নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অস্বস্তিতে মিরাজ
করোনাভাইরাসের কারণে থমকে গিয়েছিল সব। দীর্ঘ সময় ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। এ সময়ে ব্যাটিং-বোলিং করার সুযোগ ছিল না। কেবল ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছেন তারা। অচলাবস্থা শেষে জুলাইয়ের শেষে মাঠে ফিরেছেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু এতদিন পর মাঠে ফিরে অনেক কিছুই নতুন মনে হচ্ছে তাদের কাছে।
কেউ কেউ হারিয়েছেন বোলিংয়ের নিয়ন্ত্রণ আবার কেউ ব্যাটিংয়ের ছন্দ। এদের মধ্যে একজন মেহেদী হাসান মিরাজ। জাতীয় দলের ডানহাতি এই স্পিনার নিয়ন্ত্রণ পাচ্ছেন না বোলিংয়ে। যে কারণে অস্বস্তিতে দিন কাটছে তার। রোববার মিরপুরে অনুশীলনের পর মিরাজ জানান, বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণ থাকছে না তার।
তরুণ এই স্পিনার বলেন, 'অনেকদিন পর বোলিং শুরু করেছি মিরপুরে। ৫-৬ মাস পর এখানে বোলিং শুরু করেছি। তিন-চার দিন হলো এখানে বোলিং করছি, ভালো লাগছে। কিন্তু অনেকদিন পরে শুরু করায় নিয়ন্ত্রণ থাকছে না, অস্বস্তি লাগছে। তারপরও মনে করি যতটুকু সম্ভব নিজেকে ফিট করে তাড়াতাড়ি মাঠে খেলার জন্য প্রস্তুত হওয়া যায়।'
গত ১৯ জুলাই থেকে দেশের চারটি ভেন্যুতে অনুশীলন শুরু হয়। একদিন পরই খুলনায় যোগ দেন মিরাজ। সেখানেও বোলিং করেছেন তিনি। কিন্তু পুরনো ছন্দ ফিরছে না। যা নিয়ে দ্বিধায় তিনি, 'এর আগে খুলনাতে বোলিং করেছি, অনুশীলন করেছি। মিরপুরে বেশ কয়েকদিন হলো শুরু করেছি। একটু দ্বিধায় আছি। বোলিং হয়তো তেমন ভালো হচ্ছে না, যেমন আমি চাচ্ছি। চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব আমার নিজের জায়গায় বোলিংটা আনার।'
চেনা ছন্দে ফিরতে না পেরে অস্থিরতা কাজ করছে মিরাজের মধ্যে। যে কারণে ভালোমতোই মন লাগিয়েছেন অনুশীলনে। বাংলাদেশের হয়ে ২২ টেস্ট, ৪১ ওয়ানডে ও ১৩টি টি-টোয়েন্টি খেলা এই অলরাউন্ডার বলেন, 'যে জিনিসগুলো দরকার সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। আমার কোচের সাথেও কথা বলেছি, তিনিও আমার সাথে অনেক আলোচনা করেছেন কীভাবে করলে ভালো হয়।'
২০১৬ সালে অভিষেকের পর টানা তিন বছর দারুণ কেটেছে মিরাজের। কিন্তু লকডাউনের আগের কয়েকটি সিরিজে নিজেকে মেলে ধরা হয়নি তার। অন্যদের মতো মিরাজের উপলব্ধিও এমনই। এরপর লকডাউনে বোলিং নিয়ে কাজ করার সুযোগই হয়নি। সব মিলিয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়ার ব্যাপারটি ডানহাতি এই স্পিনার নিজেই মেনে নিচ্ছেন।
২২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার বলেন, 'আমার অভিষেক থেকে টানা তিন বছর ভালোই গিয়েছে। কিন্তু লকডাউনের আগের সিরিজটা বা এর আগের দুই-তিনটা সিরিজে যে রকম চেয়েছি, সে রকম হয়নি। সেটা নিয়ে কাজ করেছি, তার ভেতর লকডাউন আসায় সেভাবে করতে পারিনি। সামনে খেলা শুরু হচ্ছে, অনুশীলন শুরু হয়েছে। যতটুকু সম্ভব নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ভালো করার চেষ্টা করব। আগে যে রকম বোলিং করতাম, সেই ছন্দে ফিরে আসতে চাই।'
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের স্পিনাররা সব সময়ই অনুজ্জ্বল। বিদেশের মাটিতে সফলতা পেতে কাজ করছেন মিরাজ, 'বিদেশের মাটিতে আমাদের স্পিনারদের জন্য চ্যালেঞ্জ থাকে, বিশেষ করে আমার জন্য বেশি থাকে। ওখানে সফল হতে হলে লাইন-লেংথে জোর দিতে হয় এবং ভালো জায়গায় টানা বল করতে হয়, উইকেট থেকে সাহায্য পাওয়া যায় না।'
'যতটুকু সম্ভব অনুশীলন করে ঘাটতির জায়গা নিয়ে কাজ করছি। ওখানে কীভাবে কী করলে ভালো হয়, কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সাথেও কথা বলেছি। উনি আমাদের বিশেষ টিপস দিয়েছেন, কীভাবে করলে ভালো হবে। আমাদের নিয়ে কাজও করেছেন। আশা করি সামনের দিনগুলোতে তার সাথে কাজ করতে পারব। ভালো ভালো কৌশল দিতে পারবেন যে, কীভাবে করলে ভালো হয়।' যোগ করেন মিরাজ।
নিয়ন্ত্রণ হারানোর ব্যাপারটি কেবল মিরাজের বেলাতেই ঘটেনি। অনেকেই চেনা ছন্দে ফিরতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানালেন তিনি। তরুণ এই ক্রিকেটার বলেন, 'অনেকদিন পর সবাইকে বোলিং করেছি। সব ব্যাটসম্যানকেই মোটামুটি বল করেছি। আমার নিজের কাছে অস্বস্তি লেগেছে, ভালো বোলিং হয়নি। সবাই দ্রুত নিজের জায়গায় ফিরে আসতে চেষ্টা করছে। আশা করি সব ব্যাটসম্যান, বোলাররা খুব দ্রুত নিজের জায়গায় ফিরে আসবে।'