এনজিও মুক্তি কক্সবাজার এর রোহিঙ্গা বিষয়ক ছয় প্রকল্প স্থগিত
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর অনুমোদন না নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণের জন্য ‘মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ’ ছয় হাজার নিড়ানি সদৃশ হাতিয়ার তৈরির ঘটনায় এনজিও ‘মুক্তি কক্সবাজার’ এর ছয়টি প্রকল্পের সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও ব্যুরোর এসাইনমেন্ট অফিসার সিরাজুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
‘মুক্তি কক্সবাজার’ এর প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, “আমাদের চলমান একটি প্রকল্পের নিড়ানি তৈরি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। না জেনে সংবাদকর্মীরা সেখানে ভূল তথ্য উপস্থাপন করেন। যেকোনো এনজিওর ভাল-মন্দ কর্মকান্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তা তদন্ত করে দেখে এনজিও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এনজিও ব্যুরো। যেহেতু আমাদের প্রকল্প নিয়ে প্রতিবেদন হয়েছে, সেহেতু তা তদন্তের স্বার্থে প্রকল্পগুলো স্থগিত করা হয়েছে।”
তিনি জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মুক্তি কক্সবাজার'র ৩০ টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেখান থেকে ৬টি প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে।
তার আশা, তদন্তের মাধ্যমে এনজিও ব্যুরো প্রকল্পের কোন অনিয়ম পাবেন না। তখন আবারও এসব প্রকল্প সচল করার অনুমতি দিবে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো।
গণমাধ্যমের তথ্য থেকে জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়ার ভালুকিয়ায় এক কামারের দোকানে তৈরিধীন নিড়ানি সদৃশ বিপুল পরিমাণ ‘দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার’ করে উখিয়া প্রশাসন। ‘মুক্তি কক্সবাজার’ সরকারের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোকে অবগত না করে ‘গোপনে ওইসব অস্ত্র তৈরি করে’ তা রোহিঙ্গাদের মাঝে ‘সরবরাহ’ দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠে।
এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে মুক্তি কক্সবাজার এর পক্ষ থেকে বলা হয়, টেকনাফের হ্নীলার জাদিমুড়া এলাকায় চলমান হোস্ট কমিউনিটির চাষাবাদ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের পর তাদের সরবরাহ দিতেই এসব নিড়ানি টেন্ডারের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছিল।
তবে, ৬০০ স্থানীয় লোক সেখানে প্রশিক্ষণ নিলেও এত বেশী নিড়ানি তৈরি নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। এ বিষয়ে মুক্তি কক্সবাজারের দেয়া উত্তরও সন্তোষজনক ছিল না।
এছাড়াও কৃষি বিভাগ বলছে, নিড়ানি সদৃশ যেসব বস্তু পাওয়া গেছে তা কৃষিকাজে ব্যবহার্য নিড়ানির সাইজের সাথে মিলে না। এসব নিড়ানির সাইজ হাতলসহ সর্বোচ্চ এক ফুট দৈর্ঘের হয়। কিন্তু উখিয়ায় উদ্ধার নিড়ানি সদৃশ বস্তুগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় দুই থেকে আড়াই ফুট।
স্থানীয়দের মতে, নিড়ানি সদৃশ এসব বস্তু ও এর পরিমাণ দেখে মনে হচ্ছে মুক্তি কক্সবাজার এর কোনো ‘খারাপ উদ্দেশ্য’ ছিলো। এসব হাতিয়ার জব্দের পর থেকে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ‘মুক্তি কক্সবাজার’ এর রোহিঙ্গা বিষয়ক কার্যক্রম বন্ধের দাবিও জানান তারা।
তবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ‘বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র’ যে অভিযোগ তা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন মুক্তি কক্সবাজার এর প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও ব্যুরোর পাঠানো একটি পত্রের কপি পেয়েছি। এনজিও মুক্তি কক্সবাজারসহ অন্যান্য এনজিওগুলোর কার্যক্রম আরো গভীর ভাবে নজরে নিতে উখিয়া উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।”
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বলেন, “বিষয়টি অনভিপ্রেত। এনজিও ব্যুরোর পত্রটি অফিসে এসেছে। মুক্তি কক্সবাজারসহ সবার কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”