পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর ভুহলেদারের দখল নিল রাশিয়া
কয়েক মাসের প্রতিরোধের অবসান ঘটিয়ে পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর ভুহলেদারের দখল নিয়েছে রাশিয়া। এতে কিয়েভের জন্য চ্যালেঞ্জের মাত্রা আরও বাড়ল কারণ যুদ্ধকালীন অবস্থায় তৃতীয় শীতের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ইউক্রেন।
সিএনএন-এর যাচাই করা ভিডিওতে দেখা গেছে, রুশ সৈন্যরা বিধ্বস্ত সিটি হলের ধ্বংসাবশেষের ওপর রাশিয়ার পতাকা উড়িয়েছে। শহরের জনসংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার থেকে কমে গিয়ে এখন শতাধিকে এসে ঠেকেছে।
ভুহলেদার থেকে বুধবার (২ অক্টোবর) সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। তারা জানিয়েছে, শত্রুপক্ষের তৎপরতার জন্য শহরটি ঘিরে ফেলার মতো একটি পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম রক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মূল লক্ষ্য হলো, পূর্ব ডনবাস অঞ্চলের সম্পূর্ণ দখল নেওয়া। রাশিয়া এ বছর পূর্ব দিকে ধাপে ধাপে অগ্রসর হচ্ছে এবং এই ক্ষতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জন্য বড় ধাক্কা, যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে সাক্ষাৎ শেষে তার প্রধান দাবি পূরণ হওয়া ছাড়াই ফিরে এসেছেন।
ভুহলেদার শহরটি একটি কয়লা খনিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে [এর নাম এসেছে ইউক্রেনীয় ভাষায় 'কয়লা' শব্দ থেকে]। এটি পোকরভস্ক থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। গত কয়েক মাস ধরে এটি রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে আক্রমণের একটি মূল কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল।
পোকরভস্কের মতো পরিবহণ ও লজিস্টিক্সের কেন্দ্র না হলেও, ভুহলেদার শক্তভাবে সুরক্ষিত ছিল এবং ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণ ফ্রন্টের সংযোগস্থলে একটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ হিসেবে দেখা হচ্ছিল। রাশিয়ার যুদ্ধবিষয়ক একজন বিশিষ্ট ব্লগার বরিস রোজিন এই জয়কে "অপারেশনাল-স্ট্র্যাটেজিক না হলেও অপারেশনাল" বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, "এই 'ব্যালকনি' [ভুহলেদারের উঁচু স্থানের উল্লেখ করেছেন তিনি] ছিল জাপোরিজিয়া এবং দোনেৎস্ক ফ্রন্টের সংযোগস্থলে, যা মারিউপোলে যাওয়ার পথে থাকা রুশ সৈন্যদের জন্য একটি স্থায়ী হুমকি তৈরি করেছিল।" মারিউপোল শহরটি ২০২২ সাল থেকে রাশিয়ার দখলে রয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে রুশ বাহিনীর কাছে পতন ঘটা আরেকটি কৌশলগত শহর আভদিভকার মতো ভুহলেদারও কৌশলগত দক্ষতার পরিবর্তে প্রচণ্ড শক্তির ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে।
ইউক্রেন দুই বছর ধরে শক্ত প্রতিরক্ষা বজায় রাখায় রাশিয়া বারবার ভুহলেদারের দখল নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভুহলেদারে রাশিয়ার ব্যর্থ হামলা নিয়ে প্রো-ক্রেমলিন সামরিক ব্লগারদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, কারণ শতশত রুশ সৈন্য ইউক্রেনীয় গোলাবারুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল। এখন, ভুহলেদারের পতন ইউক্রেনের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়ার ভুহলেদারকে ঘিরে ফেলার সক্ষমতা তাদের বড় জনশক্তির সুবিধা তুলে ধরে, যদিও এটি ইউক্রেনের সামরিক আইন কার্যকর হওয়ার চার মাস পর ঘটেছে।
ইউক্রেনীয় সৈন্য ও ব্লগার স্টানিস্লাভ বুনিয়াতভ পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করে বলেন, সৈন্যরা রুশ ড্রোনের গুলিতে চাপের মধ্যে পড়ে ছোট দলে সরে আসে, যা আহতদের ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।
এই ক্ষতি কিয়েভের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের পর ঘটছে, যা অন্যান্য ফ্রন্টে চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের পরেই শহরটির দখল নিল রুশ বাহিনী। সফরে জেলেনস্কি নতুন সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেলেও, ন্যাটো-শৈলীর নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বা রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি পাননি।
জেলেনস্কি সম্প্রতি বলেছিলেন, "আমরা যতটা ভাবছি, তার থেকেও আমরা শান্তির আরো কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।" তবে ভুহলেদারের ক্ষতি ইউক্রেনকে রাশিয়ার পশ্চিমে আরও অগ্রসর হওয়া প্রতিরোধে কঠোরভাবে লড়াই করতে বাধ্য করছে, যা হারানো অঞ্চল পুনর্দখলের প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলছে।
এর পাশাপাশি, ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর রুশ আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা সতর্ক করেছে, ইউক্রেনের জন্য এই শীতকাল হবে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সময়।