একনেকে ২৪ হাজার ৪১৩ কোটি টাকায় ৪ প্রকল্প অনুমোদন
২৪ হাজার ৪১২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৭ হাজার ৭৪৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ১৬ হাজার ১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৬৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব তথ্য জানান।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে একনেকের এই সভা হয়। আর সংবাদ সম্মেলন হয়, শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরিস্থিতিতে অনেক শিল্প ও ব্যাংক মালিকরা নিরুদ্দেশ। ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ হচ্ছে না। আবার রাজনৈতিক সরকারের সময়ে নেওয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যাছাই-বাছাইয়ে সরকারি বিনিয়োগও শ্লথগতিতে এগুচ্ছে। এতে আমাদের অর্থনীতিতে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ ভালো হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এর প্রভাবে গ্রামের মানুষও বলেছে, তাদের ব্যবসা ভালো হচ্ছে না। এর পরোক্ষ কারণ হলো– সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ হচ্ছে না।
সভায় কোরিয়ার অর্থায়নে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল-কাম- সড়ক সেতু নির্মাণ এবং দেশের উপজেলা পর্যায়ে অবকোঠামো উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের ঋণে ৫ হাজার ৯০১ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রধান উপেদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়নে প্রকল্প ব্যয় ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকায় উন্নীত করার একটি প্রস্তাবও অনুমোদন হয়েছে। এলেঙ্গাে- হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়নের সংশোধিত প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সভায়। সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পের ব্যয় ৩৭৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আমরা যে প্রকলল্পগুলো অনুমোদন দিচ্ছি, তার একটা প্রেক্ষাপট আছে। একদিকে বেসরকারিভাবে খুব বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে না। অনেক শিল্পের এবং ব্যাংকের মালিক নিরুদ্দেশ। শিল্পগুলোকে সচল করা এবং বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণ বিতরণ শ্লথগতিতে হচ্ছে। বেসরকারি খাত অর্থনীতির একটা চালিকাশক্তি। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ যদি বাধাগ্রন্ত হয়… এত বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে এটা হওয়াটা স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, সরকারি খাতের বিনিয়োগটা উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে দিয়ে যায়। সরকারি বিনিয়োগের এসব চলমান ও প্রস্তাবিত সব প্রকল্পই যাচাই-বাছাই করে দেখতে হচ্ছে। অনেক প্রকল্প আছে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া। অনেক প্রকল্প ঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। বা যভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা সঠিক ছিল না। যেমন যেদিক দিয়ে রাস্তা তৈরি করলে ভালো, সেদিকে না গিয়ে প্রভাবশালীরদের সুবিধার্থে রাস্তা গেছে। এসব প্রকল্প এখন যাছাই-বাছাই করতে হচ্ছে। ফলে চলমান প্রকল্পগুলো সংশোধন করতে হচ্ছে। সংশোধন করতে গিয়ে সময়ের প্রয়োজন হচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বা রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্প, সেগুলো যতদূর হয়েছে, তা যদি সম্পন্ন হয়ে থাকে – তাহলে আর অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, গ্রামীণ অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির বলা যাবে কি না— তা জানি না, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হলে — গ্রামীণ অর্থনীতি আরেকটু সচল হওয়ার দরকার।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আরেকটি বিষয়ে হলো– দুর্নীতিরও একটা অর্থনীতি আছে। আমি যদি বাসে করো লোক আনি সমাবেশের জন্য। তাতেও অর্থনীতিতে অর্থ প্রবাহ হয়। পৃষ্টপোষকতার রাজনীতি, দরপত্র কেন্দ্রীক রাজনীতিতে টাকার লেনদেন হয়। এগুলো কমেছে নিশ্চয়। যদিও চাঁদাবাজি কমেনি। তবে অপরাজনীতির অপচয়গুলো অনেক কমেছে। চলতি অর্থনীতিতে অর্থ প্রবাহ কমেছে। এটা কমে যাওয়ার কারণে অর্থনীতিতে অসুবিধা হচ্ছে। তবে আমি বলছি না– এগুলো আবার চালু করা হোক।
আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল করতে এখন দ্রুত কিছু প্রকল্প আনতে হবে। সংশোধের জন্য যেগুলো আছে, সেগুলো পরিমার্জন করে দ্রুত অনুমোদন দিতে হবে।