বিসিবিতে সরকারি হস্তক্ষেপ, অভিযোগ সাবেক পরিচালকের
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি, যাকে শিরোনামে সাবেক সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু তিনদিন আগেও তিনি প্রাসঙ্গিক ও বর্তমান ছিলেন, সামলাচ্ছিলেন টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধানের দায়িত্ব। ২১ আগস্ট তাকে পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, সেটাকে অগ্রহণযোগ্য বলছেন বর্ষীয়ান এই সংগঠক। এটাকে সরকারি হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন সাজ্জাদুল আলম।
এনএসসির মনোনীত হিসেবে দুজন বিসিবির পরিচালক হন। চলমান বোর্ডে সেই দুজন ছিলেন জালাল ইউনুস ও সাজ্জাদুল আলম। সরকার বদলের পর বিসিবিতে পরিবর্তন আনার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এ দুজনকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। গত ১৯ আগস্ট সকালে তাদেরকে ফোন করে পদত্যাগের অনুরোধ করেন এনএসসির সচিব আমিনুল ইসলাম। এমন বার্তা পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ইমেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন জালাল ইউনুস।
তবে পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান সাজ্জাদুল আলম। বিসিবির সাবেক এই পরিচালক এনএসসির সচিবকে জানান, এনএসসির মনোনীত হিসেবে বিসিবির পরিচালক হয়েছিলেন তিনি, কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার থাকলে এনএসসি নিয়ে তাকে যেন জানিয়ে দেয়। এর একদিন পর বিসিবির জরুরি সভা হয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে। যেখানে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে বিসিবির সভাপতি হিসেবে ১২ বছরের পথচলায় ইতি টানেন নাজমুল হাসান পাপন।
এই সভায় আমন্ত্রন জানানো হয়নি সাজ্জাদুল আলমকে, এদিনই অব্যাহতি দেওয়া হয় তাকে। খালি হওয়া দুটি জায়গায় পরিচালক করা হয় জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ ও প্রবীণ কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে। পরে পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত করা হয় ফারুক আহমেদকে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় নিজের অব্যাহতিকে সরকারি হস্তক্ষেপ মনে করেন সাজ্জাদুল আলম।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে প্রবীণ এই সংগঠক বলেছেন, 'জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এই সিদ্ধান্তে আমি বিস্মিত এবং স্তম্ভিত। যে হস্তক্ষেপেটা করেছে সরকার, তা ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকাণ্ডে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।' অব্যাহতি দেওয়ার কারণ ও অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি এনএসসি তাকে অবহিত করেনি বলেও জানান সাজ্জাদুল আলম। বুধবার সন্ধ্যার পর বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় পরিচালকদের বদলের নোটিশ পান তিনি।
সাজ্জাদুল আলম বলেন, 'এনএসসি থেকে আমি কোনো নোটিশ পাইনি। আমাকে একটি নোটিশ পাঠিয়েছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী। সভার দিনে সন্ধ্যা সাতটার পরে হোয়াটসঅ্যাপে নোটিশের একটি ছবি আমাকে পাঠিয়েছেন তিনি। এর আগে সভাতেও আমাকে ডাকা হয়নি। এবার নোটিশ দেয়নি, কোনো কাগজপত্র পাঠায়নি এনএসসির পক্ষ থেকে। নোটিশটি পাঠিয়েছেন সিইও, সেটাও অনেক পরে। আমি তাদেরই মনোনীত ছিলাম, আমাকেই তো জানাবে সরাসরি। কিন্তু সেটা করেনি। বিসিবিতে পাঠানোর পর সিইও ছবি তুলে আমাকে সেটা পাঠিয়েছেন।'
কী কারণে সরকারি হস্তক্ষেপের কথা বলছেন সাজ্জাদুল আলম? পরিচালককে অপসারণ করা বা অব্যাহতি দেওয়ার প্রক্রিয়াটা কী? বিসিবির গঠনতন্ত্রের ১৩.৩ ধারায় বলা হয়েছে একজন পরিচালকের পদ শূন্য হতে পারে মৃত্যু, পদত্যাগ, মানসিক ভারসাম্যহীনতা এবং শৃঙ্খলাজনিত কারণে শাস্তি প্রদানের প্রেক্ষিতে। প্রতিটা ক্ষেত্রেই থাকতে হবে উপযুক্ত নথি বা প্রমাণ।
সাধারণ পরিষদের সদস্যের অযোগ্যতার ক্ষেত্রেও এসব শর্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা আছে। আবার দুটির বেশি ক্রীড়া ফেডারেশনের কাউন্সিলর হলে বা একাধিক সংস্থা, ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করলেও সাধারণ পরিষদের সদস্য পদ বাতিল হয়ে যেতে পারে। এসব বিষয়ের শর্তের কোনোটি প্রযোজ্য না হলে কোনো কাউন্সিলরকে অপসারণের নিয়ম নেই। সাজ্জাদুল আলমের ক্ষেত্রে এসবের কোনোটিই ছিল না। এ কারণেই অব্যাহতির নোটিশে কারণ উল্লেখ করা হয়নি বলে বেশি বিস্মিত হয়েছেন তিনি।
সাজ্জাদুল আলমের সংগঠক ক্যারিয়ার দীর্ঘ। তরুণ বয়স থেকেই ক্রিকেট পরিচালনার কাজ করে আসা এই সংগঠক বিসিবি পরিচালক ও টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ১৯৮৩ সালে বিসিবিতে আসেন সাজ্জাদুল আলম, টানা কাজ করেন ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। ২০০৭ সাল পর্যন্ত বোর্ডে ছিলেন না তিনি। এরপর থেকে বিসিবিতে পরিচালকের পদে ছিলেন তিনি। এ ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার।