করোনায় ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা বলে দেবে গুগল সার্চ
আধুনিক মানুষের প্রযুক্তি নির্ভরতা অপরিসীম। চলমান মহামারিরতে স্বাস্থ্যজনিত পরামর্শেও তথ্য প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছেন মানুষ। আর নানাবিধ প্রশ্নের জন্য গুগল সার্চ তো আগে থেকেই আছে। সার্চ ইঞ্জিনটি সংক্রমণের উষ্ণস্থল শনাক্তে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। এমনটাই অন্তত জানিয়েছেন- ম্যাসাচুসেটস জেনারেস হাসপাতালের গবেষকরা।
তারা বলছেন, কোনো এলাকার মানুষ যখন পাকস্থলী ও অন্ত্রনালীর সমস্যা নিয়ে বেশি বেশি গুগল সার্চ করেন, ঠিক তার কয়েক সপ্তাহ পরই- ওইসব এলাকায় কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়তে দেখা গেছে। ফলে এখন থেকে কোনো এলাকায় বসবাসকারীরা আন্ত্রিক সমস্যা নিয়ে গুগল সার্চ দিলে, আগেভাগে ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে পারবেন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। গবেষকরা নতুন ধরনের এই সতর্ক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শও দেন।
বোস্টনের শীর্ষ হাসপাতালটির বিজ্ঞানী দলটি- করোনাভাইরাস সংক্রমনের বেশকিছু উপসর্গের ভিত্তিতে এটি বের করেছেন। কোনো এলাকার মানুষ; জিহ্বায় স্বাদ হারিয়ে ফেলার অনুভূতি, খাওয়ার রুচি হারিয়ে ফেলা, ডায়রিয়া এবং কোভিড-১৯ এর কারণে প্রমাণিত অন্যান্য আন্ত্রিক সমস্যা নিয়ে গুগল সার্চ দিচ্ছেন কিনা-সেটাই লক্ষ্য করেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর শীর্ষ সংক্রমিতের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ১৫টি অঙ্গরাজ্যের অধিবাসীদের অনলাইন জিজ্ঞাসা, অনুসন্ধানের আওতায় আনা হয়।
এরপর অ্যালফাবেট ইঙ্কের তৈরি গুগল ট্রেন্ডস অনলাইন টুলের সাহায্যে অন্ত্রনালীর সমস্যা নিয়ে করা হাজার হাজার ব্যক্তির সার্চ প্রত্যক্ষ করেন তারা। নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, ম্যাসাচুসেটস এবং ইলিনয়ের মতো রাজ্যের নাগরিকদের এমন সমস্যা নিয়ে ব্যাপক আকারে সার্চ দিতে দেখা গেছে গুগলে। এসব সার্চের ঠিক তিন থেকে চার সপ্তাহ পরই- এসব অঙ্গরাজ্যে করোনার সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল।
বিজ্ঞানী দলের নিবন্ধটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, জার্নাল ক্লিনিক্যাল গ্যাসটেরোনলজি অ্যান্ড হেপাটোলজি-সাময়িকীতে। সেখানে বলা হচ্ছে, এক দশক আগে ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারির সময়েও এ পদ্ধতিটি কার্যকর হয়েছিল, নতুন করোনাভাইরাস মোকাবিলাতেও গুগল সার্চের এলাকাভিত্তিক প্রবণতা জানার এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত তলপেট ব্যাথা, ডায়রিয়া এবং অন্য বেশকিছু সমস্যায় ভুগে থাকেন। এনিয়ে তারা কতবার গুগলের শরণাপন্ন হয়েছেন- তা জানতেই সার্চ ট্রেন্ড নিয়ে গবেষণা করার লক্ষ্য নেওয়া হয়।
কিন্তু, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এটি আগেভাগে করোনার সংক্রমণ ইতোমধ্যেই ছড়িয়েছে- এমন এলাকা চিহ্নিত করতেও সাহায্য করতে পারে। সংক্রমণ নিরোধ এবং অগ্রিম সতর্কতা অবলম্বনে এটি সম্ভাবনার নতুন দিক উন্মোচন করবে, বলে আশা প্রকাশ করেন গবেষকরা।
''কোভিড-১৯ সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করার আগেই- তা শনাক্তে যে অন্ত্রনালীর সমস্যাজনিত উপসর্গ একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। গুগল ট্রেন্ড ব্যবহার করে বিষয়টি আমরা দেখতে পেরেছি। গবেষণায় এসব নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। আমরা বলেছি, মহামারি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রসহ সাড়া বিশ্বে এটি অত্যন্ত ফলদায়ক একটি মাধ্যম হয়ে ওঠার সম্ভাবনা যোগ করেছে'' বলছিলেন ম্যাসাচুসেটস হাসপাতালের গ্যাসট্রোইনটেস্টিনাল মোটিলিটি বিভাগের গবেষক কাইল স্টেলার।
এছাড়াও, সংক্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করতে মার্কিন বিজ্ঞানীরা এখন নর্দমা ও সুয়ারেজ ব্যবস্থার নোংরা পানিতে কোভিড-১৯ ভাইরাস শনাক্তের পদ্ধতিটিও ব্যবহার করছেন।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ