খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে অবশ্যই নির্বাচন করবেন: মির্জা ফখরুল
গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে বেশ টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। চরম আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এদিকে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে এনডিটিভির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়া বিএনপিকে নেতৃত্ব দেবেন যদি তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন। এছাড়াও দলটি ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করবে।
খালেদা জিয়া বর্তমানে জেল থেকে মুক্ত হয়েছেন। সেই হিসেবে তিনি নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবেন।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্পর্কে মহাসচিব বলেন, "তিনি খুব অসুস্থ, হাসপাতালে আছেন। তিনি নানামুখী রোগে ভুগছেন। এদেশে তার চিকিৎসা ঠিকঠাক চলছিল না। আমরা তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য বিচার বিভাগ ও সরকারের কাছে কয়েকবার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু তা হয়নি।"
মির্জা ফখরুল বলেন, "চিকিৎসকেরা বলছেন, খালেদা জিয়া এখন বিদেশে যাওয়ার উপযুক্ত নন। আমাদের তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার আগে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে অবশ্যই নির্বাচন করবেন।"
মির্জা ফখরুল জানান, বিএনপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হবে।
মহাসচিব বলেন, "পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার অবস্থানে নেই। তাই নির্বাচন ব্যবস্থায়ও কিছু সংস্কার আনতে হবে।"
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেছেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিকালে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, "সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফপূর্বক মুক্তির বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সুট্রিম কোর্ট হাই কোর্ট বিভাগের ক্রিমিনাল আপিল নং-১৬৭৬/১৮ (বিশেষ আদালত নং-৫, ঢাকা এর বিশেষ মামলা নং ১৭/২০১৭ থেকে উদ্ভূত) এবং বিশেষ আদালত নং-৫, ঢাকা এর বিশেষ মামলা নং-১৮/২০১৭ এ প্রদত্ত দণ্ডাদেশ মওকুফপূর্বক নির্দেশক্রমে মুক্তি প্রদান করা হল।"
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া যে কোনো দণ্ডের 'মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম' মঞ্জুর করার এবং যে কোনো দণ্ড 'মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস' করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে।
এর আগে বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়, তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সোমবারের বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে খালেদা জিয়াকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর।
এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। তিনি তখনও পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান