বাংলাদেশ থেকে মোটরসাইকেল রপ্তানি শুরু করেছে হোন্ডা
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া প্ল্যান্ট থেকে বিদেশে মোটরসাইকেল রপ্তানি শুরু করেছে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হোন্ডা। অর্থনৈতিক সংকটের এই সময়ে হোন্ডার মোটরসাইকেল রপ্তানি দেশের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাপানের হোন্ডা মোটর কোম্পানি এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড (বিএইচএল), মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সমুদ্রপথে ১৪টি হোন্ডা এক্স ব্লেড ১৬০ কমিউটার মোটরসাইকেল মধ্য আমেরিকার ক্রমবর্ধমান বাজার গুয়াতেমালায় পাঠিয়েছে।
এর মাধ্যমে রানার অটোমোবাইলসের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় কোম্পানি হিসেবে বিদেশে মোটরসাইকেল রপ্তানি শুরু করলো হোন্ডা। এই রপ্তানি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পর্যায়ক্রমে আমেরিকা এবং আফ্রিকার অন্যান্য বাজারেও সুযোগ খুঁজবে হোন্ডা।
বিএইচএল প্ল্যান্টে রপ্তানি শুরুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে মোটরসাইকেল তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এবং নকড ডাউন (কেডি) যন্ত্রাংশ আমদানি করতে কোম্পানির যথেষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয়। কিন্তু দেশে চলমান বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে ক্রমবর্ধমান এই চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিএইচএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও শিগেরু মাৎসুজাকি বলেন, "এই সমস্যা সমাধানে আমাদের দ্বিমুখী পদ্ধতি রয়েছে— প্রথমত, স্থানীয় ক্রয় বাড়ানো এবং দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে রপ্তানি শুরু করা– যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।"
বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১টি দেশে হোন্ডার উৎপাদন সুবিধা বা কারখানা রয়েছে।
বিএইচএল-এর চিফ মার্কেটিং অফিসার শাহ মুহাম্মদ আশেকুর রহমান বলেন, "মাঝারি আকারের বাজারে কঠোর প্রতিযোগিতা এবং কাঁচামালের জন্য আমদানি নির্ভরতার কারণে এখানে উৎপাদন ক্ষমতা ও কস্ট কম্পিটিটিভনেস তুলনামূলকভাবে কম।"
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "উদাহরণস্বরূপ, কাঁচামাল এবং যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর থেকে শুল্ক বাদ দিলে, বাংলাদেশে হোন্ডার উৎপাদন খরচ এ অঞ্চলের অন্যান্য উৎপাদন প্ল্যান্টগুলোর তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।"
এরপরেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার লক্ষ্যে, দেশের সাশ্রয়ী উৎপাদনের যাত্রায় বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড অবদান রাখবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে মোটরসাইকেল রপ্তানিতে ০.০৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিয়ে থাকে। তবে, উৎপাদন খরচ কমানোর ক্ষেত্রে এটি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলে মন্তব্য করেন শাহ মুহম্মদ আশেকুর রহমান।
রপ্তানি প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে, কোম্পানির কাঁচামাল এবং বিভিন্ন উপাদানের শুল্কমুক্ত আমদানি অথবা রপ্তানি পরবর্তী শুল্ক প্রত্যর্পণের (ডিউটি ড্রব্যাক) বিকল্প রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে উভয় ক্ষেত্রেই পৃথক সমস্যার কথা উল্লেখ করেন শাহ মুহাম্মদ আশেকুর রহমান।
কোনো বন্ডেড ওয়্যারহাউজের রপ্তানি ইউনিটে শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা পেতে হলে, কোম্পানিকে আরও বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করতে হয়। অন্যদিকে, শুল্প প্রত্যর্পণ পদ্ধতিতে পরিশোধিত শুল্ক ফিরে পেতে বাংলাদেশে রপ্তানির পর ৫ বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়; সেইসঙ্গে এরজন্য কয়েকশ কোটি টাকার অতিরিক্ত ওয়ার্কিং ক্যাপিটালেরও (কার্যকরী মূলধন) প্রয়োজন হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
"মোটরসাইকেল রপ্তানিতে কম্পিটিটিভ (প্রতিযোগিতামূলক) হওয়ার জন্য, আমাদের কেবল ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে কাঁচামাল এবং অন্যান্য উপাদানের শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা প্রয়োজন," যোগ করেন আশেকুর।
বিএইচএলের চিফ প্রোডাকশন অফিসার হিরোইউকি ইয়াসুনাগা বলেন, অন্যান্য জায়গার হোন্ডা প্ল্যান্টের মতো বাংলাদেশের প্ল্যান্টেও মোটরসাইকের উৎপাদনের মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
মোটরসাইকেল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০১৮ অনুসারে, বাংলাদেশ ২০২৭ সালের মধ্যে বছরে ১০ লাখ ইউনিট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এর বিপরীতে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৬.৪ লাখ ইউনিট উৎপাদন হয়। তবে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয় মার্কেটে বিক্রি হয় ৪ লাখেরও কম।
এদিকে, টানা ১২তম বারের মতো ২০২৩ সালেও টু হুইলার বা দ্বিচক্র যান বিক্রিতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে গুয়াতেমালা। গত বছর দেশটিতে ৫৬,০০০ ইউনিটেরও বেশি বিক্রি হয়েছে— যারমধ্যে হোন্ডার অবদান ছিল প্রায় এক-চতুর্থাংশ। বাংলাদেশেও একই পরিমাণ বিক্রি করেছে হোন্ডা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজারের প্রায় ১৫ শতাংশ বিএইচএল-এর দখলে ছিল।
জাপান, ভারত ও মেক্সিকোর অন্যান্য কোম্পানির পাশাপাশি কিছু স্থানীয় অ্যাসেম্বলারও বর্তমানে গুয়াতেমালার বাজারে ব্যবসা করছে।
মোটরসাইকেলসডেটা ডট কম- এর তথ্যমতে, আকারের দিক থেকে বর্তমানে বিশ্বের ২১তম বৃহত্তম টু হুইলার বাজার হলো গুয়েতেমালা।