকা।
তাপস বলেন, "কর্মজীবী মানুষ বিশেষত নারীদের সুবিধার্থে আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে ন্যূনতম একটি করে গণশৌচাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় বিগত ৪ বছরে ৩৬টি গণশৌচাগার নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। একই সময়ে নিজস্ব অর্থায়নে ৩, ৮, ১২, ১৮, ১৯, ৩২ ও ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৭টি নতুন গণশৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে।"
ঢাকার জনসংখ্যার কর্মসংস্থানের দায়িত্ব নেবে দক্ষিণ সিটি
ঢাকাবাসীর সকল পরিবারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে মেয়র তাপস পাঁচ বছর মেয়াদী 'মেয়র শেখ তাপসের কর্মসংস্থান কর্মসূচি— ঢাকা হবে বেকারমুক্ত নগরী' কর্মসূচি ঘোষণা করেন। যার উপকারভোগী হবেন ঢাকা দক্ষিণের স্থায়ী বাসিন্দা, ভোটার এবং হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানকারী ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যগণ।
"আমরা অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন নেব। যারা নিয়মিত দক্ষিণ সিটিতে কর প্রদান করেন, তাদেরকে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের আমরা প্রাধান্য দেব। সেটা পুঁজি হোক, দোকান বরাদ্দ হোক কিংবা চাকরির ব্যবস্থা হোক।"
এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় ২০২৪-২০২৯ মেয়াদে কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা দক্ষিণ।
মেয়র তাপস বলেন, "উদ্যোগী ব্যক্তি নিজস্ব ব্যবসা শুরুর লক্ষ্যে বিনা জামানতে সুদমুক্ত ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ পাবেন। এছাড়া, বিনা জামানতে ব্যাংক থেকে ২-২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করবে ঢাকা দক্ষিণ।