আদালত প্রাঙ্গণে হামলায় গুরুতর আহত সাবেক বিচারক মানিক, হাসপাতালে ভর্তি
আদালত প্রাঙ্গণে হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারক এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শনিবার (২৪ আগস্ট) রাতে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে সিলেটের ডিআইজি (প্রিজন) মো. ছগির মিয়া বলেন, 'শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মারধরে তার শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছে। একটি অণ্ডকোষ ফেটে গেছে। হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।'
তিনি বলেন, 'সীমান্তে আটকের সময়ই তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাকে আদালতে তোলার আগেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দরকার ছিল।'
এরপর কাল রাতে মানিকের ছোট একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই তার অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের পর তিনি সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে।
শনিবার বিকেল ৪টার দিকে সাবেক এ বিচারককে সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ আলমগীর হোসেনের আদালতে নেওয়া হয়। এ সময় আদালতের প্রবেশপথে তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, আদালতে প্রবেশের সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ও আদালত প্রাঙ্গণে থাকা দলবদ্ধ কিছু ব্যক্তি শামসুদ্দিন চৌধুরীকে বেধড়ক কিলঘুষি মারেন।। এ সময় তাকে শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করা হয়।
অনেকে ডিম ছোড়ার পাশাপাশি তাকে লক্ষ্য করে জুতাও নিক্ষেপ করেন। কেউ কেউ শামসুদ্দিন চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে 'ভুয়া ভুয়া'সহ বিভিন্ন কটূক্তিমূলক স্লোগান দেন।
পরে আদালতে তোলা হলে আদালত তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেন। আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার পথে সেনাবাহিনীর পাহারা থাকায় তখন কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ বা পরোয়ানা ছাড়াই কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারেন।
এর আগে শুক্রবার রাতে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় সাবেক বিচারক মানিক আটক হন।
সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, প্রথমে স্থানীয়দের হাতে আটক হন শামসুদ্দিন মানিক। পরে তাকে বিজিবির হাতে তুলে দেওয়া হয়।
বিচারক মানিক স্থানীয়দের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে অবৈধভাবে ভারত পালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আটকের পর স্থানীয়রা তাকে মারধর করে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয় বলে দাবি করেছেন তিনি।
শনিবার ভোরের দিকে দনা সীমান্ত বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে কানাইঘাট থানায় হস্তান্তর করেন। তার বিরুদ্ধে ঢাকায় মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলার সময় তৎকালীন আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন সাবেক বিচারক শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
সে সময় বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত হয়ে টকশোর উপস্থাপিকার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে টকশো শেষ হওয়ার পর ওই উপস্থাপিকাকে 'রাজাকারের বাচ্চা' বলেও তিরস্কার করতে দেখা যায় তাকে।
এ ঘটনায় তখন তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। পরে অবশ্য এক আইনি নোটিশের প্রেক্ষিতে তিনি তার ব্যবহারের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।