জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ১১.৬৬%, ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ
আগের মাসের চেয়ে গত জুলাই মাসে জাতীয় পর্যায়ে বেড়েছে সাধারণ মূল্যস্ফীতি। যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ সময়ে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ হারে, জুন মাসে যা ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।
জুলাই মাসে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে যথাক্রমে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ ও ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ হারে; যা আগের মাসে ছিল যথাক্রমে ১০ দশমিক ৪২ ও ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ।
আজ সোমবার (১২ আগস্ট) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
এর আগে গত মে মাসে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয় সাধারণ মূল্যস্ফীতি, এই হার ছিল ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সরকারি চাকুরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই মাসেই দানা বাঁধে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এসময় আওয়ামী লীগের সরকার ব্যাপক দমনপীড়ন চালায় দেশব্যাপী, পরে এই আন্দোলন পরিণত হয় ছাত্র-জনতার সংগ্রামে, বিক্ষোভকারীরা সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন। যার ধারাবাহিকতায় সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনার পতন ঘটে।
এছাড়া, জুলাই মাসের বেশকিছু দিন ধরে আন্দোলন দমনের জন্য দেশব্যাপী কারফিউ জারি করা হয়েছিল। এতে পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটে, ক্ষতি হয় ব্যবসাবাণিজ্য ও জনমানুষের দৈনন্দিন কাজে চলাচলের।
এসময় বন্দর ও রেল যোগাযোগও বন্ধ রাখা হয়েছিল।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, কোটাসংস্কার আন্দোলনের সময় জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচি, এরপরে সাবেক সরকারের কারফিউ দেওয়ার কারণে জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়েছে। '(পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে) মার্কেট -টু- মার্কেট কোনো যোগাযোগ ছিল না। যেখানে ঘাটতি বেশি ছিল– সেখানেই দাম বেশি বেড়েছিল। এছাড়া কোনো জায়গায় উদ্বৃত্ত থাকলেও – দাম কমেনি । ফলে এটা বলা যায়, যে মূল্যস্ফীতি বাড়ার প্রধান কারণ হলো সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়া।
এ ছাড়া অনিশ্চয়তার কারণে মজুত করার প্রবণতায়ও মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। কারফিউ থাকায় হয়তো এক সপ্তাহের বাজারও মানুষ করেছে। সবার একটু বেশি বেশি কেনার প্রবণতা থাকতে থাকতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া বিবিএসের ভীতি বা চাপমুক্ত তথ্যপ্রকাশের কারণেও সঠিক তথ্য উঠে আসতে পারে। নতুন সরকার আসার কারণে বিবিএসের হয়তো মূল্যস্ফীতি তথ্য প্রকাশে কোনো ধরণের ভয় কাজ করেনি। আগে আমরা মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি উঠতে দেখিনি। তবে সবাই বলেছে, মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি হয়েছে। যদিও বাজারে গেলে মূল্যস্ফীতি মনে হয় ২০ শতাংশের বেশি।