ফ্রান্সে ওয়ার্ল্ডস্কিলস প্রতিযোগিতায় না যাওয়ার সিদ্ধান্তে গচ্চা যাচ্ছে ১.১৫ কোটি টাকা
বিশ্ব দক্ষতা প্রতিযোগিতা ওয়ার্ল্ডস্কিলস-এ অংশ নিতে ফ্রান্সে যাওয়ার কথা ছিল ২৩ সদস্যের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের। ফ্রান্সের লিওঁ শহরে তাদের থাকা-খাওয়া ও স্থানীয়ভাবে যাতায়াতের খরচ বাবদ সাড়ে ৮৭ হাজার ইউরো অগ্রিম পাঠিয়েছে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় এক কোটি ১৫ লাখ টাকা।
আগামী ৫–১৫ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের লিওঁ শহরে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাংলাদেশের আটজন প্রতিযোগী, সাতজন বিশেষজ্ঞসহ ২৩ জনের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণের কথা ছিল। এ সফর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুমোদন করেছিল।
৩১ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রতিনিধিদলের লিওঁ ট্যুরের বিষয়ে সরকারি আদেশ [জিও] জারি করে। এরপর ভিসার জন্যও আবেদন করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।
তবে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রতিনিধিদলের ফ্রান্স যাওয়ার অনুমোদন না দিয়ে অগ্রিম পাঠানো টাকা ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে, অগ্রিম পাঠানো টাকা ফেরত চেয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজকদের ইমেইলে যোগাযোগ করা হয়। তবে, 'টাকা ফেরত দেওয়া হবে না' বলে জবাব পায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়কে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপেক্ষর নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরিন আফরোজ স্বাক্ষরিত চিঠিটির একটি অনুলিপি দেখেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
ওয়ার্ল্ডস্কিলস লিওঁ ২০২৪-এর আয়োজকেরা জানিয়েছে, বাংলাদেশের পাঠানো অর্থ হোটেল ভাড়া, খাবার, এবং যাতায়াতের জন্য খরচ করা হয়ে গেছে। তাই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ অংশ না নিলেও ওই টাকা ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ওয়ার্ল্ডস্কিলস ইন্টারন্যাশনাল-এর নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৮৭ হাজার ৫০০ ইউরো পাঠানো হয়েছে। ডব্লিউএসএল২০২৪-এর প্যাকেজ নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিযোগিতার শুরুর আগে প্যাকেজ মূল্য পাঠানোর শর্ত ছিল। অগ্রিম অর্থ পাঠানোর শেষ সময় ছিল ৬ জুন। আয়োজক প্রতিষ্ঠানের প্যাকেজ নীতিমালা অনুযায়ী, বুকিং বাতিল করলে কোনো রিফান্ড দেওয়া হবে না।
হাসিনা সরকারের পতনের পর সার্বিক বিষয় উল্লেখ করে ২২ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পুনরায় সরকারি আদেশ জারির প্রস্তাব পাঠায় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার সময় জারি করা জিও বাতিল করে অগ্রিম পাঠানো ৮৭ হাজার ৫০০ ইউরো ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দেয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
অর্থ বিভাগকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ২ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ডস্কিলস ইন্টারন্যাশনাল-কে অগ্রিম পাঠানো অর্থ ফেরত চেয়ে অফিসিয়াল ইমেইল করা হয়েছে। ই-মেইলে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যা ও সার্বিক পরিস্থিতির কথা কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই দিনই টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ফিরতি ইমেইলে ওয়ার্ল্ড স্কিলস ইন্টারন্যাশনাল জানায়, 'দুঃখিত, ডব্লিউএসএল২০২৪ কোনো অর্থ ফেরত দিতে পারবে না। কারণ ইতোমধ্যে সব অর্থ খরচ করে ফেলা হয়েছে — আমাদের নীতি অনুযায়ী প্যাকেজগুলো থেকে কোনো লাভ করা হয় না। এছাড়া প্রতিটি সদস্য তাদের ব্যবহৃত পণ্য ও পরিষেবার জন্য খরচ বহন করেন।'
'যেহেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাত্র সাত দিন বাকি, ডব্লিউএসএল২০২৪ সব সাব-কন্ট্রাক্টরদেরকে বাসস্থান, যাতায়াত, খাবার ও পানীয় ইত্যাদির জন্য অর্থ পরিশোধ করেছে। এ মুহূর্তে কোনো রিফান্ড সম্ভব নয় — সাব-কন্ট্রাক্টররা এ পর্যায়ে এসে কিছু বাতিল করতে চাইবে না,' আরও বলা হয় ইমেইলে।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপেক্ষর নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরিন আফরোজের সঙ্গে টিবিএস টেলিফোনে একাধিক যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড স্কিলস ইন্টারন্যাশনাল-এর ৭৯তম সদস্য পদ লাভ করে। ২০১৯ সালে রাশিয়ার কাজান এবং ২০২২ সালে সুইজারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্ব দক্ষতা প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছিল।